টাঙ্গাইলের বাসাইলে নির্মানের দুই মাসের মধ্যেই ধ্বসে পড়ছে রাস্তা

দূর্নীতিরও নাকি  একটি সীমা পরিসীমা আছে। পাপে পরিপূর্ন হয়ে গেলে মানুষ সেই সীমা অতিক্রম করে ফেলে। ফাঁকি দিতে দিতে এতটাই শেষ সীমায় পৌঁছায় যে বিষয়বস্তু তখন কথা বলা শুরু করে দেয়। মানুষের প্রতিবাদী কন্ঠ যেখানে স্তব্ধ বস্তু তখন কথা বলা শুরু করে দেয়।

টাঙ্গাইলের বাসাইলে  নির্মানের দুই মাসের মধ্যেই ধ্বসে পড়ছে রাস্তা

স্থানীয়দের কথা তোয়াক্কা না করেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শেষ করে। পাকাকরণের দুই মাসেই সড়কের দুইপাশের বিভিন্ন স্থানে ধসে গেছে। দিন যাচ্ছে আর ক্রমেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের তীব্রতা দৃশ্যমান হচ্ছে।

টাঙ্গাইল সংবাদদাতাঃ

দূর্নীতিরও নাকি  একটি সীমা পরিসীমা আছে। পাপে পরিপূর্ন হয়ে গেলে মানুষ সেই সীমা অতিক্রম করে ফেলে। ফাঁকি দিতে দিতে এতটাই শেষ সীমায় পৌঁছায় যে বিষয়বস্তু তখন কথা বলা শুরু করে দেয়। মানুষের প্রতিবাদী কন্ঠ যেখানে স্তব্ধ বস্তু তখন কথা বলা শুরু করে দেয়। সম্প্রতি  টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়ক নির্মাণ করা হয়। মাত্র দুই মাসও হয়নি। এরই মধ্যে রাস্তার গুরুত্বপুর্ণ  অংশগুলি বিভিন্ন স্থানে ধসে পড়তে শুরু করেছে।। উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের হালুয়াপাড়া-কর্মকারপাড়া সড়কের এমন দশার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও লোভকে দায়ী করছে এলাকাবাসী।

The road is collapsing within two months of construction at Basail in Tangail

দুর্ঘটনা এড়াতে ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয়রা। অল্প দিনেই ধসে যাওয়ায় উপজেলাবাসীর আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। এদিকে সড়ক ধসে যাওয়ার ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিলও আটকে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে ‍শুধু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দিকে আঙ্গুল তুলেই কি ঘটনার ইতি টানা হবে??

স্থানীয় সাংবাদিকদের আলোচনা ও গণমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদের সুত্র ধরে টিম ক্রাইম ডায়রির একটি স্থানীয় প্রতিনিধি দল সরেজমিনে পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট এলাকা। সেখানে দেখা গেছে বেহাল অবস্থা। রাস্তার সাইড পরিপূর্ন মেরামত না করেই রাস্তা নির্মান করায় বৃষ্টিতে ধ্বসে পড়ছে রাস্তা। আর উপযুক্ত ম্যাটেরিয়ালস ব্যবহার না করায় চল্টা ধরে উঠে আসছে পিচ ঢালাই।

বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে উপজেলার কাঞ্চনপুর হালুয়াপাড়া সেতু এলাকা থেকে কর্মকারপাড়া সেতু পর্যন্ত সড়কটির মাটি ভরাটসহ পাকাকরণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ৯৫০ মিটারের এই সড়ক নির্মাণের কাজ পায় মেসার্স নাইস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ায় কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা করতে ব্যর্থ হয়। পরে ২০২১ সালের জুন মাসে প্রতিষ্ঠান তড়িঘড়ি করে কাজটি শেষ করে। ওই সময় সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার অভিযোগ তুলে কয়েক দফা কাজ বন্ধ করে দেন স্থানীয়রা।

পরে জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে স্থানীয়দের সঙ্গে সমঝোতা করে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয়দের কথা তোয়াক্কা না করেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শেষ করে। পাকাকরণের দুই মাসেই সড়কের দুইপাশের বিভিন্ন স্থানে ধসে গেছে। দিন যাচ্ছে আর ক্রমেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের তীব্রতা দৃশ্যমান হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এ সড়কটি নির্মাণে ঠিকাদার খরচ কমাতে মাটির পরিবর্তে ট্যাফে ট্রাক্টরের মাধ্যমে বালি ব্যবহার করেছেন। রাস্তার সোল্ডারের জন্য তিন ফিট মাটি ধরা থাকলেও এক ফিট সোল্ডারও করা হয়নি। সাফবেইস, ম্যাকাডামেও নিম্নমানের কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সড়কে বালু ভরাটের সঙ্গে সঙ্গেই পাকাকরণের কাজ চালিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। রোলার দিয়েও পেটানো হয়নি সড়কটি।

 

স্থানীয় বাসিন্দা হাজী আব্দুর রহমান বলেন, একদিক দিয়ে বালু ফেলেছে আরেক দিক দিয়ে পাকাকরণের কাজ করেছে। সাইটে মাটি না ফেলেই তারা পাকাকরণের কাজ শেষ করেছে। আগলা মাটির মধ্যে পাকা করায় সড়ক ভেঙে যাচ্ছে। ওই সময় প্রকৌশলী এসে কাজ বন্ধ করেছিল। পরে আবার কাজ চালু করে। আমরা বাধা দিয়েছিলাম কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোক কোনো কথা শুনেনি। এখন সড়ক বাঁশ দিয়ে ঠেক দিয়ে রেখেছে। পুরো সড়কটির দুপাশেই ভেঙে গেছে। উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কার্যালয়ের প্রকৌশলী মো. আব্দুল জলিল বলেন, ৯৫০ মিটার সড়কে মাটি ভরাট ও পাকাকরণের কাজ পায় মেসার্স নাইস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সড়কধসে পড়ার বিষয়টি জানতে পেরে আমরা সড়কটি পরিদর্শন করেছি। আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ২২ লাখ টাকার বিল আটকে দিয়েছি। 

কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ খান বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের সাইটে মাটিগুলো সঠিকভাবে দেয়নি। এ ছাড়া কনফেকশনও ভালোভাবে করেনি; রোলারও মারেনি। একদিকে মাটি ফেলেছে আরেক দিক দিয়ে পাকা করেছে। বালু মাটি হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই ধসে গেছে।

এ বিষয়ে মেসার্স নাইস এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার নাইস মিয়া গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে বলেন,  নির্মাণে কোনো প্রকার অনিয়ম করা হয়নি। কাজটি সঠিকভাবেই  শেষ করা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। বালু মাটির ওপর কার্পেটিং করায় বৃষ্টির কারণে ধসে পড়েছে। কাজের পর এক বছর পর্যন্ত সড়কে কোনো ক্ষতি হলে আমরা আবার ঠিক করে দিই। এই সড়কটিও বর্ষার শেষে আমরা ঠিক করে দেব।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বর্ষার মৌসুম শেষ হলে প্রতিষ্ঠানটি  নতুন করে মাটি ফেলে আবার  কাজটি করে দেবে। কাজটি সন্তোষজনক প্রমানিত  হলে পরে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করা হবে।

ক্রাইম ডায়রি// জেলা