পুলিশ হত্যা মামলার আসামির দুবাইয়ে জুয়েলারী দোকানের উদ্বোধন: দাওয়াতে বাংলাদেশী তারকারা

পরবর্তীতে কেচো খুড়তে সাপ বেড়িয়ে আসার মতো ঘটনা বেরিয়ে আসে।  জানা যায়, জুয়েলারি দোকানটির মালিক হত্যা মামলার পলাতক আসামি।

পুলিশ হত্যা মামলার আসামির দুবাইয়ে জুয়েলারী দোকানের উদ্বোধন: দাওয়াতে বাংলাদেশী তারকারা
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

অনলাইন ডেস্ক:

পুলিশ হত্যা মামলার আসামি দুবাইয়ে জুয়েলারী ব্যবসা করছেন বুক ফুলিয়ে। একদিনের ঘটনা নয়। তিনি সময় নিয়ে সেখানে ষ্ট্যাবলিশড হয়েছেন। আর তার সেই জুয়েলারী ব্যবসা উদ্বোধনের জন্য  নিমন্ত্রণে দুবাইয়ে গিয়েছেন সাকিবসহ তারকারা!

সম্প্রতি দুবাইয়ে আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধনের সংবাদ প্রচার হয় ফেসবুকে। বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ফেসবুকে একটি ভিডিওতে জুয়েলার্সটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে থাকার কথা জানিয়েছেন। বাংলাদেশের শোবিজ জগতের বেশ কয়েকজন তারকার এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল।
পরবর্তীতে কেচো খুড়তে সাপ বেড়িয়ে আসার মতো ঘটনা বেরিয়ে আসে।  জানা যায়, জুয়েলারি দোকানটির মালিক হত্যা মামলার পলাতক আসামি।

গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (খিলগাঁও জোন) মো. শাহিদুর রহমান গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, জুয়েলার্সের মালিক আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি। এদিকে অনুষ্ঠানটি নিয়ে বিতর্ক শুরুর পর দুবাইয়ের স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত সাকিবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে  জানার জন্য সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে গণমাধ্যম কর্মীরা। তবে তার  কোনোবক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, রাজধানীর বনানীর একটি ফ্ল্যাটে  ২০১৮ সালের ৭ জুলাই  মাসে খুন হন পুলিশ পরিদর্শক মামুন। হত্যাকাণ্ডের পর  ঘাতক রবিউল ভারতে পালিয়ে যান। রবিউল তার নামে একজনকে আত্মসমর্পণ করার জন্য ভাড়া করেছিলেন। ভাড়া করা ওই ব্যক্তি আত্মসমর্পণের পর ৯ মাস কারাগারে ছিলেন। এই মামলায় ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল রবিউলসহ ৯ জনেরবিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ । পলাতক রবিউল গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার আশুটিয়া গ্রামের মতিউর রহমানমোল্লার ছেলে। তিনি আপন, সোহাগ ও হৃদয় নামেও পরিচিত।

ডিবি সূত্র আরও জানায়, ২০২০ সালে রবিউল ভারতের পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। তার ভারতীয় পাসপোর্ট নং ইউ ৪৯৮৫৩৮৯।ওই বছরের ২৮ জুলাই কলকাতা থেকে ইস্যু করা পাসপোর্টে রবিউলের নাম আরাভ খান হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

তার বাবার নাম জাকির খান এবং মা রেহানা বিবি খান বলে উল্লেখ করা হয়। পাসপোর্টে তার স্ত্রীর নাম লেখা হয়েছে সাজিমা নাসরিন। পাসপোর্টে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরাভের জন্ম ১৯৯৩ সালের ৩১ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রপুরে। পাসপোর্টের মেয়াদ ২০৩০সালের ২৭ জুলাই শেষ হবে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, আরাভ এখন দুবাইয়ে থাকেন। আরব আমিরাত সরকার ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর তাকে রেসিডেন্ট পারমিট দেয়। আগামী বছরের ৩০ অক্টোবর এই পারমিটের মেয়াদ শেষ হবে।

ফিরে দেখা সেই হত্যা কান্ডঃ

পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৮ সালের ৭ জুলাই রহমতুল্লাহ নামের একজনের আমন্ত্রণ পেয়ে বনানীর একটি বাড়িতে জস্মদিনের অনুষ্ঠানে যান পুলিশ পরিদর্শক মামুন। মামুন আসলে ফাঁদে পড়েছিলেন। তাকে ফ্ল্যাটের নিয়ে বেঁধে, স্কচটেপ দিয়ে মুখ আটকে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে মামুন মারা যান। হত্যা মামলার আসামিরা হলেন- রহমত উল্লাহ, রবিউল ইসলাম, তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া, স্বপন সরকার, দিদার পাঠান, মিজান শেখ, আতিক হাসান, সারোয়ার হোসেন, মেহেরুন্নিসা ওরফে স্বর্ণা ও ফারিয়া বিনতে মাইসা।

ডিবি সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর রবিউলের পরিচয় ও ঠিকানা ব্যবহার করে মো. আবু ইউসুফ ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার একটি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং হত্যা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরিবারকে প্রতি মাসে টাকা দেওয়ার বিনিময়ে ইউসুফ এতে রাজি হয়। একপর্যায়ে রবিউল ইউসুফের পরিবারকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন। পরে আইনজীবীর মাধ্যমে ইউসুফ আদালতে আবেদন করেন যে তিনি আসলে আবু ইউসুফ, হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিরবিউল নন।

আইনজীবী আদালতকে জানান, তার মক্কেল ইউসুফ সম্ভবত অর্থের প্রলোভনে বা হুমকি পেয়ে এমন অপরাধ করেছেন। এরপর আদালত ডিবিকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের দায়িত্ব দেন। তদন্তে ডিবি জানতে পারে, ইউসুফ চাঁদপুরের কচুয়া থানার আইনপুরের বাসিন্দা এবং তার বাবার নাম মো. নুরুজ্জামান ও মায়ের নাম হালিমা বেগম।

ক্রাইম ডায়রি/ ক্রাইম