শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও হত্যা মামলা দায়ের
তার বিরুদ্ধে গত ৩ দিনে পাঁচটি মামলা দায়ের হলো।
শিশু জোবাইদ হোসেন ইমনকে (১২) র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা এবং শেরেবাংলা নগরে অটোরিকশাচালক সাহাবুদ্দিন পুলিশের গুলিতে খুন হওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে দুটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।
ক্রাইম ডায়রি ডেস্কঃ
সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে বৃহস্পতিবার। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে গত ৩ দিনে পাঁচটি মামলা দায়ের হলো। এর মধ্যে চারটি হত্যা ও একটি গুমের মামলা রয়েছে।
একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মাদ্রাসাছাত্র শিশু জোবাইদ হোসেন ইমনকে (১২) র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা এবং শেরেবাংলা নগরে অটোরিকশাচালক সাহাবুদ্দিন পুলিশের গুলিতে খুন হওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে দুটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের পৃথক দুটি আদালতে নিহত দুজনের পরিবার বাদী হয়ে এ মামলা দুটি করে। আদালত বাদীপক্ষের জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলা দুটি এজাহার হিসাবে গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দেন।
বৃহস্পতিবার যে দুটি হত্যা মামলা হয়েছে, এর একটি হচ্ছে-১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মাদ্রাসাছাত্র শিশু জোবাইদ হোসেন ইমনকে (১২) র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা ঘটনায় মামলা। সেখানে শেখ হাসিনা ছাড়াও আরও ১৫ জনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন-সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ-সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত আইজিপি ও র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ মহিদ উদ্দিন, ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার এবং হেলিকপ্টার টহল টিমের অজ্ঞাতনামা সদস্যরা।
শিশু জোবাইদ হোসেন ইমন হত্যার মামলার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া উল্লিখিত ১৫ জনের নামে মামলা করেছেন নিহত ইমনের মামা আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ ভূঁইয়া। ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরীর আদালতে এ মামলা করেন তিনি। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মোহাম্মদপুর থানাকে এজাহার হিসাবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ১৯ জুলাই আসামিদের নির্দেশে র্যাব সদস্যরা হেলিকপ্টার থেকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এ সময় ভিকটিম জোবাইদ হোসেন ইমনের বাম কানের উপর দিয়ে গুলি প্রবেশ করে ডান কানের নিচ দিয়ে চোয়াল ভেদ করে বেরিয়ে যায়। গুলির আঘাতে ঘটনাস্থলেই ভুক্তভোগী জোবাইদ হোসেন ইমন মাটিতে পড়ে গেলে স্থানীয় লোকজন, মামলার বাদী ও অন্য সাক্ষীরা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, আসামিরা শেখ হাসিনার অবৈধ স্বৈরশাসনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে নির্মূল ও হত্যার পরিকল্পনা করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্য আসামিরা তাদের অধস্তন পুলিশ, বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) এবং র্যাবসহ অন্য বাহিনীকে দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য ছাত্র, শিশু, সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষকে হত্যা ও আহত করে। এছাড়া বিভিন্ন উঁচু ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়ে আসামিদের অনুগত বাহিনীর সদস্যরা স্নাইপার রাইফেলের মাধ্যমে দূর থেকে গুলি করে অনেক ছাত্র এবং সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। এছাড়া আসামিদের নির্দেশে হত্যাকারী বাহিনীগুলো হাসপাতালগুলোতে ঢুকে নিহতদের অনেকের মরদেহ জোরপূর্বক নিয়ে গুম করে। ফলে নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। অনেক মরদেহ পুলিশ জোরপূর্বক নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই অজ্ঞাত পরিচয় হিসাবে বিভিন্ন কবরস্থানে গোপনে দাফন করে হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ বিনষ্ট করার চেষ্টা করে। একইভাবে তারা আমার ভাগনে জোবাইদ হোসেন ইমনের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করতে বাধ্য করে।
এছাড়া বৃহস্পতিবার অটোরিকশাচালক হত্যায় শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের নামে আরও একটি মামলা করা হয়। ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অটোরিকশাচালক সাহাবুদ্দিনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঢাকার মহানগর হাকিম ফারাহ দিবা ছন্দার আদালতে এ মামলার আবেদন করেন নিহতের পিতা আবুল কালাম। আদালত মামলাটি এজাহার হিসাবে গ্রহণ করার জন্য শেরেবাংলা নগর থানাকে নির্দেশ দেন। অন্য আসামিরা হলেন-সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। এছাড়াও মামলায় অজ্ঞাতনামা পুলিশ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
এই মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরকার পতনের একদফা চলাকালে ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় পরিবারের জন্য খাবার কিনতে বের হন সাহাবুদ্দিন। এ সময় শেরেবাংলা নগর থানার সামনে পৌঁছালে হঠাৎ তার মাথায় পুলিশের ছোড়া গুলি এসে লাগে। এ সময় কিছু ব্যক্তি তাকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. লিটন মিয়া যুগান্তরকে বলেন, ৫ আগস্ট শেরেবাংলা নগর থানার সামনে ভুক্তভোগী সাহাবুদ্দিন মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। উক্ত ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে থানা মামলা না নেওয়ায় ফারাহ দিবা ছন্দার আদালতে ভুক্তভোগী সাহাবুদ্দিনের বাবা একটি সিআর মামলা করেন। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে শেরেবাংলা নগর থানাকে নিয়মিত মামলা নিতে নির্দেশ দেন।
বুধবার ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের নিহত শিক্ষার্থী ফয়জুল ইসলাম রাজন হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ২৪ জনের নামে মামলা করা হয়। এদিন শেখ হাসিনাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গুম করে নির্যাতনের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা। এর আগে মঙ্গলবার মুদি দোকানদার আবু সায়েদকে (৪৫) হত্যার অভিযোগ এনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সাতজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করা হয়। এটিই ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া প্রথম মামলা। এরপর হতে মামলা ফাইল করা শুরু হয়েছে।
ক্রাইম ডায়রি/// ক্রাইম