বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ধর্ষণ চেষ্টাঃ কুমিল্লার দেবিদ্বার উত্তপ্ত-গুলিবিদ্ধ ১৩ আহত ৪০

বিক্ষুব্ধ জনতা প্রধান শিক্ষককে স্কুল মাঠে এনে বিচারের দাবী জানায়। এসময় পুলিশের উপস্থিতিতে তারা বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা এবং প্রধান ফটক ভাঙচুরের চেষ্টা করে।

বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ধর্ষণ চেষ্টাঃ কুমিল্লার দেবিদ্বার উত্তপ্ত-গুলিবিদ্ধ ১৩ আহত ৪০
ছবি-ক্রাইম ডায়রি

আহত শিক্ষার্থীদের দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আহতরা সবাই ওই বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্র। ছাত্রদের উপর হামলার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠে।

সাহিদুজ্জামান চৌধুরী, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার একটি উচ্চ বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় কুমিল্লার দেবিদ্বার উত্তপ্ত হয়ে উঠেঠে। এঘটনা্য়  রিপোর্টলিটি লেখা পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ  হয়েছে ১৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৪০ জন।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও সরেজমিন সুত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির একছাত্রীকে বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে  প্রধান শিক্ষক মো. মোকতল হোসেনকে অবরুদ্ধ করে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও তার মেয়ের জামাইর আরেকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে স্খানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও সর্টগানের গুলি ছুঁড়ে।এতে ১৫ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী গুলিবিদ্ধসহ প্রায় ৩০ জন আহত হনয়। এছাড়াও ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন এমন খবর পাওয়া গেছে। মার্চ ১৫, ২০২২ইং বুধবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, বুধবার (১৫ মার্চ) সকালে অনুমান ৯টায় প্রথমে প্রধান শিক্ষক তার কক্ষে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেয় এবং দ্বিতীয় দফায় সকাল সাড়ে ১০টায় প্রতিষ্ঠানের একটি শ্রেণি কক্ষে তিনি একই কাজ করে। ঘটনার পর ছাত্রীর সহপাঠিরা তাকে নিয়ে বাড়ি গিয়ে তার বাবার কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয়। এদিকে ঘটনাটি জানাজানির পর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় ঘেরাও করে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে।

পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ অন্য সদস্য, শিক্ষক ও এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তিরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। বিক্ষুব্ধ জনতা প্রধান শিক্ষককে স্কুল মাঠে এনে বিচারের দাবী জানায়। এসময় পুলিশের উপস্থিতিতে তারা বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা এবং প্রধান ফটক ভাঙচুরের চেষ্টা করে।

প্রধান শিক্ষককে রক্ষায় তারপক্ষে বহিরাগত কিছু লোকজন এসে ছাত্রদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ হামলায় অন্তত ৮-১০জন শিক্ষার্থী আহত হয়। আহত, নাঈম খন্দকার, মো. নাঈম ও জিহাদুল ইসলাম জানায়, প্রধান শিক্ষকের ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। আহত শিক্ষার্থীদের দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আহতরা সবাই ওই বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্র। ছাত্রদের উপর হামলার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠে।

সংবাদ পেয়ে বুধবার বিকেলে দেবিদ্বার সার্কেল এএসপি আমিরুল্লাহ ও দেবিদ্বার থানার ওসি কমল কৃষ্ণ ধরের নেতুত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়।

এসময় পুলিশও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং রাতে স্কুল ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও সর্টগানের গুলি ছুড়লে এতে অন্তত: ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ গুরুতর আহত ৮ জনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থান্তরিত করা হয়। অপরদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা ককটেল বোমা বিস্ফোরণে এলাকা আতঙ্কতি করে তোলে এবং বিদ্যালয়ের দরজা জানালা ভাঙচুর করে।

রাত পৌনে ৯টায় কুমিল্লা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী বিপুল সংখ্য আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে আনার পথে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া করে। এসময় ডিবিসহ ৩ পুলিশকে আটক করে মারধর করে এবং এক পুলিশ সদস্যকে আটক করে রাখেল রাত সাড়ে ৯টায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ তাকে উদ্ধারে এলাকায় অভিযান চালায়।

 রাত ১০ পর্যন্ত এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।এদিকে রাতে পুলিশের রাবার বুলেট ও সর্টগানের গুলিতে আরও অন্তত ১৫-২০ জন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহতরা হলেন, সিয়াম (১৫), মিনহাজ (১৭), অলি (১৬), আকাশ (১৬) আরিফুল ইসলাম (২৬), সাব্বির (১৮) ও হৃদয় (১৭)। এদের প্রত্যেকেকে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য বমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও পুলিশ সদস্য জহিরুল ইসলাম ও সারোয়ারসহ ৫ পুলিশ আহত হয়েছে বলে জানা যায়।

দেবিদ্বার থানার ওসি, দেবিদ্বার সার্কেল এএসপি আমিরুল্লাহ, কুমিল্লা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নানকে একাধিকবার ফোন করলে তাদেরকে পরিস্থিতি কারনেই  ফোনে বিজি পাওয়ায় তাদের বক্তব্য নেয়া যায়নি।  অবরুদ্ধ প্রধান শিক্ষক দেবিদ্বার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছেন বলে জানা গেছে।

ক্রাইম ডায়রি/ জেলা