চিত্রনায়িকা সুচন্দা,ববিতা ও চম্পা: বাংলা সিনেমার তিন বোন

চিত্রনায়িকা সুচন্দা,ববিতা ও চম্পা: বাংলা সিনেমার তিন বোন
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

বিনোদন ডেস্ক:

একসময়ের সাড়া জাগানো ছিলেন চিত্রনায়িকা সুচন্দা,ববিতা চম্পা এখনো তাদের এক নামে চেনে সবাই বাংলা সিনেমার এই তিন বোন আলো ছড়িয়ে রেখেছিল তাদের সময়ে কয়েক দশকের অভিনয় ক্যারিয়ারে দেশ-বিদেশে অর্জন করেছেন অনেক পুরস্কার, পেয়েছেন অনেক সম্মাননাবাংলাদেশের সিনেমার গর্ব তিন বোন অভিনেত্রী সুচন্দা, ববিতা চম্পা দাপটের সঙ্গে একসময় রুপালি পর্দায় অভিনয় করেছেন তারা

কোহিনূর আক্তার সুচন্দা (১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭) যশোরে জন্ম নেয়া বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পরিচালক তিনি ১৯৬০-এর দশকে অভিনয় জীবন শুরু করেন তার ছোট বোন ববিতা চম্পা ঢালিউডের দুই অভিনেত্রী

সুচন্দার আসল নাম কোহিনুর আক্তার, ডাক নাম চাটনি ১৯৪৭ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর যশোরের সাতক্ষীরায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন তার পিতা এএসএম নিজামউদ্দীন আইয়ূব একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন পাশাপাশি সাহিত্যচর্চাও করতেন মা ডাঃ বেগম জাহান আরা ছিলেন একজন হোমিও চিকিৎসক তিন বোন তিন ভাইয়ের মধ্যে সুচন্দা সবার বড়তার ছোট বোন ববিতা চম্পা ঢালিউডের দুই অভিনেত্রী

 সুচন্দা যশোর মোমেন গার্লস স্কুলে যশোর মাইকেল মধূসূদন কলেজে পড়ালেখা করেন স্কুল কলেজের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁর অংশগ্রহণ ছিল তিনি যশোরে কিশোরী নৃত্যশিল্পী হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন পিতার চাকরি বদলীর কারণে ঢাকায় চলে আসেন এবং ঢাকা সিটি কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন যশোরে থাকাকালীন শকুন্তলা নাটকে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন

অভিনয় জীবন

সুচন্দা ১৯৬৫ সালে অভিনয় শুরু করেন প্রখ্যাত অভিনেতা কাজী খালেকের একটা প্রামাণ্যচিত্রে সুভাষ দত্ত পরিচালিত কাগজের নৌকা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ১৯৬৬ সালে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে পরবর্তীকালে, ১৯৬৭ সালে হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী নিয়ে চলচ্চিত্র বেহুলায় অভিনয় করেন এতে তিনি রাজ্জাকের বিপরীতে অভিনয় করেন তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছবি জীবন থেকে নেয়া এছাড়াও ৬০ এর দশকের শেষের দিকে গোলাম মুস্তফার বিপরীতে চাওয়া পাওয়া, আজিমের বিপরীতে নয়নতারা, রাজ্জাকের বিপরীতে সুয়োরানী দুয়োরানী এবং ৭০ এর দশকে যে আগুনে পুড়ি, কাঁচের স্বর্গ, অশ্রু দিয়ে লেখা তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র অভিনয়ের পাশপাশি তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন জহির রায়হানের জীবদ্দশায় টাকা আনা পাই প্রতিশোধ চলচ্চিত্র দুটি প্রযোজনা করেন এছাড়াও তিনকন্যা, বেহুলা লখীন্দর, বাসনা প্রেমপ্রীতি চলচ্চিত্রগুলো প্রযোজনা করেন তার পরিচালিত প্রথম সিনেমাসবুজ কোট কালো চশমা ২০০৫ সালে স্বামী জহির রায়হানেরহাজার বছর ধরেউপন্যাসের আলোকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন এবং সেরা প্রযোজক পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান২০০৮ সালে হাজার বছর ধরে চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছিলেন এছাড়া ২০১৯ সালে তাঁকে আজীবন সম্মাননা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করা হয়

ববিতা: ঢাকার চলচ্চিত্র থেকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর পর ভিনদেশে কিংবা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি, স্বীকৃতি পাওয়া তারকার সংখ্যা একেবারে তলানিতে সেই খাঁ খাঁ অধ্যায়ে একটি উজ্জ্বল নাম ফরিদা আক্তার পপি আমরা তাকে ববিতা নামে চিনলেও, তার নাম ফরিদা আক্তার পপিজন্ম: ৩০ জুলাই, ১৯৫৩ সালে বাংলাদেশের একজন সফল চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং প্রযোজক হিসেবে পরিচিতি রয়েছে তার তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ৭০- দশকের সেরা অভিনেত্রী ছিলেন তিনি ১৯৭৩ সালে ২৩তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে গোল্ডেন বীয়ার জয়ী সত্যজিৎ রায়ের অশনি সংকেত চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রশংসিত হন ববিতা ৩৫০ এর বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি ১৯৭৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তনের পর টানা তিনবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেনএছাড়া ১৯৭৬, ১৯৭৭,১৯৮৫ সালে আরেকবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী, ১৯৯৬ সালে শ্রেষ্ঠ প্রযোজক, ২০০২ ২০১১ সালে পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীগোটা ক্যারিয়ারে আড়াই শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন ববিতাতার অভিনীত কিছু উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো- ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘আবার তোরা মানুষ ’, ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘আলোর মিছিল’, ‘লাঠিয়াল’, ‘নয়নমণি’, ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’, ‘ডুমুরের ফুল’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘নতুন বউ’, ‘তিন কন্যা’, ‘দহন’, ‘জীবন সংসার’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘স্বপ্নের পৃথিবীইত্যাদি।। এছাড়া ২০১৬ সালে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়গুণী এই অভিনেত্রী বর্তমানে তিনি কানাডাতে আছেন

চম্পাঃ গুণী এই অভিনেত্রীর নাম গুলশান আরা আক্তার চম্পা তার জন্ম: জানুয়ারি ১৯৬৫ সালে

চলচ্চিত্রে আগমন

মডেলিং-এর মাধ্যমে চম্পা প্রথমে তার কর্মজীবন শুরু করেন তারপর টিভি নাটকে অভিনয় করতে থাকেন এবং জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন শিবলী সাদিক পরিচালিত তিন কন্যা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চম্পা চলচ্চিত্রের জগতে আগমন করেন এই চলচ্চিত্রে তারা তিন বোন সুচন্দা, ববিতা চম্পা একত্রে অভিনয় করেন চলচ্চিত্রে একটি গানও ছিল "তিন কন্যা এক ছবি" তিনি সত্যজিত রায়ের ছেলে সন্দ্বীপ রায়েরটার্গেটসিনেমাতে এবং বুদ্ধদেব দাশ গুপ্তেরলালদরজাসিনেমাতে অভিনয় করার সুযোগ পান গৌতম ঘোষ পরিচালিত পদ্মা নদীর মাঝি চলচ্চিত্র ছিল তার সবচেয়ে বড় মাপের কাজ ১২ বছরের ক্যারিয়ারে প্রায় ১০০-এর বেশি সিনেমাতে তিনি অভিনয় করেছিলেন বর্তমানে তিনি বড় পর্দায় অনুপস্থিত থাকলেও তাকে ইদানীং টেলিভিশনের বাংলা নাটকে কাজ করছেন

তিনি তিন কন্যা চলচ্চিত্রে তার অপর অভিনেত্রী দুই বোন ববিতা সুচন্দার সাথে অভিনয় করে পরিচিতি অর্জন করেন[] তিনি পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৯৩), অন্য জীবন (১৯৯৫) উত্তরের খেপ (২০০০) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে তিনটি এবং শাস্তি (২০০৫) চন্দ্রগ্রহণ (২০০৮) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

ক্রাইম ডায়রি/বিনোদন