অস্থির চলচ্চিত্রাঙ্গনঃ জায়েদ খান নিয়ে অচলাবস্থা যেন কাটছেই না

একটা জরিপে দেখা গেছে শতকরা নব্বইজন মানুষ জানেইনা যে জায়েদ খান নামের কোন নায়ক আছে। অথচ এই নায়ক নিয়েই শিল্পী সমিতির চরম অস্থির অবস্থা। জরিপ ছাড়াই মানুষ এখন জানে ঠিক কতজন মানুষ বাংলাদেশের নাটক বাদ দিয়ে কোন সিনেমা দেখে। কোলকাতার সিনেমা নির্ভর এখন বাংলাদেশের মানুষ। যেনতেন নায়ক-নায়িকা, যত্ন ছাড়া অভিনয় এবং স্ক্রিপ্ট, অবহেলিত এডিটিং এবং গুরুত্বহীন প্রদর্শনী সবকিছুই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বিরাজমান। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কাজ হলো এই অচলাবস্থা কাটিয়ে তোলা। দেশের মানুষ দেশীয় চলচ্চিত্রে ফিরতে চায়। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি সেই আশা পূরণ করতে পারবে???

অস্থির চলচ্চিত্রাঙ্গনঃ জায়েদ খান নিয়ে অচলাবস্থা যেন কাটছেই না

প্রকৌশলী আয়াতুস সাইফ মুনঃ

জায়েদ খান ও নিপুনের বিষয় নিয়ে চরম অস্থিরতা ও অচলাবস্থা কাটিয়ে না উঠতে পারলে ইমেজ সংকটে পড়বে এফডিসি।এমনিতেই দেশীয় চলচ্চিত্রের বেহাল দশা। চলচ্চিত্রের নায়ক নায়িকারা এখন সিনেমা বাদ দিয়ে অনেকে নাটক করছেন। তাছাড়া আসলে তাদের বুদ্ধিও নেই। এর উপর যদি তারা নিজের আভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ নিয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন তবে তা কল্যানকর হবেনা। আর যারা জিততে পারেননি  তাদের বিভিন্ন কৌশলে ক্ষমতায় থাকতে চাওয়ার কারন কি? দেশীয় চলচ্চিত্রের আকাল সময়ে তারা কি করেছেন আর কিই বা করছেন।

বৈধ এবং অবৈধ এই বেড়াজালে জায়েদ নিপুন দ্বন্দঃ

সেক্রেটারি পদে জায়েদ খানের শপথ গ্রহণ অবৈধ ঘোষণা করেছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন। পাশাপাশি গত শুক্রবারের শিল্পী সমিতির প্রথম মিটিংও বাতিল ঘোষণা করেছেন সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন। তার দাবি, জায়েদ খান আদালতের অন্য রায়ের `পুরোনো কাগজ' দেখিয়ে শপথ গ্রহণ করেছেন। সেটি রীতিমতো প্রতারণার শামিল।

 মার্চ ৭, সোমবার সন্ধ্যায় এফডিসির বাগানে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। জায়েদ খানের শপথ গ্রহণ অবৈধ ঘোষণা করেন সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত এই অভিনেতা। তিনি বলেন, `৯ ফেব্রুয়ারির অন্য রায়ের কোর্টের একটি কাগজ দেখিয়ে শপথ নেন জায়েদ খান। নতুন কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি৷ তড়িঘড়ি করে শুক্রবার শপথ নিয়েছেন। তিনি শিল্পী সমিতির সঙ্গে, সভাপতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। একই সঙ্গে মিডিয়ার সঙ্গেও ছলনা করেছেন। তার শপথ গ্রহণ আমি অবৈধ ঘোষণা করলাম।'

একটা জরিপে দেখা গেছে শতকরা নব্বইজন মানুষ জানেইনা যে জায়েদ খান নামের কোন নায়ক আছে। অথচ এই নায়ক নিয়েই শিল্পী সমিতির চরম অস্থির অবস্থা। জরিপ ছাড়াই মানুষ এখন জানে ঠিক কতজন মানুষ বাংলাদেশের নাটক বাদ দিয়ে কোন সিনেমা দেখে। কোলকাতার সিনেমা নির্ভর এখন বাংলাদেশের মানুষ। যেনতেন নায়ক-নায়িকা, যত্ন ছাড়া অভিনয় এবং স্ক্রিপ্ট, অবহেলিত এডিটিং এবং গুরুত্বহীন প্রদর্শনী সবকিছুই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বিরাজমান। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কাজ হলো এই অচলাবস্থা কাটিয়ে তোলা। দেশের মানুষ দেশীয় চলচ্চিত্রে ফিরতে চায়। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি সেই আশা পূরণ করতে পারবে???

তিনি বলেন, যেহেতু শপথ অবৈধ, তাই গত মিটিংয়ে জায়েদ খানের উপস্থিতিও অবৈধ। এ কারণে মিটিংয়ের কোরামও পূর্ণ না হওয়াতে শুক্রবারের মিটিংও বাতিল করা হলো।

এদিকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সেক্রেটারি অনুপস্থিত থাকলে তার দায়িত্ব পালন করেন সহসেক্রেটারি। যেহেতু শিল্পী সমিতিতে আপাতত সেক্রেটারি কেউ নন, তাই আপাতত সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করবেন সহসাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী নায়ক সাইমন।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, পরে মিটিং ডেকে বাকি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সাইমনের সেক্রেটারি হওয়ার বিষয়টি পাস করা হবে। যত দিন জায়েদ-নিপুণের সেক্রেটারি পদ আদালত থেকে প্রক্রিয়াধীন থাকবে, আগামী মিটিংয়ের পর থেকে তত দিন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাইমন সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করবেন।

এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জায়েদ খান। তিনি বলেন, `আমি কোনোভাবেই প্রতারণার আশ্রয় নিইনি। নিয়ম অনুযায়ী রায় পাওয়ার পরে যে কেউ তাঁর আইনজীবীর কাছ থেকে ল ইয়ার সার্টিফিকেট নিতে পারেন। আদালতের রায় হয়ে গেছে সবাই জানেন। আমি ল ইয়ার সার্টিফিকেটও জোগাড় করেছি। এটা বৈধ।'

তিনি প্রশ্ন করেন, `আমি যদি ভুয়া কাগজ জোগাড় করে শপথ নিই, তাহলে নিপুণ কি ভুয়া কাগজ দেখিয়ে আপিল করলেন? রায় হয়েছে বলেই তো সেটার প্রমাণ দেখিয়ে আপিল করেছেন তিনি।’ তিনি আরো বলেন, ‘এমনিতে আমাদের শিল্পী সমিতির জন্য শপথ জরুরি না; বরং সেদিন আমাদের সভা বৈধ। সেখানে কোরাম পূর্ণ হয়েছিল।' এদিন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খোরশেদ আলম, সাইমন সাদিক প্রমুখ।

জায়েদখানের জনপ্রিয়তা বলতে যা বুঝায়ঃ

জায়েদ খান সংক্রান্ত যে কোন নিউজ কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যে কোন পোষ্ট এর নিচে কমেন্টস বক্স দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যায় জায়েদ খানের জনপ্রিয়তা ঠিক কেমন,কত প্রকার ও কিকি?  শুধু জনগন না, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক জায়েদ খানকে বয়কট করেছে সিনেমা সংশ্লিষ্ট ১৮ সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত চলচ্চিত্র পরিবার। শনিবার (৫ মার্চ) একটি লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে ঘোষণাটি দিয়েছে এই জোট।

বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘শনিবার চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৮ সংগঠনের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি ও চলচ্চিত্র সংগঠন একত্মতা পোষণ করেন। সদ্য হয়ে যাওয়া শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে সকল সংগঠন বিস্তারিত আলোচনা করেন। উক্ত নির্বাচনে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠনের সদস্য বিএফডিসিতে প্রবেশ করতে পারেনি শুধু শিল্পী সমিতির ভোটার ছাড়া। যা ছিল চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সকলের জন্য অশোভন ও অপমানজনক।’

আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এই ঘটনায় শিল্পী সমিতির সদস্য জায়েদ খানের ভূমিকা প্রমাণিত হওয়ায় সকল সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয় যে, জায়েদ খানের সাথে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৮ সংগঠনের কোনো সদস্য কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন না। আজ থেকে জায়েদ খানকে আনুষ্ঠানিকভাবে বয়কট করা হলো।’ এই বয়কটের আওতায় জায়েদ খানের কোনো সিনেমাও প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হবে না। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত সিদ্ধান্তটি বলবত থাকবে বলেও জানিয়েছে চলচ্চিত্র পরিবার। বিবৃতিতে মূল আহ্বায়ক হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান।

এদিকে জায়েদ খানকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেছেন সুপ্রিমকোর্টের চেম্বার আদালত। মার্চ ০৬,২০২২ইং রোববার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান হাইকোর্টের রায় চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে আদেশ দেন। গত ২ মার্চ সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট। ওইদিন বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে জায়েদ খানের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি। অপর প্রার্থী নিপুণের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।

ক্রাইম ডায়রি// বিনোদন