পরিবহন খাতের মাফিয়াদের চাঁদাবাজি রুখবে কে?
পরিবহণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবৈধ চাঁদাবাজি ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কিত নয়; বিষয়টি কোনো একটি জেলা বা অঞ্চলের মধ্যেও সীমাবদ্ধ নয় এই চাঁদাবাজি চলছে দেশজুড়ে ।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স ও মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং) হায়দার আলী খান বলেন, ‘চাঁদা আদায়ের বিষয়ে আমরা কখনোই অনুমতি দেই না। যদি এরপরও কোথাও পরিবহন থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে এমন সংবাদ আসে, তাহলে আমরা তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
ক্রাইম ডায়রি ডেস্কঃ
দেশে চাঁদাবাজির সবচেয়ে বড় খাত পরিবহন সেক্টর। এই সেক্টরে প্রতিদিন শত কোটি টাকা চাঁদা আদায় হয়। সড়ক-মহাসড়কে আগে গাড়ি আটকে তোলা হতো চাঁদা। এখন পাল্টেছে ধরন। গাড়ি ছাড়ার সময়ই নির্ধারিত স্থানে অনেকটা গোপনে গুঁজে দেয়া হচ্ছে চাঁদার টাকা। তবুও মাঝ পথে থেকেই যাচ্ছে বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের বাগড়া। ইউনিয়নের পকেটে টাকা পড়লেই গাড়ি ছুটে নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের রুদ্ধদ্বার সভায় পরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি নিয়ে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের খবর প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সিটি করপোরেশন কর্তৃক ইজারা দিয়ে চাঁদা আদায়ের প্রসঙ্গ উঠলে তর্কের সূত্রপাত ঘটে। কিন্তু কেন এই অবস্থা?
কারন হলো, পরিবহণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবৈধ চাঁদাবাজির সঙ্গে কেবল বিশেষ কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জড়িত নয়; অথবা বিষয়টি কোনো একটি জেলা বা অঞ্চলের মধ্যেও সীমাবদ্ধ নয়-চাঁদাবাজির শেকড় দেশজুড়ে ।
অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ সদস্য ও পরিবহন শ্রমিকরা মিলেই গড়ে তুলেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। পরস্পরের যোগসাজশে কৌশলে সড়ক-মহাসড়কে চলছে টাকার খেলা। খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি যত্রতত্র চাঁদাবাজি বন্ধে তৎপরতা দেখালেও কার্যত বন্ধ হয়নি সড়কে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা। পথে পথে চাঁদা গুনতে হচ্ছে গাড়িচালকদের। আর এই চাঁদার টাকার ষোলআনাই তুলে নেয়া হচ্ছে যাত্রীদের পকেট থেকে। এর একটি বড় অংশ যাচ্ছে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রকদের হাতে। পরিবহন নেতারা বলছেন, মহাসড়কে কোনো চাঁদা তোলা হয় না। শুধু শ্রমিক ফেডারেশনের নির্ধারিত শ্রমিকদের জন্য কল্যাণ চাঁদা নেয়া হয়।
অন্যদিকে পুলিশ বলছে, সড়ক-মহাসড়কে পরিবহন চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে তারা। অথচ হালের বাড়তি ভাড়া ও দুর্ঘটনা বৃদ্ধিসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবহন চাঁদাবাজি। ঢাকার রাস্তায় চলতে একটি বাসকে দৈনিক গড়ে এক হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এই টাকা তুলতে বাসগুলোর বাড়তি ট্রিপ মারার প্রবণতায় পেয়ে বসে, যার ফলে ঢাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর নামেই চলছে অতিমাত্রায় চাঁদাবাজি। এর একটি বিরাট অংশ যাচ্ছে পুলিশ প্রশাসনেও। রাজধানীর চারটি আন্তঃজেলা ও অভ্যন্তরীণ রুটের টার্মিনালসহ বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারে চাঁদাবাজির যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে দেখা যায়, মাসে অন্তত প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি চাঁদা তোলা হয় বাসগুলো থেকে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয় এসব টার্মিনাল থেকে।
এই গডফাদাররা গত কয়েক বছরে নিজস্ব পরিবহন সংস্থার ব্যানারে শত শত বাস নামিয়েছেন। বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ পাচার করেছেন মালয়েশিয়া, কানাডা ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে।
এ হিসাবে সারা দেশে পরিবহন সেক্টরের অবস্থা কতটা ভয়াবহ, তা সহজেই অনুমেয়। বর্তমানে কয়েকজন গডফাদার পরিবহন মালিক সমিতিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে দাবি সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের। তাদের ভাষ্য, এই গডফাদাররা গত কয়েক বছরে নিজস্ব পরিবহন সংস্থার ব্যানারে শত শত বাস নামিয়েছেন। বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ পাচার করেছেন মালয়েশিয়া, কানাডা ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে।
অনুসন্ধান বলছে, রাজধানীর সায়েদাবাদ, মহাখালী, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, মিরপুর, আজিমপুর, মতিঝিল-কমলাপুর ও গাবতলী বাস টার্মিনাল এবং ভাসমান মিলে ১৫ হাজারের বেশি গাড়ি রয়েছে। এসব গাড়ি রাস্তায় নামলে দৈনিক ভিত্তিতে চাঁদা দিতে হয়। বিশেষ করে মালিক সমিতির নামে বাস প্রতি ৩৬০ থেকে ৯৬০ টাকা (বাসের কোম্পানিভেদে), কমন ফান্ড বাবদ ২০০ টাকা ও ঢাকা সড়ক নামে ৮০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। তাছাড়া ভাঙচুর ভর্তুকি, অফিস ক্রয়, কমিউনিটি পুলিশ, সিটি টোলের জন্য পৃথকভাবে ২০ টাকা করে মোট ১০০ টাকা এবং সুপারভাইজারের নামে ৬০ টাকা চাঁদা তোলা হয়। সড়কে চাঁদার এমন জাল রাজধানীজুড়েই ।
চাঁদাবাজিতে অস্থির সাধারণ বাসমালিকরা বলছেন, যা ইনকাম হচ্ছে, তার সবই পথে পথে চাঁদা দিয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই সামপ্রতিককালে পরিবহন ব্যবসায় ভদ্র, সৎ ব্যবসায়ীদের আর আগমনও ঘটছে না। এ খাতটি মাফিয়া-দলবাজ-সন্ত্রাসীদের দখলে চলে গেছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি হানিফ খোকন । তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বাস-মিনিবাস, সিএনজি-অটোরিকশা, ট্রাক, হিউম্যান হলারসহ বিভিন্ন শ্রেণি মিলিয়ে দেশজুড়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত ২৫০ বেসিক ইউনিয়ন রয়েছে। ইউনিয়নগুলোর দ্বারাই মূলত চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। যদিও শ্রম আইনকে পদদলিত করে বিশেষ নির্দেশিকাও জারি করে ফেডারেশন, ওই নির্দেশিকাও তারা অমান্য করছে। নির্দেশিকায় উল্লেখ রয়েছে, টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার সময় ৫০ টাকা এবং মালিক সমিতি ৬০ টাকা নেবে। কিন্তু দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে অন্তত ২০ জায়গায় চাঁদা দিতে হয়।
গণপিরবহন থেকে পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজির সংখ্যা আরও বেশি। যার প্রভাবে ১০ টাকা ধরের বেগুন ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। পণ্য পরিবহনেও শ্রমিক ফেডারেশনের যেসমস্ত ট্রাক ইউনিয়ন রয়েছে, তারাই চাঁদা আদায় করছে। রাস্তায় বাঁশ ফেলেও চাঁদা আদায় করছে তারা। বিভিন্ন ফেরিঘাটের নিয়ন্ত্রণ কর্তারাও ট্রাক প্রতি দুই হাজার টাকা চাঁদা নিচ্ছে। এছাড়া যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চল থেকে মাছ যায় চট্টগ্রামে। নির্ধারিত সময়ে না পৌঁছলে মাছের উপযুক্ত দাম পান না তারা। মাছভর্তি এসব ট্রাক আটকিয়েও পাঁচ হাজার টাকা করে চাঁদা নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দেশে ১১ লাখ কর্মাশিয়াল যানবাহন রয়েছে। ফেডারেশনের হিসাবে, যদি ৫০ টাকা করেও নেয় তাহলে প্রতিদিন সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। কিন্তু এক জায়গায় তো দিচ্ছে না। অন্তত ১০ জায়গায় দিতে হচ্ছে। সে হিসাবে পাঁচ জায়গায় ধরলেও একেকটি যানবাহন থেকে ২৫০ টাকা করে দৈনিক সাড়ে ২৭ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।
এদিকে ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য টাস্কফোর্সের সভায় স্বরাষ্ট্র্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ‘নির্ধারিত টার্মিনাল বা জায়গা ছাড়া রাস্তায় কোনো রকমের চাঁদা বা সার্ভিস চার্জ তুলতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। সভায় তিনি বলেন, ‘আমরা আইজিপিকে জানিয়ে দিয়েছি, তিনি অ্যাকশনে থাকবেন। পৌরসভাসহ বিভিন্ন ধরনের করও আদায় করা হয়, এগুলোও যাতে স্ট্যান্ড বা টার্মিনাল ছাড়া যত্রতত্র তোলা না হয়— সে ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। বিআরটিসি কমিটির সিটিং নিয়মিত করতেও বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স ও মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং) হায়দার আলী খান বলেন, ‘চাঁদা আদায়ের বিষয়ে আমরা কখনোই অনুমতি দেই না। যদি এরপরও কোথাও পরিবহন থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে এমন সংবাদ আসে, তাহলে আমরা তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ তবে পরিবহন শ্রমিক নেতা হানিফ খোকন বলছেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে চাঁদা আদায় বন্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশনার কোনো বাস্তবায়নই দেখা যাচ্ছে না। ফেডারেশনের যত শাখা আছে, অন্তর্ভুক্ত যত বেসিক ইউনিয়ন আছে তাদের চাঁদা দিতেই হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে পুলিশ প্রশাসন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। আর বর্তমানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে চাঁদা আদায় করা হয়। রাস্তার মধ্যে করতে হয় না, কাউন্টারেই জমা দিয়ে দেয়।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, শিমরাইল, কাঁচপুর, মদনপুর ও ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় ছোট-বড় সব যাত্রীবাহী পরিবহন থেকে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়। সিলেট, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী থেকে যাত্রীবাহী বাস ঢাকায় আসতে প্রতি ট্রিপে দেড়-দুই হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাসগুলো যেসব জেলা পেরিয়ে আসতে হয়, সেসব জেলায় মাসিক ভিত্তিতে পুলিশ সার্জেন্টদের ৫০০ টাকা করে বখরা দেয়াও বাধ্যতামূলক রয়েছে। এর বাইরে থানা-ফাঁড়ির পুলিশদেরও নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে স্থানীয়ভাবে গড়ে তোলা নানা সমিতি ও সংগঠনগুলোকেও চাঁদা দিতে হয়। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে কৌশল বদলে এখন টোকেনে চলছে চাঁদাবাজি।
এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের সোনাগাঁও, কুমিল্লা, ফেনীসহ অন্তত ১০টি স্থানে টোকেন চুক্তির আওতায় না থাকলে পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয় চালকদের। গাড়ির কাগজ ঠিক থাকার পরও গুনতে হচ্ছে দিগুণ টাকা। বারবার অভিযোগে করেও মিলছে না সুফল। এতে হুমকির মুখে রয়েছে পরিবহন ব্যবসা। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরাও ‘চাঁদাবাজির’ সাথে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
এইতো কয়েকদিন আগে কুমিল্লায় ট্রাফিক পুলিশের সিনিয়র ইন্সপেক্টর এমদাদুল হকের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা। তাদের অভিযোগ, প্রতি সিএনজি থেকে ট্রাফিক পুলিশের নামে মাসিক ১২শ টাকা করে আদায় করা হতো। জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দৈনিক পাঁচ শতাধিক গাড়ি ঢুকে কক্সবাজারে। কক্সবাজার ত্যাগ করতে সেসব গাড়িকে ৫০ ও ৬০ টাকা করে দুই দফায় ১১০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হয় চাঁদা। আরাকান সড়ক শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী সম্পাদক কলিম উল্লাহ করিমের নেতৃত্বে ওই টাকা নেয়া হয়। যার ভাগ যাচ্ছে রাজনৈতিক নেতাসহ পুলিশের কর্তা ব্যক্তিদের পকেটেও।
বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী ট্রাককে একেকটি স্পটে ৫০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। এই চাঁদা যেমন হাইওয়ে পুলিশ নেয়, তেমনি মালিক ও শ্রমিক সমিতির নামেও আদায় করা হয়। পণ্যবাহী ট্রাক ট্রাফিক জ্যামে পড়লে একটি গ্রুপ আছে যারা ভাঙচুরের হুমকি দিয়েও চাঁদাবাজি করে।
বগুড়া থেকে ঢাকায় আসতে একটি ট্রাককে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। একইভাবে সিলেট থেকে ঢাকা যেতে কমপক্ষে তিন জায়গায় পুলিশকে ঘুষ দিতে হয়। এর বাইরেও দুটি স্থানে অনিয়মিতভাবে চাঁদা দিতে হচ্ছে।’
জানতে চেয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীকে ফোন করা হলেও অন্য ব্যক্তি ফোন ধরে জানান, তিনি মিটিংয়ে আছেন। পরবর্তীতে ফোন দেয়ার কথা বলে লাইন কেটে দেন তিনি। গতকাল ফের ফোন করলে তিনি রিসিভ না করেই কেটে দেন।
বিভিন্ন বাস কোম্পানি, ব্যক্তি, সংগঠন ও সমিতির নামে টার্মিনাল ও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্টপেজ থেকে প্রতিদিন মোটা অঙ্কের টাকা উঠানো হচ্ছে। জানা গেছে, রাজধানীতে চলাচলকারী গণপরিবহণগুলোর মধ্যে কেবল বাস থেকেই প্রতিদিন অন্তত ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।
রাজধানীর বাইরে প্রতিটি বিভাগেই ব্যাপক চাঁদাবাজির খবর রয়েছে। বস্তুত রাজধানীসহ সারা দেশের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন পরিবহণে চাঁদাবাজি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
সড়কের চাঁদাবাজিকে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ উল্লেখ করে তা বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে কয়েক মাস আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এ ঘটনা থেকে আঁচ করা যায় দেশে চাঁদাবাজি কতটা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
অপ্রিয় হলেও সত্য-চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও টেন্ডারবাজির জন্য দায়ী মূলত রাজনীতির বর্তমান ধারা। লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির কারণে কোনো দল ক্ষমতাসীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সমর্থিত বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। বলা বাহুল্য, এ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হয় অস্ত্র ও পেশিশক্তি দ্বারা। চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হলে শাসনব্যবস্থা ও আইনের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, যা মোটেই কাম্য নয়। পরিবহণ খাতসহ সব ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি নির্মূলে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা দেশবাসীর।
ক্রাইম ডায়রি// ক্রাইম/ জনস্বার্থে