টাকা পাচার রোধে গ্রাহক পরিচিতি সংরক্ষণের নির্দেশ

বেনামী হিসাবের মাধ্যমে এলসি খুলে সেগুলোর দেনা শোধ করার পরও দেশে কোনো পণ্য আসেনি। এর মাধ্যমে টাকা পাচার হয়েছে। 

টাকা পাচার রোধে গ্রাহক পরিচিতি সংরক্ষণের নির্দেশ
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনে দেখা যায়, ব্যাংকিং খাতে যেসব বড় জালিয়াতি হয়েছে তার সবগুলোই হয়েছে বেনামি হিসাবের মাধ্যমে। কেওয়াইসি সংরক্ষণ না করায় বেনামি হিসাবগুলোর গ্রাহককে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

মো: ইকরামুল হক ভূইয়াঃ

টাকা পাচার ঠেকাতে এবার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষায়িত ইউনিট “বি এফ আই ইউ” । সম্প্রতি ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের বিস্তারিত তথ্য বা গ্রাহক পরিচিতি (কেওয়াইসি) যথাযথভাবে সংরক্ষণ না হওয়ায় বেনামি হিসাব খোলা যাচ্ছে। এতে বড় অঙ্কের ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। ওইসব ঋণ একটি পর্যায়ে খেলাপি হলে গ্রাহকদের আর শনাক্ত করা যায় না। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে।  এ কারণে ব্যাংকগুলোকে গ্রাহক পরিচিতি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)।

সম্প্রতি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চিফ এন্টি মানি লন্ডারিং কমপ্ল্যায়েন্স অফিসারদের নিয়ে এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেয় বিএফআইইউ। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে ই-কেওয়াইসি বা ডিজিটিয়াল কেওয়াইসি সংরক্ষণ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ জিডিটাল কেওয়াইসি থাকলে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের বোতাম টিপেই গ্রাহকের বিস্তারিত তথ্য বের করা সম্ভব। এতে জালজালিয়াতি বা টাকা পাচারের  সঙ্গে কারা জড়িত তাদেরও সহজে শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে। ঐ মিটিংয়ের কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এ কারণে ব্যাংকগুলোকে গ্রাহক পরিচিতি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)।

সূত্র জানায়, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন কার্যকর করা হয়েছে ২০০২ সালের মে মাস থেকে। ওই মাসেই ব্যাংক হিসাব খোলার সময় গ্রাহকের কেওয়াইসি বা গ্রাহক পরিচিতি সংগ্রহ করার বিধান করা হয়। এর আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে গ্রাহকের হিসাব খোলার ফরমে কেওয়াইসিসহ সব ধরনের তথ্য হালনাগাদ করার নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এ ছাড়া বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ডিসেম্বরের মধ্যে ই-কেওয়াইসি বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো সব গ্রাহকের হিসাবে ই-কেওয়াইসি সংরক্ষণ করতে পারেনি। একই সঙ্গে সাধারণ কেওয়াইসিও সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত গ্রাহকের পরিচিতি চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আর কোনো শৈথিল্য মেনে নেওয়া হবে না। কেওয়াইসি সংরক্ষণে ব্যর্থতার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা বিএফআইইউ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ বিভিন্ন শাস্তি আরোপ করতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনে দেখা যায়, ব্যাংকিং খাতে যেসব বড় জালিয়াতি হয়েছে তার সবগুলোই হয়েছে বেনামি হিসাবের মাধ্যমে। কেওয়াইসি সংরক্ষণ না করায় বেনামি হিসাবগুলোর গ্রাহককে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক জালিয়াতিতে অনেক বেনামি হিসাব ব্যবহার করা হয়েছে। বেনামী হিসাবের মাধ্যমে এলসি খুলে সেগুলোর দেনা শোধ করার পরও দেশে কোনো পণ্য আসেনি। এর মাধ্যমে টাকা পাচার হয়েছে। 

এদিকে বিএফআইইউ থেকে কেওয়াইসি সংরক্ষণের বিষয়ে একটি নীতিমালা জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ই-কেওয়াইসি সংরক্ষণের মাধ্যমে আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, জনসম্পৃক্ততা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি, অপরাধমূলক তৎপরতা প্রতিরোধ, দক্ষতা ও স্থায়িত্ব বাড়ানো, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধ করা সম্ভব।
 

ক্রাইম ডায়রি/ জাতীয়