কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য: কোনভাবেই থামানো যাচ্ছেনা
বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে তুচ্ছ হাতাহতি থেকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযান বা ব্যাপক ধরপাকড়েও থামছে না কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে অহরহ ঘটছে হত্যাকাণ্ড। এছাড়া আধিপত্য বিস্তারে একাধিক গ্রুপের মারামারি বা এলাকাভিত্তিক সশস্ত্র সংঘর্ষের ঘটনা নিত্যদিনের।
শাহাদাত হোসেন রিটন:
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকেই কিশোর গ্যাং দমনে সর্বাত্মক অভিযান চলছে। শুধু ৩ মাসেই র্যাব-পুলিশের হাতে গ্রেফতারের সংখ্যা অন্তত পাঁচশ। কিন্তু এতে কিশোর গ্যাং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বরং এলাকাভিত্তিক কয়েকটি কিশোর গ্রুপের দৌরাত্ম্য আরও বেড়েছে।
সূত্র জানায়, মার্চের প্রথম সপ্তাহে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান চালায় এলিট ফোর্স র্যাব (র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন)। ৬ মার্চ রাজধানীর কয়েকটি এলাকা থেকে কিশোর গ্যাংয়ের ৩৪ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় বিভিন্ন ধরনের ছুরি-চাকুসহ ২৭টি ধারালো অস্ত্র। এছাড়া ৪ ও ৫ মার্চ পৃথক অভিযানে এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাংয়ের আরও ৭৫ সদস্যকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
পুলিশ বলছে, পাশ্চাত্যের কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি আগে শহরকেন্দ্রিক হলেও এখন গ্রামেও এর বিস্তার বাড়ছে। আগে মহল্লাভিত্তিক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরে গ্যাং কালচার থাকলেও এখন তাদের অনেকেই গুরুতর অপরাধে জড়িত। বিশেষ করে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্রুপের সদস্যরা। এছাড়া রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় অস্ত্রের মুখে পথচারীদের কাছ থেকে টাকা ও মূল্যবানসামগ্রী ছিনতাই করছে একাধিক কিশোর গ্রুপ।
র্যাবের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জানুয়ারিতে ১৬, ফেব্রুয়ারিতে ১৮৯ এবং মার্চে ২১৩ কিশোরকে বিভিন্ন অপরাধসংশ্লিষ্টতায় গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের কয়েকজন একাধিক মামলার আসামি। এছাড়া গ্রেফতারকৃতদের কেউ অটোরিকশাচালক, কেউ ভাঙারি ব্যবসায়ী আবার কেউ দিনমজুরি পেশায় নিয়োজিত হলেও তারা এলাকায় রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে পরিচিত। ফলে তাদের ক্ষমতার মূল উৎস বা শেলটারদাতা হলেন স্থানীয় অসাধু জনপ্রতিনিধি বা মহল্লার বড়ভাই।
র্যাব সদর দপ্তর জানায়, কিশোর গ্যাং দমনে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে র্যাব। এ কারণে চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন কিশোর গ্রুপের ৪১৮ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের বেশিরভাগই নানা ধরনের গুরুতর অপরাধে জড়িত। কোন না কোন ভাবে আইনের ফাঁক গলিয়ে এরা তাদের কার্য ক্রম চালায়।
ক্রাইম ডায়রি/ক্রাইম