রামেক হাসপাতালে দালালচক্রঃ দেশের সব হাসপাতালেই এসব সিন্ডিকেট

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দালালচক্র নতুন কিছু নয়। হাসপাতাল প্রশাসনের পদক্ষেপে এসব চক্রের দালালদের প্রায়ই বিতারিত করার চেষ্টা চলে। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারনে দালালরা থেকেই যায়। এই সিন্ডিকেটদের ধরা এখন সময়ের দাবী।

রামেক হাসপাতালে দালালচক্রঃ দেশের সব হাসপাতালেই এসব সিন্ডিকেট
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

 হাসপাতালে রোগীর অভিভাবকের যেমন সতর্ক থাকা উচিত তেমনি রোগশোকে কাতর মানসিকভাবে দূর্বল রোগী ও তার পরিবারের নিকট হতে হাসপাতালের ভিতর হতে যে কোন পন্থায় প্রতারনা হবে এটা মেনে নেয়া ঠিক নয়

রাজশাহী মহানগর সংবাদদাতাঃ

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালর দালাল চক্রের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে কথা প্রায়শঃই গণমাধ্যমে আমরা দেখি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে এদেরকে বিতাড়িত করার চেষ্টা চালায় কিন্তু সিন্ডিকেটের কারনে এরা থেকেই যায়। আর সিন্ডিকেটের এ দৃশ্য শুধু রামেক হাসপাতালের নয় সারা দেশের সকল সরকারি হাসপাতালের। 

সাধারণতঃ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ক্লিনার, নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয় এদের মাধ্যমে সিন্ডিকেট চলে। কয়েকদিন আগে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পঞ্চাশ টাকার জন্য অক্সিজেন নল খুলে দিয়ে হত্যার ঘটনা আমরা জানি, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে বকশিশ না দেয়ায় হুইল চেয়ার না দিয়ে রোগীকে কষ্ট দেয়াসহ নানান অনিয়ম ও অত্যাচারের ঘটনা পত্রিকায় দেখা যায়।

আরও না জানা অনেক ঘটনা হাসপাতাল কেন্দ্রীক আলোচনা হয় চায়ের দোকানে। সম্প্রতি রামেক হাসপাতালে ডাক্তার সেজে অপারেশনের রোগীর অভিভাবকের নিকট হতে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে,  রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসারত শিশু সিয়াম মণ্ডলের (৬) অপারেশনের জন্য জোগাড়কৃত অর্থ চিকিৎসক পরিচয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এতে হতদরিদ্র ওই পরিবার ছেলের চিকিৎসা খরচ মেটাতে বিপাকে পড়েছে তার বাবা।

ডিসেম্বর ১৬,২০২১ইং বিজয়ের দিনে এমন ঘটনা সত্যিই বেদনাদায়ক।  হাসপাতালে রোগীর অভিভাবকের যেমন সতর্ক থাকা উচিত তেমনি রোগশোকে কাতর মানসিকভাবে দূর্বল রোগী ও তার পরিবারের নিকট হতে হাসপাতালের ভিতর হতে যে কোন পন্থায় প্রতারনা হবে এটা মেনে নেয়া ঠিক নয়।

রোগীর পরিবার সুত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে হাসপাতালের নয় নম্বর শিশু ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। রোগী সিয়াম মণ্ডল পাবনার সুজানগর উপজেলার নওয়াব গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা শহীদ আলী মণ্ডল পেশায় দিনমজুর। বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে রাস্তা পারাপারের সময় বেপরোয়া চার্জার অটোরিকশা সিয়ামকে চাপা দেয়। গুরুতর জখম নিয়ে তাকে সুজানগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। 

সেখানে এক্সরে করে ডাক্তার জানান, তার বুকের তিনটি হাড় ভেঙে গেছে। পরে রক্ত বন্ধ না হওয়ায় তাকে পাবনা সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে ওই রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিয়ামকে রামেক হাসপাতালের নয় নম্বর ওয়ার্ডের ২১ নম্বর বেডে ভর্তি করা হয়। 

সিয়ামের চাচাতো ভাই রাজিব হোসেন জানান, তারা ১৬ তারিখ রাতে হাসপাতালে এসেছেন। চিকিৎসকরা অপারেশনের জন্য কিছু টাকা সংগ্রহ করতে বলেছিলেন। রাতে তিনি ও তার চাচা এই ওয়ার্ডের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন। ১৭ তারিখ ভোর ৫টার দিকে তার চাচাকে সার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসক শাজাহান পরিচয় দিয়ে ইনজেকশনের জন্য ৬ হাজার টাকা দিতে বলেন। 

চাচা আকুতি-মিনতি করলে চার হাজার টাকায় ইনজেকশন দিতে রাজি হন। এই চার হাজার টাকা নিয়ে ওই লোক উধাও হয়ে যায়। মিথ্যা পরিচয় দিয়ে তার সহজ-সরল চাচার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সিয়ামের বাবা শহীদ আলী মণ্ডল বলেন, আমি গরিব মানুষ। ছেলের চিকিৎসার জন্য হাতে কোনো টাকা ছিল না। অপারেশনের কথা বলে বড়ভাই আব্দুর শকুর মণ্ডলের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ধার করেছিলাম। এর মধ্য থেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে ৪ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়েছে। বাকি টাকাসহ আরও কিছু ধার করে ছেলের অপারেশন করিয়েছি। এখন টাকা পরিশোধ করার কোন উপায় আমার নেই। 

শহীদ আলী মণ্ডল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এখন হাতে কোনো টাকা নেই। ছেলের মুখে ভালো কোনো খাবারও তুলে দিতে পারিনি। গতরাত থেকে বাকিদের এখনো পেটে কোনো দানাপানি পড়েনি। আপনারা (গণমাধ্যম কর্মীদের) কিছু করেন বাবা।

এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নওশাদ আলী জানান, বিষয়টি দুঃখজনক। তিনি সকালেই ওই ওয়ার্ডে রাউন্ড দিয়েছেন। কিন্তু তখন পর্যন্ত এ রকম কোনো অভিযোগ কেউ করেননি। আর ওই নামে সার্জারি ওয়ার্ডেও কোনো চিকিৎসক নেই।

এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামিম ইয়াজদানী জানান, গ্রাম থেকে রোগীরা আসছেন। এরা এত সহজ-সরল যে, কেউ টাকা চাইছে আর দিয়ে দিচ্ছে। এসব ঘটনা খুবই দুঃখজনক। হাসপাতালে সচেতনতামূলক ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো রয়েছে। এগুলোও তারা পড়ে না। তবে ভুক্তভোগী রোগীর বিষয়ে বিশেষ বিবেচনার ব্যাপারে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের আশ্বস্ত করেন।

ক্রাইম ডায়রি // ক্রাইম