ফেসুবক হ্যাক করে তরুনীদের একান্ত ছবি সংগ্রহঃ অপরাধী চক্রকে আটক করেছে সিআইডি

তাঁদের ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করে অশালীন ছবিতে বসিয়ে করা হতো ব্লাকমেইল। এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে দাবি করা হতো টাকা।

ফেসুবক হ্যাক করে তরুনীদের একান্ত ছবি সংগ্রহঃ অপরাধী চক্রকে আটক করেছে সিআইডি
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

শাহাদাত হোসেন রিটনঃ

মহা ভয়ংকর এক চক্র। তরুনীদের ইজ্জত নিয়ে খেলা এবং অর্থ ইনকামই যাদের পেশা। তারা টার্গেট করা তরুণীর ফেসবুক আইডি হ্যাক করত । পরে তাঁদের ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করে অশালীন ছবিতে বসিয়ে করা হতো ব্লাকমেইল। এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে দাবি করা হতো টাকা। ভুক্তভোগীরা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাঁদের গোপন ভিডিও ধারণ করে পাঠাতে বলত চক্রটি। পরে সেই ভিডিও একটি আন্তর্জাতিক টেলিগ্রাম গ্রুপে ছাড়া হতো। এ ছাড়া নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের ক্রেতাদের কাছে অর্থের বিনিময়েও বিক্রি করা হতো। এভাবে বছর খানেকের মধ্যেই চক্রটি কোটি কোটি টাকার পর্নো ভিডিও বিক্রি করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সোমবার দুপুরে মালিবাগে সিআইডি সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া এসব তথ্য জানান। আপত্তিকর ভিডিও কেনাবেচা চক্রটির ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। তারা হলো- আবু সায়েম ওরফে মার্ক সাকারবার্গ, মশিউর রহমান, সাহেদ খান, কেতন চাকমা, নাজমুল হাসান সম্রাট, মারুফ হোসেন, শাহরিয়ার আফসান অভ্র, জুনাইদ বোগদাদী শাকিল ও জসীম উদ্দীন।

সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী জানান, প্রেমিকার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি টেলিগ্রাম গ্রুপে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি এক ভুক্তভোগী তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মার্ক জাকারবার্গসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে। সেই মামলার তদন্তে নেমে এসব তথ্য পেয়েছে সিআইডি।

তিনি বলেন, এই চক্রের সদস্যদের প্রস্তাবে কেউ সাড়া না দিলে তাঁর নাম-পরিচয়সহ ব্যক্তিগত তথ্য লাখ লাখ সাবস্ক্রাইবারের টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে ছেড়ে দিত। পরে সেখান থেকে অনেকেই ভুক্তভোগীকে আপত্তিকর মেসেজ পাঠাতে থাকে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পর্তুগাল, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইংল্যান্ডের পেইড সদস্য নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক পর্নো বিক্রি চক্র গড়ে তুলেছে এরা। এই গ্রুপের সদস্য হাজার খানেক। যারা মাসে এক থেকে দুই হাজার টাকা সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে গ্রুপটির সদস্য হয়েছে। 

তিনি বলেন, চক্রটির গ্রুপগুলোয় সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা সোয়া চার লাখ। সেখানে ২০ হাজার আপত্তিকর ভিডিও এবং ৩০ হাজার ছবি পাওয়া গেছে। অন্যদিকে মাসিক ফি দিয়ে তাদের প্রিমিয়াম গ্রুপের সদস্য হয়েছে দেশ-বিদেশের প্রায় সাড়ে ৭০০ মানুষ। এদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের নিয়েও কাজ চলছে। তরুণীদের অ্যাডাল্ট কনটেন্ট কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। এ ছাড়া মানি লন্ডারিং তদন্ত করারও পরিকল্পনা রয়েছে। কেবল টেলিগ্রাম চক্রের হোতারাই নয়, ফলো দ্য মানি করে তাদের দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা সহযোগীদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

মোহাম্মদ আলী জানান, মার্ক ওরফে সায়েমের মোবাইল ফোন তল্লাশি করে মার্ক-সাকারবার্গ আইডিটি লগইন অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন টেলিগ্রাম গ্রুপ ও চ্যানেলের অ্যাডমিনদের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। অন্য অ্যাডমিনদের কাজ ছিল মার্কের হয়ে নতুন নতুন কনটেন্ট জোগাড় করা। নতুন কনটেন্টের জন্য তারা ভুয়া এনআইডি বানিয়ে টার্গেট করা তরুণীর ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম আইডি হ্যাক করত। পরে মার্ক তার সহযোগীদের দিয়ে সেসব ফেসবুক আইডি থেকে ছবি নিয়ে ছোট প্রমো বানিয়ে গ্রুপগুলোতে আপলোড করত। পরে কেউ পূর্ণ ভিডিও দেখতে চাইলে টাকার বিনিময় আরেকটি প্রিমিয়াম গ্রুপে অ্যাড করা হতো। সেখানে তারা পূর্ণ ভিডিও শেয়ার করত।

 

ক্রাইম ডায়রি/ ক্রাইম/