উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেই নিখোঁজ চিকিৎসক জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেফতার

আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্যরা নতুন সদস্য সংগ্রহ করে তাদের সংগঠনের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে অবগত করার জন্য প্রথমে অনলাইনে এবং পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে দাওরা কোর্স (প্রশিক্ষণ) কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেই নিখোঁজ  চিকিৎসক জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেফতার
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

ডা. জাকির হোসেন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের পাঠ্য ‘কাইজেন’ সিরিজের লেখক বলে দাবি করেছে সিটিটিসি। 

মহানগর সংবাদদাতাঃ

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. জাকির হোসেন গত ৮ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করে পরিবার। এ ঘটনায় নিখোঁজের দুদিন পর অর্থাৎ ১০ নভেম্বর ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা মোহসিন উদ্দিন ফকির থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। 
সেই জাকির হোসেনকে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।  বুধবার বিকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। 

যাত্রাবাড়ী থানায় তার বিরুদ্ধে করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বৃহস্পতিবার তাকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। ডা. জাকির হোসেন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের পাঠ্য ‘কাইজেন’ সিরিজের লেখক বলে দাবি করেছে সিটিটিসি। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের এডিসি আহমেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের ধারাবাহিক গোয়েন্দা কার্যক্রম এবং তথ্যপ্রযুক্তির কার্যক্রমের মাধ্যমে জানতে পারি যে, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সাংগঠনিক এবং অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংঘবদ্ধ একটি গ্রুপ দাওরা কোর্স (প্রশিক্ষণ) পরিচালনা করছে। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার কারণে সংগঠনের সদস্যরা তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার সময় নিরাপত্তাজনিত কারণে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন না।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দীর্ঘদিন নজরদারির মাধ্যমে আরও তথ্য পাওয়া যায়, আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্যরা নতুন সদস্য সংগ্রহ করে তাদের সংগঠনের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে অবগত করার জন্য প্রথমে অনলাইনে এবং পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে দাওরা কোর্স (প্রশিক্ষণ) কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেই ধারাবাহিকতায় সিটিসিটি জানতে পারে সায়েদাবাদ এলাকায় ইব্রাহিম (সাংগঠনিক নাম) নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের একটি গ্রুপ একত্রিত হবে। 

তিনি জানান, এ খবরে তার নেতৃত্বে একটি টিম সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে কৌশলে অবস্থান নেয়। বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে দেওয়ান মোহাম্মদ সাইদুর রহমান চিশতি সায়েদাবাদী দরবার শরিফের মূল গেটের সামনে রাস্তার মাঝখানে ফ্লাইওভারের নিচে ৩ থেকে ৪ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তি দেখে তাদের দিকে এগোতেই পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর সময় জাকির হোসেনকে (৩০) আটক করা হয়। 

এডিসি আহমেদুল ইসলাম বলেন, জাকিরকে জিজ্ঞাবাবাদে প্রাথমিকভাবে ১৫ জনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। এছাড়া তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদরে জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।  সিটিটিসি জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাকির নিজেকে আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করেছেন। সংগঠনে তিনি ইব্রাহিম নামে পরিচিত। কাইজান সিরিজ তার নিজের লেখা একটি ব্লাগ রয়েছে। আনসার আল ইসলামের সদস্যদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রশিক্ষণে ‘কাইজান সিরিজ’ বিষয়ে আলোচনা করেন এবং সবাইকে এই ব্লগ পড়ার নির্দেশনা দেন। জাকির হোসেনকে গ্রেফতারের সময় বেশ কয়েকজন পালিয়ে যান।

জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কয়েকজনের নাম জানিয়েছেন ডা. জাকির। তারা হলেন- নাদিম, মুসা, আমজাদ, জুনায়েদ ওরফে রনি, এজাজ, মিঠু, জুলফিকার, নোবেল ওরফে মিন্টু, ওয়ালীম, মুস্তাকিম, শায়েখ মামুন, মীর ফরহাদ, সাইফুল্লাহ, ফরিদ ও  সিরাজ। তারা আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য। তারাও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

 সিটিসি সুত্রে জানা গেছে, বুধবার মধ্যরাতে যাত্রাবাড়ী থানায় স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের পরিদর্শক মো. মাহিদুল ইসলাম এ বিষয়ে একটি মামলা করেন।

ক্রাইম ডায়রি/ আইন শৃঙ্খলা