হাসপাতালে পুলিশ কর্মকর্তা খুনঃ দ্রুত বিচার দাবী গণমানুষেরঃ সকল হাসপাতালে গোয়েন্দা নজরদারী প্রয়োজন

Murder of police officer in hospital: Demand for speedy trial of people: All hospitals need intelligence surveillance

হাসপাতালে পুলিশ কর্মকর্তা খুনঃ দ্রুত বিচার দাবী গণমানুষেরঃ সকল হাসপাতালে গোয়েন্দা  নজরদারী প্রয়োজন

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

এ দৃশ্য দেখাটা সত্যিই খুবই কষ্টকর।।  যা কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ যদি দেখে তবে অসুস্থ হয়ে যাবে। 

https://youtu.be/yfGXSatKAK0

হাসপাতালে ঠান্ডামাথায় একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে খুন একি যেমন তেমন কথা।। রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে পুলিশ কর্মকর্তাকে কর্মচারীদের মারধর করে হাসপাতালের কর্মীরা। এর ঠিক পাঁচ মিনিটের মাথায় তার  মৃত্যু হয়। বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে আনিসুল করিমকে টানাহেঁচড়া করে একটি কক্ষে ঢোকানোর পর হাসপাতালের ছয়জন কর্মচারী তাকে মাটিতে চেপে ধরে, তারপর আরও দুইজন কর্মচারী তার পা চেপে ধরে, এসময় আনিসুল করিমের মাথার দিকে থাকা দুইজন তাকে কনুই দিয়ে আঘাত করছিলেন। 

আনিসুল করিমকে মারধরের সময় হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ঘটনা দেখছিলেন, হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার চার মিনিট পর আনিসুলকে উপুড় করা হলে তার শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়। এসময় একজন কর্মচারী তার মুখে পানি ছিটালেও তিনি নড়াচড়া করছিলেন না, তারপর কর্মচারীরা সেই কক্ষের মেঝে পরিষ্কার করেন, ঘটনার সাত মিনিট পর সাদা অ্যাপ্রোন পরা একজন নারী কক্ষে এবং ১৩ মিনিটের মাথায় তার বুকে পাম্প করেন।

বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে আনিসুল করিমকে টানাহেঁচড়া করে একটি কক্ষে ঢোকানোর পর হাসপাতালের ছয়জন কর্মচারী তাকে মাটিতে চেপে ধরে, তারপর আরও দুইজন কর্মচারী তার পা চেপে ধরে, এসময় আনিসুল করিমের মাথার দিকে থাকা দুইজন তাকে কনুই দিয়ে আঘাত করছিলেন। 

আনিসুল করিমকে মারধরের সময় হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ঘটনা দেখছিলেন, হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার চার মিনিট পর আনিসুলকে উপুড় করা হলে তার শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়।

আনিসুল করিম ৩১-তম বিসিএসের কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশে যোগদান করেন। সর্বশেষ তিনি বরিশাল মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩-তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।

মানসিক অসুস্থতার কারণে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিমকে তার স্বজনেরা রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে নিয়ে যান। সোমবার সকালে ভর্তি প্রক্রিয়া চলার মধ্যে হাসপাতালের কর্মীরা তাকে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে নিয়ে যান। সিসিটিভি ফুটেজে সেখানে তাকে শারীরিক নির্যাতনের দৃশ্যও দেখা যায়। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই মারা যান তিনি। পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।মতার চার বছরের একটি ছেলে রয়েছে।

সোমবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে আনিসুল করিমের মরদেহ গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হাসপাতালের ব্যবস্থাপকসহ ছয়জনকে আটক করেছে।

হাসপাতালে আনিসুল করিমের সঙ্গে ছিলেন তার বড় ভাই রেজাউল করিম সবুজ। তিনি ক্রাইম ডায়রিকে বলেন, তার ভাই একটু মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এজন্য বরিশালের কর্মস্থল থেকে চিকিৎসার জন্য কয়েকদিন আগে ঢাকায় আসেন। সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তারা তাকে নিয়ে মাইন্ড এইড হাসপাতালে যান তিনি । এরপর ভাইকে পাশে দাঁড় করিয়ে রেখে হাসপাতালের কাউন্টারে ভর্তি ফরম পূরণ করার সময়ে কয়েকজন কর্মচারী আনিসুলকে দোতলায় নিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পরই তাদের জানানো হয় আনিসুল অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। এরপর তারা তাকে দ্রুত হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে নেওয়া হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান তার ভাই আগেই মারা গেছেন।

তিনি বলেন, শুরুতে ভাবছিলেন হয়তো তার ভাইয়ের স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু হাসপাতালের কর্মীদের আচরণে তার সন্দেহ হতে থাকে। এরপরই তিনি খোঁজ নেওয়া শুরু করেন। বিষয়টি পুলিশকে জানান। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পান তার ভাইকে হাসপাতালের কক্ষের মেঝেতে ফেলে মারধর করা হচ্ছে। নিজে চিকিৎসক জানিয়ে রেজাউল করিম সবুজ বলেন, তার ভাইকে হাসপাতালের লোকজন পিটিয়ে, নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে।

মাইন্ড এইড হাসপাতালের সমন্বয়ক ইমরান খান দাবি করেছেন, পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুলকে জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউট থেকে তাদের হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন স্বজনেরা। ওই সময়ে তিনি খুব উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করছিলেন। বিভিন্নজনকে মারধর করেন। তাকে শান্ত করার জন্য ওই কক্ষটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে ঘটনার সময়ে তিনি হাসপাতালে ছিলেন না।

বেসরকারি হাসপাতালটি থেকে পুলিশের সংগ্রহ করা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে আনিসুল করিমকে টানাহেঁচড়া করে একটি কক্ষে ঢোকানো হচ্ছে। তাকে হাসপাতালের ৫ থেকে ৬ জন কর্মচারী মিলে মাটিতে ফেলে চেপে ধরতে দেখা যায়। এরপর আরও দুইজন তার পা চেপে ধরেন। ওই সময় মাথার দিকে থাকা দুইজন হাতের কনুই দিয়ে তাকে আঘাত করতে থাকেন। একটি কাপড়ের টুকরো দিয়ে তার হাত পেছন থেকে বাঁধতেও দেখা যায়।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, হাসপাতালের কর্মীরা আনিসুলকে মারধর করে। পুরো ঘটনার সময়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদকে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পুরো ভিডিওর চার মিনিটের মাথায় আনিসুলকে উপুড় করলেও তার দেহ নিস্তেজ অবস্থায় ছিল। একজনকে তখন তার মুখে পানি ছিটাতে দেখা গেছে। সাত মিনিট পর সাদা অ্যাপ্রোন পরা একজন নারী ওই কক্ষে প্রবেশ করেন। ১১ মিনিটের মাথায় কক্ষের দরজা লাগিয়ে দিতে দেখা গেছে। এর দুই মিনিট পর তার বুকে পাম্প করেন অ্যাপ্রোন পরা নারী।

পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের এডিসি মৃত্যুঞ্জয় দে সজল জানান, হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেটি বিশ্নেষণ করে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বিস্তারিত জানা যাবে। তারা ঘটনার তদন্ত করছেন।

আনিসুল করিমের একজন স্বজন ও তার একজন ব্যাচমেট জানিয়েছেন, পারিবারিক ঝামেলাতে ছিলেন আনিসুল। এতে তার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তার চিকিৎসাও চলছিল। এ ছাড়া রক্তচাপজনিত সমস্যাও ছিল। তবে সেটা বড় সমস্যা ছিল না বলেও তিনি জানান। বিজ্ঞজনেরা বলছেন, তিনি যে সমস্যাতেই থাকেন আর যে পরিস্থিতিই হোক সিসিটিভি ফুটেজ পরিস্কার।। এভাবে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধোর এবং মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার দায় সংশ্লিষ্ট কেউই এড়াতে পারেননা। আর যে কর্মীরা এই হত্যাযজ্ঞে অংশগ্রহন করেছে তারা জেনে বুঝেই করেছে যা ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা গেছে।।

ক্রাইম ডায়রি // ক্রাইম