সরকারী কর্মচারীর একই সাথে দুই জায়গায় চাকরীঃ দুদকের মামলা দায়ের

Government servant working in two places at the same time: ACC case filed

সরকারী কর্মচারীর একই সাথে দুই জায়গায় চাকরীঃ দুদকের মামলা দায়ের
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

একই সাথে তিনি ইউপি সচিব এবং ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। 

শরীফা আক্তার স্বর্নাঃ

সরকারী চাকরিত কর্মরত থাকা অবস্থায় একই সাথে দুই জায়গায় চাকরি করার কোন বিধান নেই। সেটা জেনেও পরিচয় গোপন রেখে চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই থানার কমলদহ ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের বিনোদ বিহারী নাথের ছেলে কানু কুমার নাথ(৫৮) [জাতীয় পরিচয় পত্র নং ১৫১৫৩৮৯৬০৩৫১৫] ইউনিয়ন পরিষদ সচিব হিসেবে কর্মরত থেকে পাশ্ববর্তী ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে চাকরীরত আছেন।

তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের বিষয় দুদকের নজরে আসলে তদন্তে নামে দুদক। তদন্তে সত্যতা প্রমানিত হয় এবং একই সাথে ০২টি পদে কর্মরত থেকে সরকারী কোষাগার (কলেজ হতে গৃহীত) থেকে মোট ৫০,৫৭,২৩৯/- (পঞ্চাশ লক্ষ সাতান্ন হাজার দুইশত উনচল্লিশ টাকা) টাকা উত্তোলনপূর্বক অর্থ আত্মসাৎ করার অপরাধে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে দুদক।

ইউনিয়ন পরিষদ সচিব হিসেবে কর্মরত থেকে পাশ্ববর্তী ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে চাকরীরত আছেন

দুদক সুত্রে জানা গেছে,  কানু নাথ ১৯৯১ সনে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলাধীন ০৩ নং মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদে ইউপি সচিব হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি পূর্বের চাকরির তথ্য গোপন করে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির হেয়াকো বনানী ডিগ্রি কলেজ, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রামের স্মারক নং-হেবক-পত্র নং-১৯৮/৯৪, তারিখ-০৫/০৫/১৯৯৪ খ্রি. মূলে বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে ০৮/০৫/১৯৯৪ খ্রি. তারিখে যোগদান করেন।

তিনি ০১/০৬/১৯৯৫ সালে এমপিও ভূক্ত প্রভাষক হন। পরবর্তীতে তিনি গত এপ্রিল/২০০২ সালে অত্র কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। তার কলেজ ইনডেক্স নং-৪১১০৯০, তার ব্যাংক হিসাব নং-০১০০০৫৬১৪৫৩০৮, জনতা ব্যাংক লিঃ, ফটিকছড়ি শাখা, চট্টগ্রাম যা হতে তিনি কলেজের বেতন-ভাতাদি উত্তোলন করতেন।

একই সাথে দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করার বিষয়ে সরেজমিনে অধিকতর তদন্তের জন্য ০৫ (পাঁচ) সদস্য বিশিষ্ট অত্র কলেজের একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কলেজের তদন্ত কমিটির সদস্যগণ সরেজমিনে তদন্ত শেষে অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পান মর্মে ১৩/০২/২০২১ খ্রি. তারিখে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র মূলে দেখা যায়, কানু কুমার নাথ হেয়াকো বনানী ডিগ্রি কলেজে নভেম্বর/১৯৯৫ হতে জানুয়ারী/২০২১ পর্যন্ত সরকারী খাত (কলেজ হতে গৃহীত) হতে বেতন ভাতা বাবদ মোট ৫০,৫৭,২৩৯/- টাকা উত্তোলন করেছেন। কানু কুমার নাথ কর্তৃক একই সাথে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে সরকারী তহবিল থেকে বেতন ভাতা উত্তোলন সংক্রান্ত বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতেও একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।

একই সাথে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার বিষয়টি স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) কর্মচারী চাকরি বিধিমালা, ২০১১ এর বিধি ৩৩ এর উপবিধি ১(গ) ও ২(চ) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, স্থানীয় সরকার শাখা, চট্টগ্রামের বিভাগীয় তদন্তকালে প্রমাণিত হয়েছে মর্মে দেখা যায়। এ বিষয়ে আসামী কানু কুমার নাথ এর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। যার মামলা নং-০১/২০২১।

পরবর্তীতে বিভাগীয় তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, স্থানীয় সরকার শাখা,  চট্টগ্রামের স্মারক নং-০৫.৪২.১৫০০.৭০১.০২.০৪০.২১-৭১৮, তারিখ-১২/১২/২০২১ খ্রি.  এর আদেশ মূলে তার বর্তমান বেতন স্কেলের নিম্ন বেতন স্কেলে অবনমিত করা হয়। তৎপ্রেক্ষিতে উক্ত আদেশ অনুসারে গত ১৪/১২/২০২১ খ্রি. তারিখে জনাব কানু কুমার নাথ, ইউপি সচিব হিসেবে ৩নং মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদ, হাটহাজারী, চট্টগ্রামে অদ্যাবধি কর্মরত রয়েছেন। 

 কানু কুমার নাথ সরকারী চাকুরী হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ সচিব পদে কর্মরত থেকে অসৎ উদ্দেশ্যে তথ্য গোপন করে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অপরাধজনক অসদাচরণের মাধ্যমে হেয়াকো বনানী ডিগ্রি কলেজ, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রামে প্রভাষক পদে যোগদানপূর্বক একই সাথে ০২টি সরকারী পদে কর্মরত থেকে সরকারী কোষাগার (কলেজ হতে গৃহীত) থেকে মোট ৫০,৫৭,২৩৯/-(পঞ্চাশ লক্ষ সাতান্ন হাজার দুইশত উনচল্লিশ টাকা) টাকা উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ করার অপরাধে দন্ডবিধি’র ৪২০/৪০৯ তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজুর জন্য অনুরোধ করা হয়।

এরই প্রেক্ষিতে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম -২ এর অত্যন্ত মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক জনাব নুরুল ইসলাম অভিযুক্তর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

ক্রাইম ডায়রি / ক্রাইম