ফারইষ্ট ইস্যুঃ ১১৬ কোটি টাকা পাচার, সাবেক চেয়ারম্যান খালেক সহ ১৭ জনের বিরু্দ্ধে মামলা

একই সময়কালীন ফারইষ্ট হতে ফিল্ডের উদ্ধর্তন অনেকে চাকুরী ছেড়ে আজ হাজার কোটি টাকার প্রতিষ্ঠান গড়েছেন এবং সেইসব প্রতিষ্ঠানে ফারইষ্ট সংশ্লিষ্ট অনেকেই চাকরীও করছেন। খালেক একা দায়ী নয়, একক ভাবে এসব দুর্নীতি হয়নি। সেসব কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে অনেকে মনে করছেন।

ফারইষ্ট ইস্যুঃ ১১৬ কোটি টাকা পাচার, সাবেক চেয়ারম্যান খালেক সহ ১৭ জনের বিরু্দ্ধে মামলা
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

১১৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ফারইস্ট স্টকস্ অ্যান্ড বন্ডস্ লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান এমএ খালেকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

ক্রাইম ডায়রি ডেস্কঃ

ফারইষ্ট কেলেংকারীর বিষয় নতুন কিছু নয়। কেচো খুড়তে সাপ বের হবার মতো করে একের পর এক ঘটনা বেরিয়ে আসছে। ফারইষ্ট হতে বের হয়ে হাজার কোটি টাকার কোম্পানী খুলে বসে সাবেকদের চাকরী দিয়ে ব্যবসা খুলে বসাদেরও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং তদন্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি, ১১৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ফারইস্ট স্টকস্ অ্যান্ড বন্ডস্ লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান এমএ খালেকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রাজধানীর মতিঝিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এ বিষয়ে মামলাও করা হয়েছে। 

মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে,  ২০০৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এমএ খালেক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে থেকে নিজে এবং আত্মীয়স্বজনসহ সহযোগীরা মিলে প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই টাকা সম্পদে রূপান্তর ও বিদেশে পাচার করেছেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- প্রতিষ্ঠানের সাবেক সিইও তরফদার জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক সিএফও জাহিদুল হক, এমএ খালেকের স্ত্রী সাবিহা খালেক, ছেলে শাহরিয়ার খালেদ রুশো, মেয়ে শারওয়াত খালেদ, জামাতা তানভিরুল হক ও শ্বশুর ফজলুল হক এবং আবুল কাশেম মোল্লা, রাশেদ মোহাম্মদ মাজহারুল, খশরুবা সুলতানা শিল্পি, শেখ ইউসুফ আলী, মাহবুবা সুলতানা, দিলরুবা সুলতানা, নজরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান মোস্তফা ও কাজী শাহরিয়ার।

সিআইডি সূত্র জানা গেছে, ফারইষ্ট স্টকস্ অ্যান্ড বন্ডস্ লিমিটেড জয়েন্ট স্টক অ্যান্ড ফার্মের অধীনে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। ঘটনার সময়কালে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিনিয়োগকারী ৮৯ কোটি ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯৭ টাকার চেক বা নগদ টাকা জমা দেন। বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে ওই টাকা দেখানো হলেও কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে তা জমা হয়নি। অর্থাৎ ভুয়া জমা দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়াও আসামিদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন সময়ে মোট ১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকার চেক জমা করেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে (অপর্যাপ্ত জের, স্বাক্ষরে গরমিল, টাকার অংক ভুল লেখা ইত্যাদি) চেকগুলো ডিজঅনার হয়, যা রিভারসাল অ্যান্ট্রি (জমা) দেখানো হয়েছে। অডিট প্রতিবেদনে দেখা যায়, অভিযুক্তরা পরস্পরের যোগসাজশে কোম্পানির হিসাবের যোগফলে ২২ কোটি ৮৬ লাখ ৪১ হাজার ১২৫ টাকার স্থলে ৩৬ কোটি ৩৬ লাখ ৪১ হাজার ১২৫ টাকা বসিয়ে তথ্যের গরমিল করে ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।

মামলার বাদী সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম স্কোয়াডের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান  সাংবাদিকদের বলেন, সিআইডি মামলাটির তদন্ত করবে। আসামিদের মধ্যে এমএ খালেক ও নজরুল ইসলামকে এর আগে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জানা গেছে, এমএ খালেক তার স্বার্থসংশ্লিষ্টদের বিও হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা না থাকা সত্ত্বেও দুটি চেক ইস্যু করে ৫০ লাখ টাকা লেয়ারিং করে আবুল কাসেম মোল্লা নামে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের হিসাবে জমা করেন। মূলত প্রাইম ব্যাংকের ব্যক্তিগত হিসাবে টাকা হস্তান্তর করে আত্মসাৎ করেন তিনি। আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক থেকে ফারইস্ট স্টকসের নামে নেওয়া ৪১ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের (আবুল কাশেম মোল্লা, কাজী শাহরিয়ার এবং নজরুল ইসলাম) মাধ্যমে লেয়ারিং করে হস্তান্তর ও গ্রহণ করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রতারণার অর্থকে সম্পদে রূপান্তরের জন্য স্থাবর সম্পত্তির বিক্রেতা শ্যামা করিমকে ফারইষ্ট স্টকস্ অ্যান্ড বন্ডসের ব্যাংক হিসাব থেকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমির দাম পরিশোধ করা হয়েছে। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে, একই সময়কালীন ফারইষ্ট হতে ফিল্ডের উদ্ধর্তন অনেকে চাকুরী ছেড়ে আজ হাজার কোটি টাকার প্রতিষ্ঠান গড়েছেন এবং সেইসব প্রতিষ্ঠানে ফারইষ্ট সংশ্লিষ্ট অনেকেই চাকরীও করছেন। খালেক একা দায়ী নয়, একক ভাবে এসব দুর্নীতি হয়নি। সেসব কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে অনেকে মনে করছেন।

ক্রাইম ডায়রি/ ক্রাইম