লাইট ক্রয়ে দূর্নীতিঃ হাসপাতাল পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা

Corruption in light purchase: Case against hospital director

লাইট ক্রয়ে দূর্নীতিঃ হাসপাতাল পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা

আরিফুল ইসলাম কাইয়ুমঃ

স্বাস্থ্য খাতে দূর্নীতি নিয়ে যখন তোলপাড় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ পুরো দেশ তখনই তথ্যবোমা ফাটল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি বড়মাপের অনিয়মের। এটা ঠিক অনিয়ম বলা যায়না; বলা যায় বড়মাপের দূর্নীতি। বালিশ দূ্নীতি,পর্দা দূর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ের দূর্নীতি সম্পর্কে ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।  এবার খোঁদ আলো নিয়ে দূর্নীতি।।  ঠিক যেন বাতির নিচেই অন্ধকার। সম্প্রতি, রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ও অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়াসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গভীর অনুসন্ধানে এবং হাসপাতালের কার্যাদেশ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৮টি ওটি লাইট কেনাতে ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা।  অর্থাৎ, একটি ওটি লাইট ক্রয়ে ব্যয় হয়েছে ৭৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা দরে। এই দূর্নীতির সাথে জড়িত অন্যরা হলেন- হাসপাতালের বাজারদর কমিটির চার সদস্য নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সৌমিত্র সরকার এবং নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান ডা. রতন দাশগুপ্ত। অক্টোবর ২৯,২০২০ইং বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান বিভাগীয়ভাবে এ মামলা দায়ের করেন। 

কি বলা হয়েছে মামলার অভিযোগেঃ------ অভিযোগে বলা হয়েছে, উপরিল্লেখিত ৩ জনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা, ১৯৭৯ পরিপন্থী এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩ (খ), ও ৩ (ঘ) বিধি মোতাবেক অসদাচরণ ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হলো। একই সঙ্গে কেন বিধিমালার অধীনে যথোপযুক্ত দণ্ড প্রদান করা হবে না সে বিষয়ে নোটিশ প্রাপ্তির ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের নিকট কারণ-দর্শানোর নির্দেশ প্রদান করা হয়। এছাড়া ব্যক্তিগত শুনানি চাইলে তাও জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়।      গভীর অনুসন্ধানে ও  সূত্র মতে জানা গেছে,  হাসাপাতালের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে হাসপাতালের জন্য ৮টি অপারেশন থিয়েটার (ওটি) লাইট (দাম ৮০ লাখ টাকা) প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে ক্রয় করা হয়েছে।  এক্ষেত্রে সরকারের ৪ কোটি ৫৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা অর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে।

একই সঙ্গে অর্থবছরে ২টি কোবলেশন মেশিন প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে ক্রয় করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ৭৮ লাখ টাকার অর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে। এছাড়া একই অর্থবছরে ২টি এ্যানেসথেশিয়া মেশিন প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে ক্রয় করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ১ কোটি ১৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা অর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে।

এসব আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের ৬ কোটি ৪০ লাখ ৩১ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

সূত্র মতে, তদন্ত কমিটি ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর হাসপাতাল পরিদর্শন করে। এ সময় অভিযোগ ও কাগজপত্র পরীক্ষা করা হয় এবং হাসপাতাল পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য নেয়া হয়। তদন্ত কমটি ক্রয় পরিকল্পনার সঙ্গে সংযুক্ত তালিকায় দেখেন, ওটি লাইটের চাহিদা রয়েছে ২০টি। আরসিএস এন্টারপ্রাইজ থেকে দুটি ওটি লাইট কেনা হয় এক কোটি ৫৯ লাখ ৭০ হাজার টাকায়। প্রতিটির ক্রয়মূল্য ৭৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

কার্যাদেশ থেকে দেখা যায়, কেনা হয়েছে আটটি ওটি লাইট। এতে ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, ২০১৮ সালে যন্ত্রপাতিসহ একটি কোবলেশন মেশিন কেনা হয় ৯৬ লাখ টাকায়। আরেকটি ২৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকায়। যদিও প্রাইস গাইডলাইনে এর দাম ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৩৯ হাজার ৩০০ টাকা। 

এ সংক্রান্ত কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখা গেছে, আরসিএস এন্টারপ্রাইজ থেকে কোবলেশন মেশিন কেনা হয়েছে।

কার্যাদেশে দেখা গেছে, ‘কোবলেশন মেশিন উইথ আল স্ট্রান্ডার্ড এক্সেসোরিস’ একটি কেনা হয়েছে ৯৬ লাখ টাকায়। এর অরিজিন ইউএসএ উল্লেখ করা হয়েছে। আরেকটি কেনা হয়েছে ‘কোবলেশন সিস্টেম ফর ইএনটি সার্জারি’ ২৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকায়। এটিরও অরিজিন ইউএসএ। পরিচালকের বক্তব্য সর্বনিম্ন দরদাতা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। 

প্রাইজলিস্টে ইউনিট মূল্য সর্বোচ্চ ১৬ লাখ টাকা। দুটি মেশিনে মূল্যের বিশাল পার্থক্য রয়েছে। 

পরিচালককে প্রশ্ন করা হলে তিনি তদন্ত কমিটিকে সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় পরিচালকসহ উল্লিখিত পাঁচজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার সুপারিশ করেছে।

গভীর অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৬ জানুয়ারি ২০২০ইং হিসাব বিভাগের জনৈক নাসিরকে দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত করা হলেও  ঐ সময় তাকে স্বপদে বহাল রেখেছে এসব দূর্নীতিবাজরা এবং তাকে দিয়েই ওই পদে অফিস করিয়েছে তারা।   তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীকে  লুটপাটের সুবিধার্থে তাকে লোকাল ওয়ার্ডে ম্যানেজার মেইনটেন্সের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ভয়াবহ একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে এই গ্রুপটি।   এদের আতংকে এই প্রতিষ্ঠানে বিগত অনেক বছর হলো কোন টেন্ডার হয়না বলে অভিযোগ করেছে হাসপাতালের সজ্জন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের দূর্নাম ঘুচতে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে  মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ক্রাইম ডায়রি //ক্রাইম