হাসপাতাল কোয়ার্টারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়নি
হাসপাতালের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, আপনারা শুধু এই হাসপাতাল চোখে দেখেন। সারাদেশেই তো হাসপাতাল গুলোর কোয়ার্টারে রুম ভাড়া দেয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে বক্ষব্যাধির হাসপাতালে নার্স সুপারভাইজার দয়া রাণী বৌদ্ধর কোয়ার্টারে গিয়ে দেখা যায়, তিনি এখনো ছয়টি রুম ভাড়া দিচ্ছেন। প্রতিজনের কাছ থেকে দৈনন্দিন ৫শত থেকে ৬শত টাকা করে ভাড়া নিচ্ছেন। তার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছেন দয়া রাণীকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
মো: হুমায়ন কবির
বক্ষ্যব্যাধি, ক্যান্সার ও কলেজ অফ নার্সিং মহাখালী হাসপাতালের কোয়ার্টারের সাথে অবৈধ স্থাপনা ও বাসা ভাড়া বহাল রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত চিঠি দিলেও টনক নড়েনি দখলকারীদের। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগিরা ভর্তি হতে না পেরে সরকারি কোয়ার্টার গুলোতে ভাড়া নিয়ে থাকেন। এছাড়াও রোগিদের সাথে থাকা আত্নীয় স্বজনরা কোয়ার্টার গুলোতে মাসিক বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। ভোগান্তির শিকার হয়ে নোংড়া পরিবেশে প্রতিদিন ৬শত টাকা করে ভাড়া দিয়ে দিনাতিপাত করছেন।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এর সাথে সম্পৃক্ত নেই দাবি করলেও বাসার মালিকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের কথামতে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে বাসা ভাড়া এবং স্থাপনা নির্মাণ করার সুযোগ নেই। তাদের যুক্তি হচ্ছে, প্রতিটি কোয়ার্টার কাদের নামে বরাদ্দ এবং কারা থাকেন সব খবরই কর্তৃপক্ষের কাছে আছে। তাছাড়া মাঝে-মধ্যে কোয়ার্টার গুলো ভিজিট করেন।
আর অবৈধ স্থাপনা গুলো গড়ে উঠেছে হাসপাতালের নাকের ডগায়। এসব কিছুই তো চলার পথে বড়ো স্যারেরা দেখেন। কথা গুলো নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন হাসপাতালের নিরীহ কর্মচারীরা। হাসপাতালের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, আপনারা শুধু এই হাসপাতাল চোখে দেখেন। সারাদেশেই তো হাসপাতাল গুলোর কোয়ার্টারে রুম ভাড়া দেয়া হচ্ছে। এতে তো রোগিরা ভাড়া নিয়েও স্বাচ্ছন্ধ বোধ করেন।
তাছাড়া এটাও একটি সেবা মূলক কাজ। ক্যান্সার হাসপাতালের আরেক কর্মকর্তার কাছে দালালদের সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন আপনার মতো আমিও শুনেছি। এ ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়ায় দলালদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছেনা। অপর এক কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন ধরে দালালরা সক্রিয়। অনেকবার চেষ্টা করেও হাসপাতাল গুলো দালাল মুক্ত পরিবেশ করা যাচ্ছেনা। এসব দালালরা কেউ বাইরের নয়। হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়, ওয়ার্ড মাস্টার ও নার্সরা সিন্ডিকেট করেই দালালে রূপান্তিরিত হয়েছে। তাদেরকে দমাতে অনেক বার পদক্ষেপ নিয়েও কোন কাজ হয়নি।
সরেজমিনে বক্ষব্যাধির হাসপাতালে নার্স সুপারভাইজার দয়া রাণী বৌদ্ধর কোয়ার্টারে গিয়ে দেখা যায়, তিনি এখনো ছয়টি রুম ভাড়া দিচ্ছেন। প্রতিজনের কাছ থেকে দৈনন্দিন ৫শত থেকে ৬শত টাকা করে ভাড়া নিচ্ছেন। তার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছেন দয়া রাণীকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে এসবের তোয়াক্কা করেনা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ব্যাক্তি দয়া রাণীর বাসায় অবাধে যাতায়াত করেন। তার পাওয়ার দেখিয়ে দয়া বলেন, আওয়ামী লীগ আমলেই আমাদের কিছু হয় নাই। এখন আমরা এসবের তোয়াক্কা করিনা। আপনি লিখে যা করতে পারেন করেন।
বেপরোয়া দয়া রাণীর আচারআচরণে কোয়ার্টারের অন্য সবাই অতিষ্ঠ। বাসায় নোংড়া পরিবেশের কথা জানতে চাওয়া হলে দয়া রাণী রেগে যান। তার বিষয়ে সকলের অভিযোগ মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বাড়তি রুম ভাড়া দিয়ে। দয়া রাণীর মতো বরাদ্দ পাওয়া সরকারি নার্সরা এই সুযোগটি দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করছেন। বিনিময়ে তারা মাসিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে ভাড়া পাচ্ছেন। অজ্ঞাত কারণে কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেননা।
অভিযোগ উঠেছে, কোর্য়াটার গুলোতে যারা থাকেন তাদের মধ্যে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেটের সাথে হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত থাকায় কোর্য়াটারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। এই স্থাপনা গুলো নিয়ন্ত্রণ করেন নার্স , ওয়ার্ড মাস্টার সহ বিশাল একটি সিন্ডিকেট। যে কারণে তাদের এই স্থাপনা গুলো এখন পর্যন্ত ভাঙ্গার বা উচ্ছেদ করার কোন পরিকল্পনা করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পতিত সরকারের ১৫ বছর শাসনামলে আমলে গড়ে উঠে এই অবৈধ স্থাপনা। এখনো তারা বহাল তবিয়তেই আছেন।
কলেজ অফ র্নাসিং মহাখালীতে মোঃ সোহেল র্দীঘদিন যাবৎ চাকুরী করেন। তিনি ছায়া বিথী নামের কোয়াটারে নিচ তলায় ছায়া বিথী-খ বাসায় বসবাস করেন। তার স্ত্রী গ্যাস্ট্রো লিভার হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ র্নাস হিসেবে চাকুরী করেন। তারা এই বাসায় র্দীঘদিন যাবৎ এক রুম ভাড়া দিচ্ছেন। এক রুম ভাড়া ছয় শত টাকা । মাস হিসেবে ভাড়া পান আঠার হাজার টাকা। সোহেলের স্ত্রী আরও বলেন, তিনি গ্যাস্ট্রো লিভার হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ র্নাস হিসেবে চাকুরী করেন। গ্যাস্ট্রো লিভার হাসপাতালের কোয়াটার থেকে হাসপাতাল অনেক দুরত্ব।
তাই তিনি তার স্বামির কলেজের কোয়াটারে বসবাস করেন। প্রতিনিধি সব তথ্য প্রমান নেওয়ার পর মোঃ সোহেল ও তার স্ত্রী কোন ভাবে সাংবাদিক বুজতে পেরে কিছুক্ষণ পর প্রতিনিধির পেছনে ছুটে এসে বলেন, ম্যাডাম আপনাকে সরি বলতে হলো, আমার ভাড়াটিয়া যারা রোগী সহ আছেন, তারা রুম ছেড়ে দিবেন না। তারা আর ও একমাস থাকবেন। আমরা আপনাকে ভাড়া দিতে পারছিনা। সোহেলের স্ত্রীর সাথে আরো একবার কথা বলে জানাযায়, তারা নিয়মিত ভাড়া দিয়ে আসছেন। কলেজ অফ র্নাসিং মহাখালীর কোয়ার্টারের অন্য সব বিল্ডিং গুলো হচ্ছে, শান্তি নীড়, পদ্ম নীড়, সংঙ্ক নীল, নবনীল, স্বপ্নীল সহ বিভিন্ন কোয়ার্টারে একই হারে গোপনে চলছে রুম ভাড়া বাণিজ্য। তবে এসব বিয়য়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবগত নয় বলে একটি সূত্র দাবি করেছেন।
বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সিনিয়র এক নার্স টিনসেট ঘর তৈরী করে ৫টি রুম ভাড়া দিয়েছেন। প্রতিদিন তিনশত টাকা করে ভাড়া নেয়া হচ্ছে। হাসপাতালের রোগির আত্নীয় স্বজনরা ভাড়া থাকেন বলে জানা গেছে। ওই নার্সের সাথে ভাড়ার বিষয়ে কথা হলে তিনি একমাসের টাকা অগ্রিম দিতে বলেন। এভাবে চলছে তাদের বাসা ভাড়ার নৈরাজ্য।
হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখার এক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, হাসপাতালের কোয়ার্টারের সাথে অবৈধ স্থাপনা এবং বাসা ভাড়া সম্পর্কে প্রত্যেকটি দপ্তরে দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালের কোয়ার্টার গুলোতেও চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে কোয়ার্টাারের বাসা ভাড়া ও অবৈধ স্থাপনা আগের তুলনায় বেশি বেড়েছে। এ বিষয় জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন এগুলো এভাবেই চলমান থাকবে। কেউ কিছু করতে পারবে না। আমরা সব কিছু ম্যানেজ করেই ভাড়া দিচ্ছি।
সরকারি হাসপাতালে পাশে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে মাসিক প্রায় ২০ লাখ টাকা অবৈধ ভাবে উপার্জনের অভিযোগ থাকলেও কর্তৃপক্ষ নিরব রয়েছেন। স্টাফদের জন্য তৈরীকৃত রুম গুলোও দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া দেয়া হচ্ছে। আবার গ্যাসের চুলায় রান্না করতে আলাদাভাবে রোগিদের নিকট হতে ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা করে নেয়া হয়। পাশাপাশি ক্যন্সার ও বক্ষ্যব্যাধি হাসপাতালে ঢুকার দুই পাশে ফুটপাতে প্রায় একশত দোকান পাট গড়ে উঠেছে। স্থানীয় মাস্তান, হাসপাতালের স্টাফ এবং প্রশাসন এই টাকা ভাগাভাগি করে খাচ্ছেন বলে অভিযোগ জানাগেছে। ফুটপাতের একজন দোকানি বলেন, আমরা গরীব মানুষ । পেটের দায়ে ফুটপাতে ব্যবসা করে দিনাতিপাত করছি। তবে টাকার বিনিময়ে দোকান করি। আমাদেরকে কেউ এমনিতেই দোকান করতে দিচ্ছেন এমন নয়। এদিকে রোগিদের আত্নীয় স্বজনরা জানান, গলাকাটা দাম নেয়া হয়। কেউ কথা বললে সবাই মিলে পাকরিয়ে ধরে। অনেক রোগির স্বজনরা দৈনন্দিন তাদের লাঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।
কলেজ অফ নার্সিং মহাখালির অধ্যক্ষ মদিনা খাতুন এর সাথে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন এ ব্যাপারে চিঠি দেয়া হয়েছে। আমি নিজেও কোয়ার্টার গুলো পরিদর্শন করেছি। বক্ষব্যাধি হাসপাতালে প্রফেসর ডাঃ মোঃ খাইরুন আনাম, পরিচালক ও ডাঃ মোঃ আব্দুল্লাহ আল মেহেদী, চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রণালয়ে মিটিং এ থাকার কারণে তাদের মন্তব্য জানা যায়নি।
গোয়েন্দা ডায়রি// অপরাধ