সমুদ্রে জাগছে চড়,বাড়ছে দেশের আয়তনঃ নতুন সম্ভবনায় প্রিয় বাংলাদেশ

বঙ্গোপসাগরে দুই-তিন বছর ধরে জেগে থাকা এসব দ্বীপখণ্ড ভরা জোয়ারেও আর তলিয়ে যাচ্ছে না, বরং দিন দিন বেড়ে চলছে এর আয়তন।

সমুদ্রে জাগছে চড়,বাড়ছে দেশের আয়তনঃ নতুন সম্ভবনায় প্রিয় বাংলাদেশ
ছবি - অনলাইন হতে সংগৃহীত
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। গত চার দশকে বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে বসতবাড়ি, স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট, শিল্পকলকারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে কৃষিজমি ব্যবহৃত হওয়ায় তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। দেশে এখন চাষযোগ্য জমির অপ্রতুলতা যেমন দেখা দিচ্ছে তেমন শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি পাওয়া যাচ্ছে না। সাগর প্রান্তে জমি উদ্ধার করা সম্ভব হলে এ সংকট থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাবে।
শরীফা আক্তার স্বর্নাঃ

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে যখন বাংলাদেশের বিরাট অংশ সাগরে নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, ঠিক সে সময়েই বঙ্গোপসাগরের বুকে দেখা দিয়েছে আরেক বাংলাদেশের হাতছানি। সেখানে সমুদ্রের অথৈ জলে প্রাকৃতিকভাবেই বিশাল বিশাল চর জেগেছে, গড়ে উঠেছে মাইলের পর মাইল ভূখণ্ড। দীর্ঘদিন ধরে শুধুই ‘ডোবা চর’ হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকটি চরভূমি ইতিমধ্যে স্থায়ী ভূখণ্ডে পরিণত হয়েছে। সেসব স্থানে জনবসতিও গড়ে উঠেছে। একই ধরনের আরও প্রায় ২০টি ‘নতুন ভূখণ্ড’ এখন স্থায়িত্ব পেতে চলেছে। বঙ্গোপসাগরে দুই-তিন বছর ধরে জেগে থাকা এসব দ্বীপখণ্ড ভরা জোয়ারেও আর তলিয়ে যাচ্ছে না, বরং দিন দিন বেড়ে চলছে এর আয়তন।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ভূমির ক্ষয় ও ভাঙ্গন, লবণাক্ততা বৃদ্ধির মতো পরিবেশগত বিপর্যয়ের ফলে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠী ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে মেঘনা নদী হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রাপথে প্রচুর পরিমাণে পলি বহন করে যা উপকূলের কাছাকাছি ক্রমান্বয়ে জমা হয়ে নদী ও বঙ্গোপসাগরের তলদেশের উচ্চতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন চরের সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়ায় গত দুই দশকে দুই হাজার বর্গকিলোমিটারের নতুন চর সৃষ্টি হয়েছে।

নদীবিধৌত পলি জমছে বঙ্গোপসাগরে। সেখানে সৃষ্টি হয়েছে জাহাইজ্যারচর, ভাসানচর, উরিরচর নামের দ্বীপ। এ চরগুলোর মধ্যে জাহাইজ্যারচর ও ভাসানচর দিনে দিনে বিস্তৃত হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে এ দুই চর সন্দ্বীপের সঙ্গে মিশে সৃষ্টি হচ্ছে বিশাল এক দ্বীপাঞ্চল। ইতোমধ্যে ভাসানচর ও জাহাইজ্যারচর সন্দ্বীপের সঙ্গে মিশে যাওয়ার প্রবণতা প্রবলভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। মহাকাশ প্রযুক্তির প্রয়োগে এক গবেষণায় এমনই নতুন পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে। বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) সম্প্রতি এ গবেষণা পরিচালনা করে।

স্পারসোর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মাহমুদুর রহমান গনমাধ্যমকর্মী বলেন, আমরা স্যাটেলাইট ছবি থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করি। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। জাহাইজ্যারচর ২০ বছরে অনেক বড় হয়ে গেছে। এটি আগে অনেক ছোট ছিল। ২০০০ সালের ছবিতে ভাসানচর দেখাই যায় না। অথচ পরবর্র্তী সময়ে এটি সৃষ্টি হয়ে দিনে দিনে বড় হচ্ছে এবং একসময় এগুলো আলাদা আলাদাভাবে ছিল।

কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ধীরে ধীরে জাহাইজ্যারচর, ভাসানচর সন্দ্বীপের সঙ্গে মিশে একটা বড় দ্বীপের অংশ হয়ে যাচ্ছে। আমরা জোয়ারের সময়েরও ছবি নিয়েছি। সেখানেও এগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তিনটি দ্বীপই এখন মোটামুটিভাবে মিশে গেছে। এগুলোর মাঝে ছোট ছোট কিছু চ্যানেল আছে; কিন্তু সেগুলো বেশ নগণ্য। স্যাটেলাইট ছবি বা মানচিত্র দেখলেও বোঝা যায়, এগুলো এখন একীভূত হয়ে গেছে।

এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরও বলেন, সরকার দ্বীপগুলোর বিষয়ে আরও পরিকল্পনা করতে পারে। এগুলোকে কীভাবে আরও স্থায়ী রূপ দিয়ে কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। তার জন্য যদি কেনো কৃত্রিম স্থাপনা তৈরিরও প্রয়োজন হয়, সে বিষয়গুলো ভেবে তিনটি দ্বীপকে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা হতে পারে। কারণ, এখানে জায়গার পরিমাণ অনেক।

এ গবেষণায় দেখা যায়, তিনটি চর মিলে ২০২২ সালে এলাকাটির মোট আয়তন প্রায় ৭২১ বর্গকিলোমিটার। যার মধ্যে সন্দ্বীপ ২৬৭, ভাসানচর ৮০, জাহাইজ্যার চর ২৩১ এবং জেগে ওঠা ভূমি ১৪২ বর্গকিলোমিটার। গবেষণায় আরও বলা হয়, মেঘনা মোহনার মুখে চরগুলো গঠনের পর থেকে প্রাকৃতিকভাবেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এসব ভূমির আয়তন। বঙ্গোগসাগরের এই অঞ্চলগুলোর ২০০০, ২০১০, ২০২০ এবং ২০২২ সালের স্যাটেলাইট ছবি পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট হয়, দ্বীপগুলোয় পলি জমে জমে নানাভাবে পরিবর্তীত হয়ে বর্তমানে বড় ভূখণ্ড সৃষ্টি হচ্ছে। গবেষণায় আরও বলা হয়, দ্বীপগুলো স্থিতিশীল।

বাংলাদেশের আয়তন বাড়ছে। সাগরপ্রান্তে জমি উদ্ধারের ফলে এ সাফল্য অর্জিত হচ্ছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন নদীর মোহনায় যে চর পড়ছে তা সুপরিকল্পিতভাবে সুরক্ষা ও উদ্ধার করা হলে অন্তত ১৫ হাজার কিলোমিটার ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
যেসব এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে চর জেগে উঠছে সে এলাকায় ক্রসবাঁধ বেঁধে ভূমি উদ্ধার এবং বনায়নের মাধ্যমে তা স্থায়ীকরণ সম্ভব হবে। নেদারল্যান্ডস এ পদ্ধতিতে বিপুল পরিমাণ জমি সাগর থেকে উদ্ধার করেছে। বাংলাদেশকেও তারা এ ব্যাপারে আর্থিক সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করছে।
কক্সবাজার থেকে ৩০ কিলোমিটার সাগরের মধ্যে জেগে উঠেছে খ- খ- চর। সে চরে বেড়ে উঠছে সুন্দরবনের আদলে নতুন বন। বেড়ে উঠছে নতুন পর্যটন এলাকা। নতুন চর জাগছে আর সে চরে হচ্ছে বনায়ন। সাগরে কিছু ভেঙে যাচ্ছে আবার কিছু জমি জেগে উঠছে। ভাঙা-গড়ার মধ্যদিয়েই গড়ে উঠছে এ প্যারাবন। সুন্দরবনের মতোই এ বনের ভেতরে ছোট ছোট নদী। নদীর দু’পাশে জঙ্গল।
নতুন এ বাংলাদেশ হবে বন্যপ্রাণীর জন্য অভয়ারণ্য। সমুদ্রের মধ্যে ওই এলাকায় প্রতিনিয়ত চরের আয়তন বাড়ছে। নতুন চর জাগছে। যেখানেই চর জাগছে সেখানেই জন্মাচ্ছে নানা গাছ। জেগে উঠছে ম্যানগ্রোভ। কোথাও বন বিভাগের সহায়তায়, কোথাও প্রাকৃতিকভাবে। মহেশখালী, সোনাদিয়া, শাপলাপুর, বড় মহেশখালী, ঘটিভাঙা, বলঘাটা, খোয়ানট এলাকাজুড়ে এই বনভূমি। বনের পূর্ব দিকে প্রস্তাবিত কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং কুহেলিকা নদী। উত্তরে উজানটিয়া নদী। পশ্চিম ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।
ভবিষ্যতের অপার সম্ভাবনার এই বন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অর্থনীতিতে যেমনি, তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এটি দেশের বনজ সম্পদের অন্যতম উৎস হতে চলেছে। সুন্দরবন থেকে যেসব কাঠ শিল্পে জোগান দেওয়া হয়, সেসব কাঠ এখান থেকেও ভবিষ্যতে সংগ্রহ করা যাবে।

সুন্দরবন যেমন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করছে, তেমনই এ বনও দেশের পূর্বাঞ্চলকে ভবিষ্যতে রক্ষা করবে। হতে পারবে পুষ্টি উৎপাদক, পানি শুদ্ধকারক, পলি সঞ্চয়কারী, ঝড় প্রতিরোধক, উপকূল স্থিতিকারী, সম্পদের আধার। এমনকি নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র।
বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৬৫ সালের দিকে বন করার লক্ষ্যে এ অঞ্চলে প্রথম গাছ লাগানো হয়। শুরু হয়েছিল কেওড়া দিয়ে। সমুদ্রের পানিতে লবণ বেড়ে যাওয়ায় এখন কেওড়া গাছ আর বাড়ছে না। বেশি হচ্ছে বাইন। বন বিভাগ কিছু এলাকায় লাগিয়েছে গোলপাতা। গোলপাতা ভালোই বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া আছে ছৈইলা ও ঝাউ। রয়েছে কেয়াকাটা গাছ। মাত্র ৫১ বছরে একেবারে নতুন বনাঞ্চল তৈরি হয়েছে এখানে।

বর্তমানে ২৪ হাজার একর জমিতে এই বন আছে। ১৫ বছরে বনের আয়তন হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ২০০০-০১ সালে এখানে বনের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার একর। বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, বেশ কয়েক বছর আগে একটি ছোট্ট চরের আড়াই একর জমিতে চার হাজার ৪৪৪টি গাছ লাগানো হয়েছিল। সেই চরের গাছের বীজ থেকে প্রাকৃতিকভাবে এখন হয়েছে প্রায় ২০ হাজার গাছ। নতুন করে ২৭১ একর জমিতে গাছ লাগানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। গত চার দশকে বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে বসতবাড়ি, স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট, শিল্পকলকারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে কৃষিজমি ব্যবহৃত হওয়ায় তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। দেশে এখন চাষযোগ্য জমির অপ্রতুলতা যেমন দেখা দিচ্ছে তেমন শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি পাওয়া যাচ্ছে না। সাগর প্রান্তে জমি উদ্ধার করা সম্ভব হলে এ সংকট থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাবে।

সাগর প্রান্তে নিঝুম দ্বীপের আশপাশের জমি উদ্ধার করে বনায়ন এবং পর্যটন জোন গড়ে তোলা হলে পর্যটন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া অবস্থার অবসান ঘটানো সম্ভব হবে। উদ্ধারকৃত জমিতে বনায়ন করা হলে ভূমিক্ষয় যেমন রোধ করা সম্ভব হবে, তেমন উপকূলবর্তী এলাকা ঘূর্ণিঝড় ও টর্নেডোর আঘাত থেকে রক্ষা পাবে।

স্বাধীনতার পর নিঝুম দ্বীপে বনায়ন এবং মাত্র কয়েকটি হরিণ ছেড়ে দেওয়া হয়। এ এলাকায় হরিণের সংখ্যা এখন প্রায় ২৫ হাজার এবং বছরে অন্তত ২০ হাজার হরিণ রপ্তানি করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সমৃদ্ধ করা সম্ভব হবে।
আরেকটি বিষয় হলো, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বাংলাদেশের দাবিই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রজয়ে বাংলাদেশ ন্যায্যতার ভিত্তিতে ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক এলাকা ও তদুর্ধ মহীসোপান এলাকা এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্রজয়ে বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার ৬০২ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গ কিলোমিটারের সমুদ্রসীমা বাংলাদেশের সঙ্গে যোগ হয়েছে।
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় অবস্থিত গ্যাস ব্লকগুলোতে ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার গ্যাসব্লকের ১০টি ভারত ও ১৮টি মিয়ানমার দাবি করে আসছিল। এসব ব্লকে বিভিন্ন সময় দেশের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান চালাতে গেলেও সম্ভব হয়নি।

ভারত ও মিয়ানমারের বাধার কারণে ফিরে আসতে হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক আদালতের সমুদ্রবিষয়ক রায়ে এ বাধার অবসান ঘটেছে।
ভারতের সঙ্গে আটটি ও মিয়ানমারের সঙ্গে ১৩টি তেল-গ্যাস ব্লক জিতেছে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্জিত সমুদ্রসীমায় আনুমানিক ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) আর ভূ-সীমায় মজুদ রয়েছে ১২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। বর্তমানে প্রতি বছর দেশে এক টিসিএফ গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। সে হিসাবে আগামী ১২ বছর পর দেশে গ্যাসের সংকট দেখা দেবে। সমুদ্রসীমায় গ্যাস আবিষ্কৃত হলে এ সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে সমুদ্র অর্থনীতির ধারণা বাস্তবায়নে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বিমান ও পর্যটনবিষয়ক মন্ত্রণালয় সহযোগিতা কাঠামো প্রস্তুতকরণে যৌথভাবে কাজ করছে। প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হওয়ায় সামুদ্রিক মানচিত্র প্রণয়নের পাশাপাশি সম্পদ আহরণ ও সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তার বিষয়টিকে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। একই সঙ্গে কীভাবে সমুদ্র সম্পদ যথাযথ কজে লাগানো হবে সে বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের এ অঞ্চলে প্রাণিজ সম্পদের পাশাপাশি গ্যাস হাইড্রিড, জিরকন, ইলেমেনাইট, ম্যাগনেটাইটসহ বিভিন্ন মূল্যবান খনিজ সম্পদের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

কারণ প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারত বঙ্গোপসাগরে নিজ নিজ সীমানায় এ ধরনের খনিজ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে। এ কারণে ওই দেশগুলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমুদ্র সম্পদের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা নিজ খরচে কিংবা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে সমুদ্র সম্পদ আহরণ করছে। ভারত তার জাতীয় বাজেটে ২শ কোটিরও বেশি রুপি সমুদ্র সম্পদ আহরণে বরাদ্দ রেখেছে। আর মিয়ানমার চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে তার সমুদ্রসীমার মধ্যে থাকা সম্পদ আহরণে কাজ করছে।
শুধুই ভারত আর মিয়ানমারই নয়, আমাদের সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। নতুনভাবে উদ্ধারকৃত সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাস ও মৎস্য সম্পদ রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব করছে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতিবছর দুই থেকে তিন বিলিয়ন টন পলি আসে। গড়ে যার তিনভাগের একভাগ আমাদের নদীনালা, খালবিলে পড়ে যায়। আরেক ভাগ সমুদ্রে পুরোপুরি হারিয়ে যায়। আর বাকি একভাগ সমুদ্রতীরাক্রান্ত এলাকায় জমা হয়। এই জমার পরিমাণ এখন অনেক বেশি। এটি অব্যাহত থাকলে ছোট ছোট মগ্নচড়া জেগে উঠবে।

আর যে চড়াগুলো আছে, সেগুলো একটার সঙ্গে আরেকটি যুক্ত হতে থাকবে। ভবিষ্যতে তাই অনেক চর বা ভূমি জেগে উঠতে পারে। এর ইতিবাচক দিক হলো, আমাদের আরও অনেক ভূমি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এর পাশাপাশি অনেক চ্যালেঞ্জও আছে। যেহেতু প্রাকৃতিক নানা কারণে এগুলো ক্ষয় হয়, সেহেতু এগুলোকে টিকেও থাকতে হবে।

প্রাথমিকভাবে নতুন জেগে ওঠা চর ও দ্বীপকে বনায়নের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর মাধ্যমে নতুন চর ও দ্বীপগুলোয় ২০/৩০ বছরের মধ্যে ভূমির মান উন্নত হবে এবং দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবে। পরবর্তীতে এ ভূমি প্রয়োজন অনুসারে পরিকল্পিত আবাসন, শিল্পায়ন ও পর্যটনের কাজে ব্যবহার করা যাবে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এরইমধ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলে জেগে ওঠা নতুন চর ও দ্বীপে বনায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। নতুন চরে বনায়নের সময় লবণ সহিষ্ণু জাতের ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানো হবে। পুরনো চরে অন্যান্য গাছের সঙ্গে পাখিদের খাদ্যের যোগান দিতে নিম, বটসহ বিভিন্ন ফলের গাছ লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

ক্রাইম ডায়রি/জাতীয়/সুত্রঃ স্পারসো,বনবিভাগ,পরিবেশ অধিদপ্তর ও অনলাইন মিডিয়া