ব্যাংকিং চ্যানেলের বাহিরে শাহজালালে প্রতিদিন পাচার হয় কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা

সোমবার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালায়। তখন পাচারকারী চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়।

ব্যাংকিং চ্যানেলের বাহিরে শাহজালালে প্রতিদিন পাচার  হয়  কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত
অপরাধে জড়িতরা অবৈধভাবে ক্রয়কৃত ডলার, ইউরো, রিয়াল, রিঙ্গিত, পাউন্ড, দিনার ও অন্যান্য ফরেন কারেন্সি সংগ্রহপূর্বক বিদেশি মুদ্রা পাচারকারী, বিদেশি মুদ্রার কালোবাজারি ও বাংলাদেশ হতে বিদেশে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারকারী দুর্নীতিবাজদের অবৈধভাবে সরবরাহ করে মর্মে দুদকের অভিযানে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়। 
ক্রাইম ডায়রি ডেস্কঃ
বিদেশ ফেরত প্রবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রা এক্সচেঞ্জ করার পর শত শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকিং চ্যানেলে না দেখিয়ে বিদেশে পাচারের অভিযোগ উঠেছে খোদ ব্যাংক শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে অবস্থিত বেশ কয়েকটি ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সুত্রে জানা গেছে, এ কাজের সঙ্গে জড়িত হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরের জনতা, সোনালী, অগ্রণী, মিচুয়াল ট্রাস্ট, পূবালী, প্রবাসী কল্যাণ, যমুনা ব্যাংকসহ কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান। ফেব্রুয়ারী ৬, ২০২৪ইং মঙ্গলবার বিকালে অর্থ পাচারের এ তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সচিব মাহবুব হোসেন।

তিনি গণ মাধ্যম কর্মীদের বলেন, সোমবার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালায়। তখন পাচারকারী চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রবাসী শ্রমিকরা বিমানবন্দর দিয়ে আসার সময় মূল্যবান রেমিট্যান্স নগদ ও বৈদেশিক মুদ্রায় আনেন। তা ব্যাংকিং চ্যানেলে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু অসাধু ব্যাংকাররা ব্যাংকের টাকা ব্যবহার করে তা ব্যাংকিং চ্যানেলে সংগৃহীত না দেখিয়ে নিজেরাই সেটা কিনে মার্কেটে বিক্রি করে দেন। যা পরে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আবার বিদেশে পাচার হয়ে যায়।

দুদক সচিব জানান, এ অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে প্রতিদিন শত কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে ব্যাংকিং খাত বঞ্চিত হচ্ছে। এই অনিয়মে জড়িত বিভিন্ন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তা ও কিছু মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান। দুই বিমানবন্দরে বৈদেশিক মুদ্রা কালাবাজারি চক্রের সন্ধান পেয়েছে দুদক। এ চক্র দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে অর্থনৈতিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। গোয়েন্দা সূত্রে তথ্য পেয়ে এবং সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়।

তিনি আরও বলেন, সাধারণত প্রতিদিন হাজার হাজার প্রবাসী কর্মজীবী ও বিদেশ হতে বাংলাদেশে ভ্রমণকারী বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশে আসেন। তারা তাদের সঙ্গে আনা বিদেশি মুদ্রা বিমানবন্দরে থাকা ব্যাংকের বুথ ও মানি এক্সচেঞ্জারে দেশীয় মুদ্রা বা বাংলাদেশি টাকায় এনকেশমেন্ট করে থাকেন। আইন, বিধি ও নিয়ম অনুযায়ী ফরেন কারেন্সি এনকেশমেন্ট ভাউচার এনকেশমেন্টকারীকে দিতে হয়। কিন্তু ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জাররা ভাউচার না দিয়ে বা জাল ভাউচার দিয়ে সরাসরি ফরেন কারেন্সি গ্রহণ করে তার বিনিময়ে টাকা দিয়ে দেয়। এছাড়াও তারা স্বাক্ষরবিহীন, ভুয়া ভাউচার বা এনকেশমেন্ট স্লিপ প্রদান করেন। এই বিদেশি মুদ্রার ক্রয়কারী ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মূল হিসাবে বা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত অ্যাকাউন্টে অন্তর্ভুক্ত করেন না। ফলে বিদেশি মুদ্রার কেন্দ্রীয় রিজার্ভে এসব বিদেশি মুদ্রা যুক্ত হয় না। যার ফলে বাংলাদেশ বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি বা সংকটের সৃষ্টি হয়। 

তিনি বলেন, দুদকের অভিযানে বিমানবন্দরে অবৈধভাবে বিদেশি মুদ্রায় ক্রয়-বিক্রয়ে ও মানি লন্ডারিংয়ে জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, মিচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান, যথা- এভিয়া মানি এক্সচেঞ্জার ও ইমপ্রেরিয়াল মানি এক্সচেঞ্জার জড়িত থাকার বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। অপরাধে জড়িতরা অবৈধভাবে ক্রয়কৃত ডলার, ইউরো, রিয়াল, রিঙ্গিত, পাউন্ড, দিনার ও অন্যান্য ফরেন কারেন্সি সংগ্রহপূর্বক বিদেশি মুদ্রা পাচারকারী, বিদেশি মুদ্রার কালোবাজারি ও বাংলাদেশ হতে বিদেশে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারকারী দুর্নীতিবাজদের অবৈধভাবে সরবরাহ করে মর্মে দুদকের অভিযানে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়। 

জানা গেছে, দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযানকালে ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জার কর্তৃক এনকেশমেন্ট  স্লিপ ব্যতীত কারেন্সি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ, একাধিক ভুয়া ভাউচার ও স্বাক্ষরবিহীন ভাউচার সংগ্রহ করেছে। এছাড়া অবৈধভাবে কারেন্সি ক্রয়-বিক্রয়, পাচার ও কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ অভিযান পরিচালনাকারী টিম সংগ্রহ করেছে। 

দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, এ ঘৃন্য কাজে জড়িত সন্দেহভাজন ব্যাংক কর্মকর্তারা কমিশনের নজরদারিতে রয়েছেন। একই সাথে তাদের মদদদাতা ও সহযোগীদের বিষয়েও কমিশনের নির্দেশে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কমিশন আইন ও বিধি অনুযায়ী পরবর্তী আইনি ব্যব্যস্থা গ্রহণ করা হবে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

ক্রাইম ডায়রি/ক্রাইম