ইরান ইজরায়েল সংঘাত: কি হতে যাচ্ছে পরবর্তী পদক্ষেপ:৩২ দেশে ইজরায়েলি চিঠি
মুসলিম বিশ্ব তবুও ইরানকে বাহবা দিচ্ছে যদিও ইরানের এই আক্রমন নিজস্ব প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থার একটি অংশ। প্রশ্ন উঠেছে এই আক্রমনের প্রতিউত্তরে কি হতে যাচ্ছে বিশ্বে?
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেন, আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, এমনকি ক্ষুদ্র ইরানি স্বার্থের বিরুদ্ধে যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর, বিস্তৃত ও বেদনাদায়ক জবাব দেওয়া হবে।
অনলাইন ডেস্ক:
টানটান উত্তেজনায় পুরো বিশ্ব। ফিলিস্তিনের নিরীহ মুসলিমদের উপর অতর্কিত গণহত্যা চালিয়ে সারাবিশ্বের নিন্দা তালিকায় শীর্ষে থাকা ইহুদীবাদী ইজরায়েল ইরানের সামরিক কমান্ডারদের হত্যারও সাহস দেখিয়েছে। ফলশ্রুতিতে প্রতিশোধ নিতে এবং নিজেদের অবস্থান জানান দিতে ইজরায়েলে আক্রমন চালিয়েছে ইরান। মুসলিম বিশ্ব তবুও ইরানকে বাহবা দিচ্ছে যদিও ইরানের এই আক্রমন নিজস্ব প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থার একটি অংশ। প্রশ্ন উঠেছে এই আক্রমনের প্রতিউত্তরে কি হতে যাচ্ছে বিশ্বে? ইসরাইলে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ধনী রাষ্ট্রদের জোট জি-৭। এই তথ্য জানিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, আমি জি-৭ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। ইসরাইলে ইরানের হামলার বিষয়ে সবাই নিন্দা জানিয়েছে।খবর আলজাজিরার।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে সুনাক আরও বলেন, আমরা আমাদের মিত্রদের পক্ষে জরুরিভিত্তিকে কাজ করব। একসঙ্গে আমরা সম্মিলিত পদক্ষেপ নেব। ইরান যেটি করেছে সেটি ঘৃনিত কাজ। জি-৭ কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সেদিকে ইঙ্গিত করে সুনাক বলেন, তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হতে পারে।ইরান ও দেশটির যাদের ওপর স্যাংশন দেওয়া হবে তাদের ক্ষেত্রে যেন নিষেধাজ্ঞার সর্বোচ্চ প্রভাব পড়ে সেটি নিশ্চিত করা হবে।
এদিকে ইসরাইলে হামলার ফল ইরানকে ভোগ করতে হবে বলে হুশিয়ার করেছেন দেশটির সামরিক বাহিনীর প্রধান হারজেই হেলেভি। তিনি বলেছেন, ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দেওয়া হবে।ইরানের হামলার তিন দিন পর তিনি এই হুঙ্কার দিলেন। খবর রয়টার্সের। ইরানের হামলার পর ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কী জবাব দেন সেটির অপেক্ষায় তেলআবিবের জনগণ।এই অঞ্চলে (মধ্যপ্রাচ্য) সংঘাত বাড়ার শঙ্কায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরাইলকে সংযত আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছে।
ইরানি হামলার পর সোমবার গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুবার যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।মূলত ইরানি হামলার কী জবাব দেওয়া যায় সেটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই তিনি এই বৈঠক করেন। ইসরাইলের মিলিটারি চিফ অব স্টাফ হার্জেই হ্যালেভি বলেছেন, ইসরাইল ইরানের হামলার জবাব দেবে। তিনি এর বেশি কিছু বলেননি।
নেভাদান বিমান ঘাঁটিতে মঙ্গলবার তিনি আরও বলেন, ইসরাইলের ভূখন্ডে এতো এতো ক্ষেপণাস্ত্র, ক্রস ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার জবাব দেওয়া হবে। ইরান ইস্যুতে তৃতীয়বার বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ইসরাইলের মন্ত্রিসভা। মঙ্গলবার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে জানিয়েছে এক ইসরাইলি কর্মকর্তা। মঙ্গলবার বৈঠক আয়োজনের কথা নিশ্চিত করলেও সুনির্দিষ্ট সময় জানাননি ওই কর্মকর্তা। এতে ইরানি হামলার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হবে। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
ইসরাইলকে লক্ষ্য করে শনিবার রাতে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানের হামলার পর ইসরাইলি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার তৃতীয় বৈঠক হবে এটি। মন্ত্রিসভার বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেন, আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, এমনকি ক্ষুদ্র ইরানি স্বার্থের বিরুদ্ধে যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর, বিস্তৃত ও বেদনাদায়ক জবাব দেওয়া হবে। এর আগে সোমবার ইসরাইলি সেনাপ্রধান হারজি হালেভি বলেছিলেন, ইরানের হামলার পালটা পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবে নেওয়া হবে।
ইরানের হামলার জবাবে কী পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে সে বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে যুদ্ধবিষয়ক কেবিনেটের সঙ্গে তিন দফা বৈঠক করেছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরাইলি কেবিনেট সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলো নিয়ে গভীর পর্যালোচনা করছে। তাদের সামনে কয়েকটি অপশন রয়েছে, সেগুলো নিন্মরূপ-
বিমান হামলা
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার জবাবে বিমান হামলা চালাতে পারে ইসরাইল। ইসরাইল ও তার মিত্রের কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিপরীতে ইরানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল। তাই বিমান হামলা ইসরাইলকে কৌশলগত সুবিধা এনে দিতে পারে, বিশেষত ইরানের রেভুল্যুশনারি গার্ডে ঘাঁটি ও দেশটির পরমাণূ গবেষণা কেন্দ্রে বিমান হামলা হলে সুবিধা পাবে তেলআবিব।
ইসরাইলের সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা, বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলার চেয়ে বিমান হামলা ইসরাইলের জন্য ভালো ফল বয়ে আনতে পারে।
চোরাগোপ্তা হামলা
ইরানের অভ্যন্তরে এর আগেও কয়েকবার চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছিল ইসরাইল। ওইসব হামলায় দেশটির বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।এই ধরনের গোপন হামলা ইরানের ভেতর-বাইরেও হতে পারে।
সাইবার আক্রমণ
ইসরাইল এর আগে বেশ কয়েকবার ইরানে সাইবার আক্রমণ করেছে। পেট্রল স্টেশনের স্থাপনা, শিল্পাঞ্চল ও পরমাণু স্থাপনায় এ ধরনের হামলা চালিয়েছিল।তেহরানের ফ্লাইট উঠানামা ও শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রে এমন হামলা ইসরাইলের জন্য ভালো ফল বয়ে আনতে পারে।
ইসরাইলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্য উত্তেজনা নতুন মোড় নিয়েছে। হামাস-ইসরাইলের যুদ্ধের মধ্যেই তেহরান-তেলআবিবের মধ্যে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এই অঞ্চলে।
উত্তেজনার মধ্যে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। খবর ব্লুমবার্গ ও রয়টার্সের। মঙ্গলবার ফোনকলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বলেন, ইসরাইলে ইরানের হামলার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সব পক্ষ সংযত আচরণ করবে এমন প্রত্যাশা আমার।সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, সীমান্ত উত্তেজনা এই অঞ্চলে সর্বনাশা পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। পুতিন আশা প্রকাশ করে বলেন, কোনো পক্ষই যুদ্ধাবস্থা তৈরি করবে না।
পুতিনকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইসরাইলের হামলার গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, হামলা সীমিত আকারে হয়েছে। আর আক্রমণের চিন্তা নেই ইরানের। দুই প্রেসিডেন্টই একমত হন বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাতের শেষ না হওয়া।দুই নেতাই অনতিবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আহ্বান জানান। তারা দুজন রাশিয়া-ইরান সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন। ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার করার বিষয়ে গুরুত্ব দেন তারা।
ক্রাইম ডায়রি/তথ্যসূত্র: আলজাজিরা/ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসমুহ