ভয়াবহ আগুনে পুড়ছে আমেরিকা: বোমা নিক্ষেপের সাথে তুলনা বাইডেনের

ইতোমধ্যে, দাবানলে পুড়ে গেছে ৫৮ মাইলেও বেশি এলাকা। মঙ্গলবার সবচেয়ে বড় দাবানল দেখা যায় প্যারাডাইস প্যালিসেডসে। ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কমপক্ষে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। উত্তর লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির আলটাডেনায় ইটন ফায়ারে কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। পুড়ে গেছে ২১ বর্গমাইলেরও বেশি এলাকা।

ভয়াবহ আগুনে পুড়ছে আমেরিকা: বোমা নিক্ষেপের সাথে তুলনা বাইডেনের
ছবি: অনলাইন হতে সংগৃহীত

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় লুটপাট করার কারণে এ পর্যন্ত ২৪ জনের বেশি লোককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং লুটপাট ঠেকাতে প্যাসিফিক প্যালিসেড ও ইটন এলাকায় রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। আইন অমান্যকারীকে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার ডলার জরিমানা করা হবে। লুটপাট ঠেকাতে প্রশাসনের পাশাপাশি কোথাও কোথাও অস্ত্র নিয়ে নিজেদের বাড়িঘর পাহারা দিচ্ছেন বাসিন্দারা।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গত চার দিন ধরে দাবানলে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস। এখনও পুড়ছে বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়িঘর। এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১১ জন। সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৩ লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ও স্থাপনা। পাঁচটি আলাদা আগুনের ঘটনায় ৩৭ হাজার একর এলাকা পুড়ে গেছে। পানির তীব্র সংকটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে ফায়ার বিভাগের কর্মীরা।
মাটি পানি, বাতাসের মতো পরিচিত একটি বস্তু হলো আগুন। আগুনকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দুটি লক্ষ্যে সৃষ্টি করেছেন- ১. পৃথিবীর মানুষের উপকার সাধনের লক্ষ্যে ২. পরপারে মানুষকে শাস্তি প্রদানের লক্ষ্যে। পৃথিবীর আগুন আর পরকালের আগুনের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্যও রয়েছে। যেমন, পৃথিবীর আগুন অপেক্ষা পরকালের আগুন ৭০ গুণ বেশি শক্তিশালী এবং সে আগুনের রঙ ভয়ানক কালো। আল কুরআনের ১৪৫ জায়গায় আল্লাহ তায়ালা আগুনের কথা উল্লেখ করেন। এর অধিকাংশ বক্তব্যই পরপারের আগুনকে ঘিরে।

সেই আগুনের উত্তপ্ততা স্পষ্টভাবে আঁঁচ করা পৃথিবীর মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।  তবে মাঝে মধ্যেই যখন আমরা অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্রের বিস্তিন্ন ভুমিতে আগুন লাগার ঘটনা দেখতে পাই তখন অন্তত: মুসলিম সম্প্রদায় কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন নির্দেশনার আলোকে ভয়াবহতা অনুমান করতে পারে। প্রচন্ড উত্তপ্ত ও ভয়ানক কালো রঙের আগুন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার অবাধ্য বান্দার জন্য প্রজ্বলিত রেখেছেন। প্রধানত: দুটি কারণে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে এ আগুনে নিক্ষেপ করবেন। প্রথমত, আল্লাহর একত্মবাদ অস্বীকার করা বা তার সঙ্গে অন্যকে অংশীদার স্থাপন করা। নবী-রাসূল, ফেরেশতা, পরকাল, আসমানি কিতাব, ভাগ্য, এসব বিষয় অস্বীকার করা। দ্বিতীয়ত, আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী হয়েও তার বিধিনিষেধ অমান্য করা। পক্ষান্তরে পৃথিবীতে আগুনকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নেয়ামত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, মানুষ তাদের প্রয়োজনে এ আগুন ব্যবহার করবে; কিন্তু মানুষের নীতি ও নৈতিকতার অবক্ষয় সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় ঘটে অগ্নিকান্ড। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এমন অঙ্গিকান্ড সত্যিকারের অর্থেই ভয়াবহ। 
ইতোমধ্যে, দাবানলে পুড়ে গেছে ৫৮ মাইলেও বেশি এলাকা। মঙ্গলবার সবচেয়ে বড় দাবানল দেখা যায় প্যারাডাইস প্যালিসেডসে। ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কমপক্ষে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। উত্তর লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির আলটাডেনায় ইটন ফায়ারে কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। পুড়ে গেছে ২১ বর্গমাইলেরও বেশি এলাকা।
এদিকে, লস অ্যাঞ্জেলেসজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি থাকায় বিপাকে পড়েছে বাসিন্দারা। প্যাসিফিক প্যালিসেডস এবং মালিবুতে সবচেয়ে বড় দাবানলের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে শুরু করেছেন ফায়ার বিভাগের কর্মীরা। মাত্র আট শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া আলটাডেনা এলাকায় ইটনের আগুন তিন শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার বিভাগের প্রধান জেসন শিলিঙ্গার।
তবে শুরু থেকেই তীব্র দমকা বাতাস, শুষ্ক আবহাওয়া ও পর্যাপ্ত পানির অভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়েছে ফায়ার বিভাগের কর্মীদের। কেনো পানি সংকট দেখা দিয়েছে শুক্রবার এ বিষয়ে স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে নগর পরিসেবা বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম। এ ছাড়া আগুনের সূত্রপাত কিভাবে হলো তা নিয়ে বাসিন্দারাও তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় লুটপাট করার কারণে এ পর্যন্ত ২৪ জনের বেশি লোককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং লুটপাট ঠেকাতে প্যাসিফিক প্যালিসেড ও ইটন এলাকায় রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। আইন অমান্যকারীকে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার ডলার জরিমানা করা হবে। লুটপাট ঠেকাতে প্রশাসনের পাশাপাশি কোথাও কোথাও অস্ত্র নিয়ে নিজেদের বাড়িঘর পাহারা দিচ্ছেন বাসিন্দারা।
এ পরিস্থিতিতে শুধু ফায়ার বিভাগ ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কাউকেই চলাচলের অনুমতি দেয়নি লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ। এ ছাড়া যেসব বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছেড়ে গেছেন তাদের এখনই নিজ এলাকায় না ফেরার অনুরোধ করা হয়েছে।
এদিকে, এই বিপর্যয়কে ‘যুদ্ধ ক্ষেত্র’র সঙ্গে তুলনা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। লুটপাটের বিষয়ে বাইডেন বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় লুটপাটের যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর এজন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলের ঘটনায় সম্ভাব্য কারণগুলো খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। দাবানলে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংস হয়ে গেছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
পাহাড়ি প্যাসিফিক প্যালিসেইডস এলাকায় জেমি লি কার্টিস ও বিলি ক্রিস্টালের মতো হলিউড তারকাদের বাড়ি। দাবানলে তাদের ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, প্যাসিফিক প্যালিসেইডসের পিয়েডরা মোরাডা ড্রাইভ এলাকার একটি বাড়ির পেছনে ঝোড়ো বাতাসময় ওই দাবানলের সূত্রপাত হয়েছে।


ন্যাশনাল ফায়ার প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে দাবানলের সূত্রপাত হওয়ার ক্ষেত্রে বড় একটি কারণ হলো বজ্রপাত। তবে ক্যালিফোর্নিয়ার আগুনের ক্ষেত্রে তেমন কিছু হয়নি বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলের শুরু হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির পূর্ব দিক থেকে। সেখানকার প্যালিসেইডস এলাকা বা ইটনের দাবানলকবলিত এলাকার আশপাশে বজ্রপাত হয়েছে বলেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ওই সব এলাকায় দাবানলে শত শত ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে।

১৯৯১ সালে অকল্যান্ড হিলসের দাবানলসহ ক্যালিফোর্নিয়ায় বড় বড় দাবানলের ঘটনায় তদন্ত করার অভিজ্ঞতা আছে জন লেন্টিনির। ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সায়েন্টিফিক ফায়ার অ্যানালিসিসের স্বত্বাধিকারী তিনি। লেন্টিনি বলেন, দাবানলের আকার পরিবর্তন হলেই যে এর কারণ নির্ধারণের জন্য তদন্তের ধরনে পরিবর্তন আনতে, হবে তা নয়।
লেন্টিনি আরও বলেন, এটা একসময় ছোট আকারের দাবানল ছিল। কোথায় দাবানলের শুরুটা হয়েছে, দাবানলের উৎস কী, তা নির্ধারণ, উৎসের আশপাশ খতিয়ে দেখা এবং এর কারণ নির্ধারণের দিকে বেশি মনোযোগ দেবে মানুষ।
এখন পর্যন্ত এ দাবানলের ঘটনায় অগ্নিসংযোগের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। বৈদ্যুতিক লাইন থেকেও আগুন লাগার ইঙ্গিত মেলেনি।
ক্যালিফোর্নিয়া পাবলিক ইউটিলিটিজ কমিশনের (সিপিইউসি) যোগাযোগ পরিচালক টেরি প্রসপার বলেন, দাবানলের ঘটনায় বৈদ্যুতিক কোনো কারণের যোগসূত্র থাকার আশঙ্কা করলে কর্তৃপক্ষকে ই–মেইলের মাধ্যমে কমিশনে জানাতে হয়। সিপিইউসির কর্মীরা তখন এ ক্ষেত্রে অঙ্গরাজ্য আইনের লঙ্ঘন হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখেন।
২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দাবানলের ঘটনাগুলোর একটি ঘটেছিল। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া এডিসন পাওয়ার কোম্পানির বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানলের সূত্রপাত হয়েছিল। তদন্তকারীরা তখন বলেছিলেন, প্রচণ্ড বাতাসের মধ্যে বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ হলে দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয় এবং ৪৪০ বর্গমাইলের বেশি এলাকা পুড়ে যায়।
বৈদ্যুতিক পরিষেবা প্রদানকারী কোম্পানি সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া এডিসন গতকাল শুক্রবার পাসাডেনার নিকটবর্তী ইটন এলাকার দাবানল নিয়ে সিপিইউসিতে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
এডিসন কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই দাবানলের সূত্রপাত হওয়ার সঙ্গে তাদের কোনো সরঞ্জামের যোগসূত্র থাকার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবে বিমা কোম্পানির আইনজীবীদের কাছ থেকে প্রমাণ সংরক্ষণের নোটিশ পাওয়ার পর সতর্কতামূলকভাবে তারা প্রতিবেদনটি দিয়েছে।
বজ্রপাত, অগ্নিসংযোগ, বৈদ্যুতিক লাইন ছাড়াও অনেক সময় আবর্জনা পোড়ানো এবং আতশবাজি ফুটানো থেকেও দাবানলের সূত্রপাত হতে পারে। তা ছাড়া দুর্ঘটনায় অসংখ্য উৎস থেকেই আগুন ছড়াতে পারে।
বিবিসির খবরে জানা যায়, ২০২০ সালে এক দম্পতি একটি অনুষ্ঠানের আয়োজনে বেশি ধোঁয়া তৈরি করে এমন বিশেষ ধরনের আতশবাজি পোড়াতে গেলে বড় আকারে দাবানল ছড়িয়েছিল। তখন প্রায় ৩৬ বর্গমাইল এলাকা পুড়ে গিয়েছিল। এতে ৫টি বাড়ি এবং আরও ১৫টি ভবন ধ্বংস হয়ে যায়। এ ঘটনায় এক অগ্নিনির্বাপণকর্মী প্রাণ হারান।
ইটন ও প্যালিসেইডস এলাকার দাবানল এখনো জ্বলছে। গতকাল নাগাদ তা সামান্য নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। বাতাসের বেগ কমেছে। তবে বৃষ্টির কোনো পূর্বাভাস নেই। মাইলের পর মাইল শুকনা জায়গা পুড়িয়ে দিচ্ছে দাবানল।
লেন্টিনি বলেন, আবহাওয়ার বদল হলেই কেবল দাবানল থামতে পারে।

গাজায় যেভাবে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ঠিক যেন তেমন বোমা হামলা হয়েছে, এ যেন যুদ্ধের দৃশ্য:

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের ভয়াবহ দাবানল নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, দাবানল দেখ মনে হচ্ছে যেন কেউ বোমা ফেলেছে।  এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ভয়াবহ দাবানলে গত পাঁচদিন ধরে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস।  সবশেষ এতে ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।  এছাড়া ভয়াবহ এ দাবানলে এখন পর্যন্ত শহরটির ১০ হাজারের বেশি অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে, আর পুড়ে গেছে ৩৫ হাজার একর জমি। 
আবহাওয়া বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা অ্যাকুওয়েদার শুক্রবার জানিয়েছে, দাবানলে ১৩৫ থেকে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আর এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগবে।  মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই দাবানলকে ‘যুদ্ধের দৃশ্য’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই দাবানল আমাকে যুদ্ধের দৃশ্যের কথা বেশি মনে করিয়ে দিচ্ছে। যেখানে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে বোমা ফেলা হয়েছে। এটি যেন পুরোপুরি যুদ্ধক্ষেত্রের দৃশ্য। ’
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) ওভাল অফিসে বাইডেনকে দাবানলের সবশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে লুটপাটের বিষয়টি স্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘লুটপাটের স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। আমরা প্রমাণ পেয়েছি আক্রান্ত এলাকায় অনেকে গিয়ে লুটপাট করছেন। ’
এছাড়া দাবানল নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোয় ট্রাম্পের সমালোচনাও করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে নজিরবিহীন দাবানলে বিপুল আর্থিক ও মানবিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই সংকটের জন্য দায়ী কে? এই প্রশ্নটিই এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস শহর বেশ কয়েকদিন ধরেই নিয়ন্ত্রণহীন আগুনে পুড়ছে। শীত মৌসুমের শুরুতে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন এবং ব্যাপক সহায়-সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে। মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই দুর্যোগে কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন। এমনকি মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে আগুন নেভানোর প্রচেষ্টা:
প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল থেকে পাসাডেনা পর্যন্ত পাঁচটি কমপক্ষে দাবানল নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা এখনো সফল হয়নি। বিদ্যুতের তারের সমস্যাকে এই আগুনের প্রধান কারণ হিসেবে দাবি করা হয়েছে এবং আগামী কয়েকদিন এই দাবানল অব্যাহত থাকতে পারে। 
এদিকে এবিসি নিউজ জানিয়েছে, মার্কিন সরকার প্রায় ১,৮০,০০০ বাসিন্দাকে তাদের বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে ৫০০ জন দমকল কর্মীকে সংবেদনশীল এলাকায় আগুন নেভানোর কাজে নিযুক্ত করেছে।
ছড়ছে আগুন; বাড়ছে ক্ষতি:
এই দাবানলে ক্যালিফোর্নিয়ার ২,০০,০০০ হেক্টরের বেশি বনাঞ্চল, আবাসিক এলাকা এবং নগর অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। শত শত বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, যা এই বিপর্যয়ের ক্ষতির একটি অংশ মাত্র।
প্রাথমিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই আগুনের কারণে সৃষ্ট ক্ষতির পরিমাণ ১৩৫ থেকে ১৫০ বিলিয়ন ডলার বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিহাসের অন্যতম বিধ্বংসী এই দাবানলে আমেরিকার সবচেয়ে দামি সম্পত্তিগুলোর কিছু ধ্বংস হয়েছে। এদিকে দাবানলের কারণে শেয়ার মার্কেট ও বিমা শিল্পেও এর প্রভাব পড়েছে। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, বিমাকৃত সম্পত্তি থেকে এই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতির পরিমাণ ৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
বাতাসের তীব্রতা এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই দাবানল আধুনিক আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো বিপর্যয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। দাবানল ছড়িয়ে পড়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো- প্রাকৃতিক সম্পদ ও বনাঞ্চলের দুর্বল ব্যবস্থাপনা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন সরকার বন ব্যবস্থাপনার জন্য বাজেট কমিয়েছে। যার ফলে সেখানে শুকনো শাখা-পাতার মতো প্রচুর দাহ্য বস্তু জমা হয়েছে।
পর্যবেক্ষণের জন্য নতুন প্রযুক্তি এবং দক্ষ কর্মীর অভাবের কারণে এই সংকট প্রাথমিক পর্যায়ে চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এসব দুর্বলতার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মিলিত হয়ে আগুনের তীব্রতা এবং বিস্তার বাড়িয়েছে।
অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব, দমকল সরঞ্জামের ঘাটতি এবং পানি সরবরাহের সীমাবদ্ধতা এই বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণকে কঠিন করে তুলেছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া জানাতে বিলম্ব হওয়াটাও আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনও ক্যালিফোর্নিয়ার এই দাবানল ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। যা মার্কিন সরকারের নীতিতে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া এবং ঘন ঘন খরার কারণে সেখানে দাবানলের আদর্শ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

আগামী ২০ জানুয়ারি শপথগ্রহণের মাধ্যমে আবারও হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজমকে এই দাবানলের জন্য দায়ী করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের পরিবেশ নীতির দুর্বলতাগুলোও এই সংকটের মধ্যে আরও স্পষ্ট হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন অস্বীকার এবং পরিবেশগত বাজেট কমানোর জন্য তাকে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। পরিশেষে বলা যায় যে, লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ দাবানল শুধু একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়; এটি কাঠামোগত ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার ফলও বটে।

ক্রাইম ডায়রি// আন্তর্জাতিক