কেউ ভ্যাকসিন থেকে বাদ যাবে না-বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা

"আপনার পরিবারকে যদি কেউ হত্যা করত, আর যদি কেউ সেই হত্যাকারীর বিচার না করে পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিত, তার জন্য আপনি কী করতেন? "

কেউ ভ্যাকসিন থেকে বাদ যাবে না-বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা
No one will be left out of the vaccine - Sheikh Hasina, daughter of Bengal
মোঃ হেলাল উদ্দিনঃ
বঙ্গকন্যা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বিশ্ব সফর করে বিশ্বনেতাদের দেখিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ স্বাবলম্বী হবার দ্বারপ্রান্তে এবং বাংলাদেশ পারবে। তিনি পুরো বিশ্বের নিকট বাংলাদেশকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। নভেম্বর ১৭, ২০২১ইং এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি-এটাই কি বেশি নয়? আপনাকে যদি কেউ হত্যার চেষ্টা করত, আপনি কি তাকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন। আপনার পরিবারকে যদি কেউ হত্যা করত, আর যদি কেউ সেই হত্যাকারীর বিচার না করে পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিত, তার জন্য আপনি কী করতেন? 

এসময় সাংবাদিকরা খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন, দুর্নীতি করে দেশটাকে একেবারে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। গ্রেনেড হামলায় আমাদের ২২ জন মারা যান। সংসদে বিষয়টি নিয়ে একদিন আলোচনাও করতে দেয়নি। এতবড় অমানবিক যে, তাকেও আমি মানবতা দেখিয়েছি। আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার, সেটুকু আমি দেখিয়েছি। আর কত চান, এখন সে অসুস্থ। এখানে আমার কিছু করার নেই। আমার যতটুকু করার আমি করেছি। আমরা অমানুষ নই। অমানুষ নই দেখেই আমার এক্সিকিউটিভ অথরিটি দিয়ে তাকে (খালেদা জিয়া) বাসায় থাকার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বাকিটা আইনগত ব্যাপার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ছিয়ানব্বই সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে হত্যাকারীকে পার্লামেন্টে বসানো হয়। যেখানে আমি বিরোধীদলীয় নেতা ছিলাম সেখানে বসানো হলো কর্নেল রশীদকে। কে করেছিল? খালেদা জিয়া। খায়রুজ্জামান আসামি, তার মামলার রায় হবে। চাকরি নেই। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেই আসামিকে চাকরি দিলেন ফরেন মিনিস্ট্রিতে। অ্যাম্বাসেডর করে পাঠালেন। পাশা একজন খুনি। সে সেনাবাহিনীর অফিসার ছিল। মারা গেছে। ক্ষমতায় এসে মৃত ব্যক্তিকে প্রমোশন দিয়ে তার অবসর ভাতাটাতা সব দিয়ে দিল। আর গ্রেনেড হামলার পর বলে দিল কী! আমি ভ্যানিটি ব্যাগে গ্রেনেড নিয়ে গিয়ে আত্মহত্যা করতে নিজেই নিজেকে গ্রেনেড মেরেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটালীপাড়ায় বোমা যখন পোঁতে তার আগে তার (খালেদা জিয়া) বক্তৃতা কী ছিল-শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবেন না। বলেছিল কারণ মরেই তো যাব। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে! এতকিছুর পরও খালেদা জিয়ার প্রতি দয়া দেখাতে আপনারা বলেন! কেউ এ প্রশ্ন করলে আমার মনে হয় আপনাদের একটু লজ্জা হওয়া উচিত। এসময় তার কথায় উপস্থিত সবাই আবেগতাড়িত হয়ে পড়তে দেখা যায়।

কপ-২৬ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে দুই সপ্তাহের সফরের বিস্তারিত জানাতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। গণভবনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ দেশের বিভিন্ন দৈনিকের সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক ও সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন সাংবাদিক, আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্যে সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী সংবাদ সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সরকারপ্রধান।

 তিনি সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে নানান প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি বলেন,সব টাকা ভর্তুকিতে দিলে উন্নয়ন থেমে যাবে : এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই দেশে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, বেশি দামে কিনে দেশে কম দামে জ্বালানি বিক্রির কারণে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, এখন আপনারাই বলেন, আর কত টাকা ভর্তুকি দেওয়া যাবে? বাজেটের সব টাকা কি ভর্তুকিতে দিয়ে দেব? তাহলে কিন্তু উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেমে যাবে। আর কোনো উন্নয়ন হবে না।

 কর না দেওয়া এবং কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ট্যাক্সটা ফাঁকি দেওয়ার দিকেই সবার নজর। তাহলে টাকাটা আসবে কোথা থেকে? তাহলে কি দেউলিয়া হয়ে যেতে হবে?

গ্যাসের সংকট মেটাতে সরকার এলএনজি আমদানি করছে এবং সেখানেও বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, খাবারের যাতে কষ্ট না হয়, সেদিকে আমাদের নজর আছে।

আপনারা এত হতাশ হন কেন : টি ২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলা নিয়ে হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে এমন প্রশ্নের উত্তরেই প্রধানমন্ত্রী পালটা প্রশ্ন করেন-আপনারা এত হতাশ হন কেন? তিনি বলেন, কয়েকটি খেলা তো চমৎকার খেলেছে। বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপ খেলেছে, কয়েকটি দেশকে হারাতে পেরেছে, এটিই তো বড় কথা। দল যেটুকু পেরেছে, সেটিই বড় কথা। সব সময় সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী হয় না-এ বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আপনি কখনো ক্রিকেট খেলেছেন? কখনো মাঠে গেছেন? ব্যাট-বল ধরেছেন? কখন যে ব্যাট-বলের সংযোগ ঘটবে, ছক্কা হবে-সব সময় সবকিছু অঙ্কে মেলে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, যেটুকু আশা করেছিলাম, সেরকম হয়নি। কিন্তু আমি কাউকে হতাশার কথা বলি না। আমি বলি, আরও ভালো খেলো। আরও মনোযোগী হও, আরও প্র্যাকটিস করো।

৭৫-পরবর্তী হত্যাকাণ্ডে জিয়া সরাসরি জড়িত : এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের পর সংঘটিত বিভিন্ন ক্যুতে সেনাবাহিনীর হাজার হাজার অফিসার ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমান সরাসরি এগুলোয় জড়িত ছিলেন। তার নির্দেশে প্রহসনের বিচারের জন্য সামরিক আদালত বসানো হয়েছিল। কত মানুষ মারা গিয়েছিলেন, এর প্রকৃত সংখ্যা বের করা যায়নি। তিনি বলেন, ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ভোরে বিমানবাহিনীতে সংঘটিত বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করা হয়েছিল। তখন সামরিক আদালতে ফাঁসি দেওয়া হয় ১১ জন অফিসারসহ ১ হাজার ৪৫০ বিমান সেনাকে। বরখাস্ত ও চাকরিচ্যুত হন আরও চার হাজার সেনা। নিখোঁজ হন অসংখ্য। সামরিক আদালতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা সম্প্রতি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র চলছে : এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে সেখানে আরাম-আয়েশে দিন কাটাচ্ছে, আর বাংলাদেশে গণ্ডগোল পাকাচ্ছে। যারা চোখ থাকতেও অন্ধ, কান থাকতেও বধির, তারা হয়তো ষড়যন্ত্র দেখেন না। এ প্রসঙ্গে বিএনপির আমলে তােকে বারবার হত্যা প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আমাকে হত্যার চেষ্টায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হলো। সামনাসামনি অনেকবার গুলি করা হয়েছে আমাকে হত্যার জন্য। কোটালীপাড়ায় বিশাল ওজনের বোমা পুঁতে রেখেও আমাকে হত্যা করতে পারল না। এতবার চেষ্টা করেও আমাকে মারতে পারল না। সেই চেষ্টা তারা করে যাবে। তবে কথায় আছে না-রাখে আল্লাহ মারে কে, মারে আল্লাহ রাখে কে? তিনি বলেন, লন্ডনে বসে একজন দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, নানা গণ্ডগোল পাকাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক উসকানি, বিভিন্ন মন্দিরে হামলাসহ অনেক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সেগুলো তদন্ত করা হচ্ছে, ঠিক সত্য বেরিয়ে আসবে, কারা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড : প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি, সেটা কিন্তু আমরা রক্ষা করে যাচ্ছি। আমরা বলেছি যে, বিচারবহির্ভূত হত্যা হবে না, সেটা হচ্ছে না। কিন্তু ঘটনাচক্রে কিছু কিছু ঘটনা যখন ঘটে যায়, তখন সঙ্গে সঙ্গে সেটার তদন্ত হয়। অন্যায়ভাবে যদি কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে। র‌্যাবই হোক আর পুলিশই হোক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং তাদের বিচারও হচ্ছে। 

নির্বাচন করার মতো সাংগঠনিক শক্তি ও জনসমর্থন বিএনপির নেই : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন নিয়ে সমালোচনার উত্তরে বলেছেন, নির্বাচন করতে হলে সাংগঠনিক শক্তি ও জনসমর্থন দরকার। সেটা নেই বলেই বিএনপি নির্বাচন করবে না বলে নিজেদের রাজনৈতিক দৈন্য প্রকাশ করছে। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের একদম তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। ফলে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়, আওয়ামী লীগকে চায়। এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিকা অনেক দাম দিয়ে কিনতে হয়। অনেক দাম দিয়ে ২৫ কোটি ডোজ টিকা কিনেছি। ইতোমধ্যে ৮-৯ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ কোটি মানুষকে ডাবল ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। বাকিদের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। পেশাজীবী, শ্রমিক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাইকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। কেউ ভ্যাকসিন থেকে বাদ যাবে না। 

এর আগে লিখিত বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, কপ২৬ সম্মেলনে ঢাকা-গ্লাসগো ঘোষণা গৃহীত হওয়া বাংলাদেশের জলবায়ু কূটনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালনের ফলাফল। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের নেতৃত্বে সবচেয়ে বেশি ৪৮টি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের দ্বারা ঢাকা-গ্লাসগো ঘোষণা গৃহীত হওয়া জলবায়ু কূটনীতিতে আমাদের দেশের অগ্রণী ভূমিকার ফল।

ক্রাইম ডায়রি // জাতীয়