সেই বিল্ডিংয়ের সব তথ্য মিথ্যা:হাইকোর্টে রিট:আদালত যা বললেন

বেইলি রোডে একটি ভবনে ভয়াবহ আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় স্বরাষ্ট্র সুরক্ষা সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সেই বিল্ডিংয়ের সব তথ্য মিথ্যা:হাইকোর্টে রিট:আদালত যা বললেন
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

একইসঙ্গে আইন অনুযায়ী স্কুল, কলেজ, শপিংমলসহ রাজধানীর  ভবনগুলোতে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা না রাখা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত

ক্রাইম ডায়রি ডেস্কঃ

হতভম্ব পুরো দেশ। একের পর এক অগ্নিকান্ড ঘটে অসংখ্য প্রাণের নাশ হয় কিন্তু আমরা থেকে যায় আগের মতোই।  কিছুদিন খুব লাফালাফি এটা হবে সেটা হবে; সাময়িক সেই প্রতিবাদ একদিন চাপা পড়ে যায়। আবার মানুষ পুড়লে সবার টনক নড়ে। এভাবেই চলছে দিনের পর দিন। কিন্তু আমাদের একজন হাইকোর্ট আছে। জনগনের আস্থার জায়গা। রাজধানীর বেইলি রোডে একটি ভবনে ভয়াবহ আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় স্বরাষ্ট্র সুরক্ষা সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। 

কমিটিতে পুলিশ, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, বুয়েটের বিশেষজ্ঞ, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি রাখতে বলা হয়েছে। এই কমিটি চার মাসের মধ্যে বেইলি রোডে একটি ভবনে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনার কারণ অনুসন্ধান, কারা দায়ী তা খুঁজে বের করবে। এ ছাড়া রাজধানীর ভবনগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রতিরোধে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা কেমন হবে তার সুপারিশ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।পৃথক দুটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও  বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

একইসঙ্গে আইন অনুযায়ী স্কুল, কলেজ, শপিংমলসহ রাজধানীর  ভবনগুলোতে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা না রাখা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ ও অ্যাডভোকেট ইসরাত জাহান সান্ত্বনা। 

বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে গতকাল রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইসরাত জাহান সান্ত্বনা। রিটে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করার নির্দেশনা চাওয়া হয়। একইসঙ্গে রিটে সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আদালতে দাখিল করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ রাজধানীর বেইলি রোডসহ সকল আবাসিক স্থাপনায় রেস্টুরেন্ট বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটে বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে প্রকৃত দায়ীদের গ্রেফতার ও আহত, নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। এছাড়া বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রী পরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের আইজি, রাজউকের চেয়ারম্যান, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।

 এদিকে, রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিনকজি কটেজ ভবন ব্যবহারে পদে পদে মিথ্যা তথ্য ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। ভবনটি নকশা অনুযায়ী নির্মাণের কথা বলা হলেও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। ওপরের তিনটি ফ্লোর আবাসিক ব্যবহারের কথা থাকলেও সেগুলোতেও রেস্টুরেন্ট করা হয়েছে। আবাসিকের অনুমোদন থাকা ভবনটির অষ্টমতলার বাণিজ্যিক ব্যবহার হলেও সেখানে তিতাস গ্যাস তাদের সংযোগ দিয়েছে। একই ফ্লোরে ফায়ার লাইসেন্স দেয় ফায়ার সার্ভিস। কেবল অগ্নিনিরাপত্তাই নয়, নিশ্চিত করা হয়নি ভবন ব্যবহারে রাজউকের সাধারণ নির্দেশনাও। ফায়ার লাইসেন্স গ্রহণেও বিভিন্ন জায়গায় তথ্য গোপন করা হয়েছে। তদারক কর্তৃপক্ষকে ‘ম্যানেজ’ করেই হয়েছে এসব অনিয়ম।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, বেজমেন্টসহ গ্রিনকজি কটেজ মূলত একটি নয়তলা ভবন। রাজউক থেকে দ্বিতীয় থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ছয় থেকে আটতলা পর্যন্ত আবাসিক হিসাবে ব্যবহার হওয়ার কথা। এছাড়া নিচতলাও বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে বেজমেন্টে পার্কিংয়ের জায়গা আছে। অথচ ভবনটিতে কোনো আবাসিক ফ্লোর ছিল না। প্রতিটি ফ্লোরই ব্যবহার হয়েছে বাণিজ্যিক হিসাবে। এরপরও আটতলায় একটি বৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তিতাস।

ক্রাইম ডায়রি / জাতীয়