এয়ারপোর্টে হকার হতে উত্থান সোনা শফির সাতকাহন

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এলাকার ফুটপাত, কোরবানির গরুর হাট, ব্যাটারিচালিত রিকশার টোকেন বাণিজ্য, ময়লার টেন্ডার সবকিছুতেই তার হস্তক্ষেপ এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড ক্যাশিয়ার দালাল জুয়েলের মাধ্যমে কিশোর গ্যাং সদস্যরা এলাকায় সোনা শফির বিরুদ্ধে কথা বললেই তার ওপর শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। 

এয়ারপোর্টে হকার হতে উত্থান সোনা শফির সাতকাহন
ছবি-অনলাইন হতে সংগৃহীত
অভিযুক্ত সোনা শফিক জানান, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। তার কোথাও কোনো বাড়ি-মার্কেট নেই। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে পরাজিতরা এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।
অনলাইন ডেস্কঃ
বিমানবন্দর ও এর আশেপাশের এলাকায় সোনা শফির নাম জানেনা এমন কেউ নেই। স্বর্ণ চোরাচালানে রয়েছে তার বিশাল নেটওয়ার্ক। তার চক্রের অন্যতম সদস্য বর্তমানে কারাবন্দি গোল্ডেন মনির, মোহাম্মদ আলী, হায়দার, রিয়াজ উদ্দিন সোনা শফির আশীর্বাদে আজ অঢেল সম্পদের মালিক যদিও প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই দুদকের মামলাও রয়েছে।
আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের বাংলাদেশি চক্রের প্রধান হোতা ডিএনসিসি ৪৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শফিকুল ওরফে সোনা শফি প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে তার সমস্ত অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আবার টাকার বিনিময়ে ভাগিয়ে নিয়েছেন উত্তরখান থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদ। তার হাতেই বিমানবন্দরকেন্দ্রিক যত অবৈধ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয়। এলাকার রাস্তার ফুটপাত থেকে শুরু করে ময়লা পর্যন্ত তার চাঁদাবাজি থেকে রেহাই নেই। 
 
সূত্রমতে, সোনা শফির নানা অপরাধ ও অপকর্মের অনুসন্ধানে ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। তার আরেক সহযোগী মঈনুল ইসলাম জুয়েল ওরফে দালাল জুয়েলের মাধ্যমে ওয়ার্ডের চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এলাকার ফুটপাত, কোরবানির গরুর হাট, ব্যাটারিচালিত রিকশার টোকেন বাণিজ্য, ময়লার টেন্ডার সবকিছুতেই তার হস্তক্ষেপ এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড ক্যাশিয়ার দালাল জুয়েলের মাধ্যমে কিশোর গ্যাং সদস্যরা এলাকায় সোনা শফির বিরুদ্ধে কথা বললেই তার ওপর শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। 
এলাকার স্কুল শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, সোনা শফির বিরুদ্ধে উত্তরার বিভিন্ন থানায় কয়েকটি মামলা রয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে স্থানীয় কাচকুড়া কলেজের এক শিক্ষিকাকে হয়রানি করেন শফিকের ফুফাতো ভাই শ্যামল মিয়া। এ ঘটনায় মামলা হলে কলেজের অধ্যক্ষ জামাল উদ্দিন মিঞার ওপর হামলা করে নির্যাতন চালায় সোনা শফি এবং তার ক্যাডার বাহিনী। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন অধ্যক্ষ জামাল উদ্দিন মিয়া। ওই ঘটনায় মামলাও হয়। তবে প্রভাবশালী শফিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। 
সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হওয়ার পরে এলাকায় আরো আধিপত্য বিস্তার করেছেন তিনি। এলাকার আরো অনেকেই সোনা শফির ক্যাডার বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হয় কিন্তু কেউ টুঁ শব্দটি করতে সাহস পান না। এমন অনেকেই আছে যারা তার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এলাকা ছাড়া হয়েছেন। 
শফির সেকেন্ড ইন কমান্ড দালাল জুয়েল সম্পর্কে সু-নাগরিক সোসাইটির সভাপতি দুলাল সরকার বলেন, এই জুয়েল একসময় দালালি করে জীবিকা নির্বাহ করতো আর এখন সোনা শফির কল্যাণে রাতারাতি ধনী হয়ে গেছেন। সে এলাকার যত ভেজাল সম্পত্তি আছে সকল কিছুর দেখাশোনা জবর দখলের দায়িত্বে নিয়োজিত এবং নিরীহ অসহায়দের জমি নামমাত্র মূল্যে কিনে সোনা শফির হয়ে বিক্রি করেন।
 সোনা শফির পরিচয়?
সোনা শফি উত্তরখানের কাচকুড়া বেতগী গ্রামের মৃত হাজী ফজন উদ্দিনের ছেলে। ১৯৯৬ সালে সুরত মিয়া নামের একজন ব্রিটিশ প্রবাসী বিমানবন্দরে মাতাল অবস্থায় কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। একপর্যায়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা তার পেটে কাচের বোতল ঢুকিয়ে দেয় এতে ঘটনাস্থলেই সুরত মিয়া মারা যান। 
ওই ঘটনায় ব্রিটিশ প্রবাসীর স্ত্রী সৈয়দা শামসিয়া বেগম ক্যান্টনমেন্ট থানায় কাস্টমস কর্মকর্তাদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন এবং সেই মামলায় কাস্টমসের পক্ষে আদালতে সাক্ষী হন শফি। 
লোক মুখে শোনা যায়, ওই সাক্ষ্য দেওয়ার বিনিময়ে তাকে সোনা চোরাচালানে সহায়তা দেন কিছু অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তা। এতে সোনা শফির সিন্ডিকেটের কারবার চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এক সময়ের হকার লাগেজ পার্টির সদস্য যেন ‘আলাদিনের চেরাগ’ পেয়ে যান। 
এছাড়া উত্তরখানসহ কয়েকটি এলাকায় তার বহুতল ভবন আছে। দেশে-বিদেশে রয়েছে অঢেল সম্পদ। ২০০৭ সালে সোনা চোরাচালানে মামলা হওয়া এবং ২০০৮ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে ভোল পাল্টান শফি। 
ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। একপর্যায়ে বৃহত্তর উত্তরা থানা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক হন। বর্তমানে তিনি উত্তরখান থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তার ‘শফি অ্যান্ড ব্রাদার্স’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিমানবন্দরের সব অবৈধ কাজের অংশীদার।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিব হাসানকে কল দিলে তিনি বিরক্তির সুরে বলেন, শফি আওয়ামী লীগ করত না বিএনপি করত- তা তার এলাকায় গিয়ে খোঁজ নেন। তার ব্যাপারে আমি কোনো কথা বলতে চাই না- এই বলেই লাইন কেটে দেন।
অভিযুক্ত সোনা শফিক জানান, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। তার কোথাও কোনো বাড়ি-মার্কেট নেই। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে পরাজিতরা এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। এরপরও যদি আপনারা লিখেন সমস্যা নেই। আমার কোনো সন্তানাদি নেই, জেল-ফাঁসি আমি কেয়ার করি না।
ক্রাইম ডায়রি//সুত্রঃযুগান্তর (কায়েস আহমেদ সেলিম)