দুদকের অনুসন্ধান: নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কমিশনের নামে শতকোটি টাকা লোপাট

সম্প্রতি একটি  নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের খবরে দেখা যায় নন ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলোয় চলছে তুঘলকি কাণ্ড।জনগন হতে ডিপোজিট সংগ্রহ  এবং সংগ্রহের ব্যাক্তিদের কমিশনের নামে শতকোটি টাকা আত্মসাৎ করছে প্রতিষ্ঠান ঘিরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট সদস্যরা।

দুদকের অনুসন্ধান: নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কমিশনের নামে শতকোটি টাকা লোপাট
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত
তারা ব্যাংক নন। তবে ব্যাংকের আদলে ব্যবসা করেন। আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে করলেও  এখন করেন গোপনে। আগে সরাসরি টাকা নিয়ে লাভ দিতেন। সময়ের তালে তারা  এখন তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইনভেষ্ট দেখান। কিন্তু গ্রাহকদের সাথে কথা বলে দেখা গেছে আমানতদার গ্রাহকেরা লাভের বিনিময়েই তাদের প্রতিষ্টানে টাকা রাখছেন। যদিও তাদেরকে শিখিয়ে দেয়া হয়েছে কেউ প্রশ্ন করলে বলতে হবে তারা ব্যবসায় টাকা ইনভেষ্ট করেছেন।
শাহাদাত হোসেন রিটনঃ

তারা ব্যাংক নন। তবে ব্যাংকের আদলে ব্যবসা করেন। আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে করলেও  এখন করেন গোপনে। আগে সরাসরি টাকা নিয়ে লাভ দিতেন। সময়ের তালে তারা  এখন তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইনভেষ্ট দেখান। কিন্তু গ্রাহকদের সাথে কথা বলে দেখা গেছে আমানতদার গ্রাহকেরা লাভের বিনিময়েই তাদের প্রতিষ্টানে টাকা রাখছেন। যদিও তাদেরকে শিখিয়ে দেয়া হয়েছে কেউ প্রশ্ন করলে বলতে হবে তারা ব্যবসায় টাকা ইনভেষ্ট করেছেন। ইনভেষ্ট কালেক্টর এবং মালিকরা মাল্টিলেভেল পদ্ধতিতে সেই টাকার গোপন লাভও পান মোটা অংকের। এই গোপন শিখানো বুলি তারা বলতে রাজী হলেও অনেকে মিডিয়ার কাছে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ অমান্য করে এমন ব্যাংকিং আদলে লেনদেন করছে বহু আর্থিক তবে বর্তমানে বানিজ্যিক নামধারী প্রতিষ্টান। তাদের হেডম এমন গণভবন হতে সচিবালয় তাদের হাতের মুঠোয়। একজন সাংবাদিককেও তারা এমনকি সাতদিনে গায়েব করে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। তাদের  একজন সোনাচোরাচালানির সাথে জড়িত ব্যক্তি  এমনও ভয় দেখান যে, তার চাচা এনএসআই এর বড় পরিচালক এবং দুদকের দু’জন পরিচালক তার বন্ধু। সেই প্রতিষ্টানে অনেকেরই অবৈধ টাকার খনি। তাই তাদের পিছনে লাগলে গায়েব করা হবে সেই সাংবাদিককে। এহেন ঘটনার তথ্য জানা একজন সাংবাদিককে একটি প্রতিষ্ঠানের এমডি গায়েব করার হুমকি দিয়েছেন একাধিকবার।  ঘটনাটি কাল্পনিক কাহিনী নয়। সেই সাংবাদিক তার মৃত্যু হলে সেই প্রতিষ্ঠানের কর্নধারকে নিয়ে একটি বিশাল প্রতিবেদন তৈরি করে প্রমানসহ একজন সম্পাদকের কাছে রেখে দিয়েছেন।

তবে  এমন ঘটনার বাস্তবতা প্রায় অনেক প্রতিষ্ঠানেরই। সম্প্রতি একটি  নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের খবরে দেখা যায় নন ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলোয় চলছে তুঘলকি কাণ্ড।জনগন হতে ডিপোজিট সংগ্রহ  এবং সংগ্রহের ব্যাক্তিদের কমিশনের নামে শতকোটি টাকা আত্মসাৎ করছে প্রতিষ্ঠান ঘিরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট সদস্যরা। এই দুর্নীতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারাও জড়িত। দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য পাওয়া গেছে।

 ইতোমধ্যে ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন সংস্থাটির উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। প্রতিবেদনে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তুহিন রেজাসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়াও একই প্রক্রিয়ায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের প্রায় শতকোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য পেয়েছে দুদক। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্যাংকবহির্ভূত প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানেই ডিপোজিট সংগ্রহ ও কমিশন বাণিজ্যের নামে অর্থ লোপাটের মহোৎসব চলছে।

সেই প্রতিষ্টানে  অনেকেরই অবৈধ টাকার খনি। তাই তাদের পিছনে লাগলে গায়েব করা হবে সেই সাংবাদিককে। এহেন ঘটনার তথ্য জানা একজন সাংবাদিককে একটি প্রতিষ্ঠানের এমডি গায়েব করার হুমকি দিয়েছেন একাধিকবার।  ঘটনাটি কাল্পনিক কাহিনী নয়। সেই সাংবাদিক তার মৃত্যু হলে সেই প্রতিষ্ঠানের কর্নধারকে নিয়ে একটি বিশাল প্রতিবেদন তৈরি করে প্রমানসহ একজন সম্পাদকের কাছে রেখে দিয়েছেন।

একটি জাতীয় দৈনিককে গুলশান আনোয়ার বলেন, ‘নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডিপোজিট সংগ্রহ ও কমিশন বাণিজ্যের নামে অর্থ দুর্নীতি করে আত্বসাৎ করা হচ্ছে।’ ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জাতীয় দৈনিকের সেই খবরে দেখা যায়, দুদকের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত নথি অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত মাত্র ১ বছর তিন মাস সময়ের মধ্যে ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড থেকে ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন চক্রের সদস্যরা। এই চক্রের নেতৃত্ব দিয়েছেন খোদ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তুহিন রেজা। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি ডিপোজিট সংগ্রহের জন্য কমিশন হিসাবে অগ্রিম ৫ লাখ টাকা তোলার জন্য সার্ভিস রিকোয়েস্ট ফর্ম পূরণের মাধ্যমে আবেদন করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মো. মাইনুদ্দিন। তাতে সম্মতি দেন প্রতিষ্ঠানের আরেক কর্মকর্তা মোহাম্মদ সবুর খান দিপু। এতে চূড়ান্ত অনুমোদন দেন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তুহিন রেজা। এর দুই মাস পর ২০২০ সালের ১১ মার্চ মো. মাইনুদ্দিন ফের ডিপোজিট সংগ্রহের কমিশন হিসাবে আরও ৫ লাখ টাকা তোলার আবেদন করেন। একইভাবে তাতে সম্মতি দেন মোহাম্মদ সবুর খান দিপু এবং অনুমোদন দেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তুহিন রেজা। একই বছরের ২ মার্চ প্রতিষ্ঠানের আরেক কর্মকর্তা মো. মুকিত হোসেন ডিপোজিট সংগ্রহের কমিশন বাবদ ৫ লাখ টাকা তোলার আবেদন করেন। মোহাম্মদ সবুর খান দিপু একইভাবে তাতে সম্মতি দেন এবং তুহিন রেজা চূড়ান্ত অনুমোদন দেন।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একই প্রক্রিয়ায় দফায় দফায় ডিপোজিট সংগ্রহের কমিশন বাবদ সিন্ডিকেটের হোতা মো. তুহিন রেজার নেতৃত্বে মো. মাইনুদ্দিন, মো. মুকিত হোসেন, মোহাম্মদ সবুর খান দিপু, মোহাম্মদ শাহরুজ্জামান ও তানজিমুল মুক্তাদির পরস্পর যোগসাজশে এক বছর তিন মাস সময়ের মধ্যে ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম তুলে আত্মসাৎ করেন। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্যদের অনুমোদন ব্যতিরেকে বেআইনিভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে আইনবহির্ভূত কমিশন বাণিজ্যের নামে এই টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হয়। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে একক কর্তৃত্বেই এই টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন। ডিপোজিট সংগ্রহের জন্য অগ্রিম কমিশন হিসাবে এই টাকা তোলা হলেও এর বিপরীতে এক টাকাও ডিপোজিট সংগ্রহ করা হয়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতারণার মাধ্যমে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করে ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে নিজেরা লাভবান হয়েছেন, যা দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৪০৯, ৪২০, ১০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে এ বিষয়ে মামলার সুপারিশসহ কমিশনে উপস্থাপন করা হয়েছে।

অনুসন্ধান সংশ্লিষ্টরা জানান, একই প্রক্রিয়ায় নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় ডিপোজিট সংগ্রহের কমিশন বাবদ শত শত কোটি টাকা অগ্রিম তুলে আত্মসাৎ করা হচ্ছে। দুদকের অনুসন্ধানে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকেই কমিশন বাণিজ্যের নামে প্রায় শতকোটি টাকা লোপাটের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়াও ফাস ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিংসহ বেশ কয়েকটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাটের তথ্য পেয়েছে দুদকের অনুসন্ধান দল। পর্যায়ক্রমে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এমন ধরনের আরও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে তদন্ত চালাচ্ছে দুদক। অভিযোগ প্রমানিত হলে মামলার সুপারিশসহ কমিশনে উপস্থাপন করা হবে বলে দুদক সুত্রে জানা গেছে।

ক্রাইম ডায়রি/ ক্রাইম/জনস্বার্থে প্রকাশিত