দৃশ্যমান উন্নয়নের শীর্ষে ২০২২ সালঃউন্নয়নের মাইলফলকের বছর- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের সরকার হিসেবে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য বলেই আমি মনে করি। গত ১৩ বছরে আমরা আপনাদের জন্য কী কী করেছি, তা আপনারাই মূল্যায়ন করবেন। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি আমরা যেসব ওয়াদা দিয়েছিলাম, আমরা তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।

দৃশ্যমান উন্নয়নের শীর্ষে  ২০২২ সালঃউন্নয়নের মাইলফলকের বছর- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ছবি-অনলাইন হতে সংগৃহীত
দীর্ঘদিন ধরেই সরকারে থাকা এবং উন্নয়নমুখী অর্থনীতি নিয়ে কাজ করার ফলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এখন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অদম্যগতিতে এগিয়ে চলছে।
শরীফা আক্তার স্বর্নাঃ
আকাশচুম্বি চ্যালেঞ্জ আর ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে অগ্রগতির নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করে সাফল্যের এক যুগ পূর্ণ করেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে খাদ্য নিরাপত্তা, সমুদ্র বিজয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে।
চলতি ২০২২ সালকে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাইলফলকের বছর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের মতো মেগা প্রজেক্টগুলো এই বছর চালু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সরকারপ্রধান।
 জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। টানা তৃতীয় দফায় সরকার গঠনের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী এই ভাষণ দেন। দীর্ঘদিন ধরেই সরকারে থাকা এবং উন্নয়নমুখী অর্থনীতি নিয়ে কাজ করার ফলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এখন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অদম্যগতিতে এগিয়ে চলছে।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরে বলেন, ‘২০২২ সাল হবে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলক বছর। আর কয়েক মাস পর জুন মাসেই আমরা উদ্বোধন করতে যাচ্ছি বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু। অনেক ষড়যন্ত্রের জাল আর প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করতে যাচ্ছি। এই সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে সরাসরি রাজধানীসহ অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করবে। আশা করা হচ্ছে, এই সেতু জিডিপি-তে ১.২ শতাংশ হারে অবদান রাখবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ বছরের শেষ নাগাদ নাগাদ আমরা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে মেট্রোরেল চালু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এ অংশে ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, মেট্রোরেল রাজধানী ঢাকার পরিবহন খাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আগামী অক্টোবর মাসে চট্টগ্রামে কর্ণফুলির নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হবে দেশের প্রথম টানেল।
অন্যান্য বৃহৎ প্রকল্পগুলোর কাজও পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে। এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট আগামী বছরের এপ্রিল নাগাদ চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
দেশবাসীর উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের সরকার হিসেবে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য বলেই আমি মনে করি। গত ১৩ বছরে আমরা আপনাদের জন্য কী কী করেছি, তা আপনারাই মূল্যায়ন করবেন। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি আমরা যেসব ওয়াদা দিয়েছিলাম, আমরা তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।’
তার সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। ২০০৯ সালে আমাদের সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির কথা আপনাদের মনে আছে। তখন সাকুল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল ৪২০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াটে। মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আমরা সে প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করেছি। দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পায়রাতে ইতোমধ্যে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। রামপাল, পায়রা, বাঁশখালী, মহেষখালী এবং মাতারবাড়িতে আরও মোট সাত হাজার ৮০০ মেগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে।’
‘২০০৯ সালে জাতীয় গ্রিডে এক হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো বর্তমানে যা দুই হাজার ৫২৫ মিলিয়ন ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে। গ্যাসের অব্যাহত চাহিদা মেটাতে ২০১৮ থেকে তরলীকৃত গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে। নববর্ষের শুরুতে আমাদের জন্য সুখবর হচ্ছে: বঙ্গোপসাগরে যে গ্যাস হাইড্রেটের সন্ধান পাওয়া গেছে তার পরিমাণ ১৭ থেকে ১০৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ং-সম্পূর্ণ। বর্তমানে দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার কোটি ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশ বিশ্বে ধান, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে উন্নীত হয়েছে। অব্যাহত নীতি সহায়তা ও প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে এই বিপ্লব সাধিত হয়েছে। মাছ-মাংস, ডিম, শাকসবজি উৎপাদনেও বাংলাদেশ স্বয়ং-সম্পূর্ণ। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে এবং ইলিশ উৎপাদনকারী ১১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘অতীতের সরকারগুলোর আমলে আমাদের গ্রামগুলো বরাবরই উন্নয়ন ভাবনার বাইরে ছিল। আমরাই প্রথম গ্রামোন্নয়নকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করি। ২০১৮ সালে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের অঙ্গীকার করি।’
‘আজ দেশের প্রায় সকল গ্রামে পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত পল্লি এলাকায় ৬৬ হাজার ৭৫৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন, তিন লাখ ৯৪ হাজার ব্রিজ-কালভার্ট, এক হাজার ৭৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, এক হাজার ২৫টি সাইক্লোন সেন্টার এবং ৩২৬টি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৪৫৮ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চতুর্থ বা তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। আরও ৮৮৭ কিলোমিটার মহাসড়ক চার এবং তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ঢাকায় বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৬.৭৩ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ ২০২৩ সাল নাগাদ শেষ হবে।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়েকে যুগপোযোগী এবং আধুনিক গণপরিবহন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমানে ১৩ হাজার ৩৭১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৭টি প্রকল্পের কাজ চলছে। ঢাকার চারদিকে সার্কুলার রেল লাইন স্থাপনের সমীক্ষার কাজ চলছে। ২০০৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ৪৫১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ এবং এক হাজার ১৮১ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্বাসন করা হয়েছে। ৪২৮টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছে। যমুনা নদীর উপর ৪.৮ কিলোমটির দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের বিমানবহরে ১২টি নতুন অত্যাধুনিক বোয়িং এবং ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ সংযোজিত হয়েছে। সংযোজিত হয়েছে তিনটি ড্যাশ-৮-৪০০ উড়োজাহাজ।
সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জলবায়ুর পরিবর্তনের ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য এর আগে আমরা ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ শীর্ষক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এই পরিকল্পনার আওতায় ৬৪টি জেলায় প্রায় চার হাজার ৪৩৯ কিলোমিটার নদী, খাল ও জলাশয় খনন করা হচ্ছে।’
সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। সারা দেশে সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র হতে গ্রামীণ নারী-শিশুসহ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়। আমাদের স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ এবং গুণগত মানোন্নয়নের ফলে মানুষের গড় আয়ু ২০১৯-২০ বছরে ৭২.৮ বছরে উন্নীত হয়েছে। পাঁচ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৮ ও অনুর্ধ্ব এক বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার ১৫-তে হ্রাস পেয়েছে। মাতৃমৃত্যু হার কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি লাখে ১৬৫ জনে।

বিশ্বের মোড়ল দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত চীনের সাথে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। জঙ্গিবাদের কারণে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া পাকিস্তান সংকটে রয়েছে সেখানে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিস্ময় সাফল্য দেখিয়েছেন। দেশের চলমান কয়েকটি মেগা প্রজেক্ট ২০২৩ সালের মধ্যে জনগণের জন্য উন্মুক্ত হলে দেশে আরো দ্রæ উন্নয়নের জোয়ার বইবে এবং জনগণের জীবন যাত্রার মান বাড়বে বলে আশাবাদী সরকার।

করোনা সংকটে গণভবনে থেকেই পুরো দেশ পরিচালনা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরো দেশ যেখানে ভয়ে বিহবল, মন্ত্রী এমপিরা করোনা ভয়ে বের হননি সেখানে অনেকগুলো মন্ত্রণালয়ের কাজ সরাসরি পরিচালনা করেছেন তিনি, এখনও করছেন। দক্ষ নেতৃত্বের কারণে অর্থনৈতিক সংকট তৈরী হয়নি, দেশে কেউ না খেয়েও মারা যায়নি। বরং প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রতিবেশি দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব সামলিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। দলের প্রত্যেক বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন, এমপি থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদে কারা দলের মনোনয়ন পাবেন সে বিষয়ও দেখভাল করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নবম জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর ২০০৯ সালের ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে সরকার। এরপর ২০১৪ সালে এবং ২০১৮ সালে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে রাষ্ট্রক্ষমতায় টানা ১২ বছর পূর্ণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। গতকাল ছিল একাদশ নির্বাচনে জয়লাভের পর সরকারের দুই বছর। এর আগে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল আওয়ামী লীগ। এরপর ২৩ জুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার দায়িত্বভার গ্রহণ করে শেখ হাসিনা

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেদিনবদলের সনদনামে নির্বাচনি ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির ইশতেহারের ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার ঘোষণা দেয়া হয়। সরকার এমন কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে যা বিগত কোন সরকারের পরিকল্পনায় ছিল না। এর মধ্যে রয়েছে ১০০ বছর মেয়াদি ডেল্টা প্ল্যান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, মেট্রোরেল চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশে টানেল, পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, -নামজারি, অনলাইন জিডি, বিনামূল্যে বই প্রদান, জরুরি সেবা ৯৯৯ চালু করা।

গত ১২ বছরে ঈর্ষণীয় সাফল্য কুড়িয়েছে সরকার। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পাচ্ছেন রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নাগরিক সেবা, মাথাপিছু আয়, হাতে হাতে মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেটের বদৌলতে পাল্টে গেছে জীবনমান। এদিকে বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের শেষ প্রান্তে রয়েছে। করোনা মধ্যে থেমে ছিল না বাংলাদেশ। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। 

করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময়ে যখন মানুষের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে, তখন ডিজিটাল প্রযুক্তি যোগাযোগের এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হয়। সরকারি বেসরকারি কাজ, স্কুলের পড়াশোনায় চলেছে ইন্টারনেটে। ঘরে বসে খাবারের অর্ডার করেও খেতে পারছে জনগণ। দেশের ১৮ হাজার ৪৩৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠান হাজার ৮০০ ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক ক্যাবল স্থাপনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের সময় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতেবিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ২০০৬ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিলো তিন হাজার ৩৭৮ মেগাওয়াট। ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিলো চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। বর্তমান সরকারের এক যুগে ২০২০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৭৭৭ মেগাওয়াট। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ২০০৬ সালে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিলো ৪২টি। ২০০৯ সালে আরও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র হয় ২৭টি। বর্তমানে ২০২০ সালে এর সংখ্যা এসে দাঁড়ায় মোট ১৪০টিতে।

২০০৬ সালে কৃষিতে কোনো ভর্তুকি দেয়া হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী সরকারের আমলে পাঁচ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা কৃষি খাতে ভর্তুকি দেয়। তা ২০১৮ সালে এসে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। ২০২০ সালে হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রদান করে সরকার। বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ২০০৬ সালে অতি দারিদ্যের হার ২৪ দশমিক শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণকালে ২০০৯ সালে ছিলো ১৯ দশমিক শতাংশ। ২০১৮ সালে কমে তা ১১ দশমিক শতাংশে আসে। বর্তমান ২০২০ সালের তথ্য চিত্র অনুযায়ী অতি দারিদ্র্যের হার ১০ দশমিক শতাংশ।

২০০৬ সালে বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিলো ৪৫ দশমিক কোটি ডলার। আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণকালে ২০০৯ সালে ছিলো ৯৬ দশমিক এক কোটি ডলার। ২০১৮ তা বেড়ে ৩০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। বর্তমান সরকারের একযুগ পূর্তিতে এখন বৈদেশিক বিনিয়োগ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ২০০৬ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিলো দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাগ্রহণের বছর ২০০৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় বিলিয়ন ডলারে। ২০১৮ সালে হয় ৩৩ বিলিয়ন ডলার। আজ একযুগ পূর্তিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ দশমিক ০৯ ডলার।

২০০৬ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিলো ৫৬০ মার্কিন ডলার। ২০০৯ সালে আয় ছিলো ৭১০ ডলার। আওয়ামী লীগ সরকারের একযুগ পূর্তিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার। ২০০৬ সালে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ছিলো ৫০০ টাকা। ২০০৯ সালে দেয়া হয় ৯০০ টাকা করে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের একযুগ পূর্তিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার টাকা।

উন্নয়নের তুলনামূলক চিত্রে দেখা যায়, ২০০৬ সালে দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক শতাংশ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের বছর ২০০৯ সালে ৩৪ শতাংশ। ২০১৮ সালে তা ছিলো ২১ দশমিক শতাংশ। বর্তমানে সরকারের একযুগ পূর্তিতে তা এসে দাঁড়ায় ২০ দশমিক শতাংশে।

বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ২০০৬ সালে গড় আয়ু ছিলো ৬৫ দশমিক বছর। ২০০৯ সালে গড় আয়ু হয় ৬৬ দশমিক বছর। ২০১৮ সালে ছিলো ৭২ দশমিক এক বছর। আওয়ামী লীগ সরকারের একযুগ পূর্তিতে গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়ায় ৭২ দশমিক বছর।

নানা প্রতিকলতা পেরিয়েও বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। করোনা মাহামারির কারণে বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকলেও এখন পুরোদমে এগিয়ে আনা হচ্ছে। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচনের নির্বাচনি ইশতেহারের অন্যতম লক্ষ্য ছিলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ।

ক্ষমতায় আসার পরই পদ্মা সেতু নির্মাণকে অগ্রাধিকার মেগা প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করে শেখ হাসিনা সরকার। নানা ষড়যন্ত্র দেশ-বিদেশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেই পদ্মা সেতু এখন বাস্তবায়নের পথে। গত ১০ ডিসেম্বর সেতুর ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর পুরো মূল কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু করার নতুন লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলছে কাজ। এমআরটি- নামের প্রকল্পের উত্তরা থেকে আগারগাঁও ১১ দশমিক ২৯ কিলোমিটার অংশ পর্যন্ত ২০২১ সাল এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য ছিলো। ২০০৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৪৫৩ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক বা তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। আরও ৬৬১ কিলোমিটার মহাসড়ক চার এবং তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ঢাকায় বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৬.৭৩ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ ২০২৩ সাল নাগাদ শেষ হবে।

ওয়ান সিটি-টু টাউনমডেলে চট্টগ্রাম শহরের সাথে আনোয়ারাকে যুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তৈরি হচ্ছে সাড়ে তিন কিলোমিটারের সুড়ঙ্গপথ। চীনা অর্থায়নে চলমান বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পে কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) গত ডিসেম্বর পর্যন্ত অগ্রগতি ৬১ শতাংশ।

 যথাসময়ে প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দিয়ে ১০ বছর ধরে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে সরকার। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছে।

এক যুগ ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় বর্তমান সরকারের সবচে বড় চ্যালেঞ্জের বছর ছিলো বিদায়ী ২০২০ সাল। জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী ঘিরে দেশব্যাপী উৎসবমুখর কর্মসূচি নেয়া হলেও বৈশ্বিক মহামারি করোনা সবকিছু থমকে দেয়, বড় ধরনের ধাক্কায় পড়ে সরকার। উৎসবের বছর পরিণত হয় আতঙ্ক আর হতাশায়। ২০২০ সালের শুরুতেই সারা বিশ্বসহ বাংলাদেশে যখন করোনাসংকটে নানা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তখন তা মোকাবিলায় দ্রু নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন।

বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক . হাছান মাহমুদ  বলেন, সরকারের একযুগ পূর্তিতে বড় অর্জন হচ্ছে বাংলাদেশ ছিল স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া। দেশের যেমন উন্নয়ন অগ্রগতি হয়েছে তেমনি প্রতিটি মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে। এখন ছেঁড়া কাপড় পরা মানুষ দেখা যায় না। বাংলাদেশে এখন খালি পায়ে মানুষ দেখা যায় না। বাংলাদেশে এখন কবিতায় কুঁড়েঘর আছে, আকাশ থেকে সহজে কুঁড়েঘর দেখা যায় না। এই পরিবর্তন ১২ বছরে শেখ হাসিনা গতিশীল নেতৃত্বের কারণে হয়েছে। তিনি বলেন, তবে আমাদের ব্যর্থতা হচ্ছে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও একটি বড় রাজনৈতিক দল যারা স্বাধীনতা চায়নি তাদের দিয়ে রাজনীতি করে, তাদের নিয়ে রাজনীতি করে। এই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বাংলাদেশ থেকে নির্মূল হয়নি।

তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় যেখানে মুসলিম দেশগুলো হিমশিত খাচ্ছে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সকলকে সাথে নিয়ে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করা হয়েছে। কওমী মাদরাসার স্বীকৃতির মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া আলেম সমাজকে এগিয়ে আনা হয়েছে।

ক্রাইম ডায়রি/জাতীয়