ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদ উল আযহা

ঈদের নামাজে ধনী-দরিদ্র, উঁচু-নিচু, রাজা-প্রজা, উজির-নাজির, ফকির-মিসকিন, মালিক-শ্রমিক একই কাতারে দাঁড়িয়ে ঈদের ময়দানে নামাজ আদায় করে থাকেন। পারস্পারিক বিভেদ, হানাহানি, ধনী-গরিব, সাদা-কালোর ব্যবধান কমিয়ে সামাজিক জীবনে সকল প্রকার কলহ, হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে থাকে সমাজের মানুষগুলো। ঈদের নামাজে ধনী-দরিদ্র, উঁচু-নিচু, রাজা-প্রজা, উজির-নাজির, ফকির-মিসকিন, মালিক-শ্রমিক একই কাতারে দাঁড়িয়ে ঈদের ময়দানে নামাজ আদায় করে থাকেন। পারস্পারিক বিভেদ, হানাহানি, ধনী-গরিব, সাদা-কালোর ব্যবধান কমিয়ে সামাজিক জীবনে সকল প্রকার কলহ, হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে থাকে সমাজের মানুষগুলো।

ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদ উল আযহা
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

তাছাড়া ঈদুল আজহায় দরিদ্রদের যাকাত দিয়ে থাকেন ধনী তথা সামর্থবান লোকেরা। সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের আশায় বান্দারা নিজেদের সামর্থমতো অন্যদের জন্য টাকা-পয়সা সরবরাহ করে থাকেন। যাকাতের মাধ্যমে সম্পদের পবিত্রতা রক্ষা ও সম্পদ বৃদ্ধির বিধান ধর্মমতে থাকায় মুসলিম ধর্মের অনুসারীরা দরিদ্রদের যাকাত দিয়ে থাকে।

শরীফা আক্তার স্বর্নাঃ

ঈদ মানে আনন্দ, আনন্দের বহি:প্রকাশ, পেছনের দু:খ দুর্দশাকে ভুলে গিয়ে আনন্দের আতিশয্যে সকলের মিলিত প্রাণের সম্মোহনী আগমনী বার্তা। বাঙালির সংস্কৃতিতে সকল মানুষের আন্তরিক মিলনমেলা ও হৃদ্যতার মেলবন্ধন যে কয়েকটি অনুষ্ঠানের বা পার্বণের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয় তার মধ্যে ঈদ অন্যতম। বছরে দুটি ঈদ উদযাপিত হয়, একটি ঈদুল ফিতর অন্যটি ঈদুল আজহা। তবে ঈদুল আজহার তাৎপর্য মুসলিম সম্প্রদায়ের নিকট বিশেষ অর্থ বহন করে থাকে। কারণ ১ বছর পর পর ঈদের বার্তা আসে, তাছাড়া মুসলিম সম্প্রদায় বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনায় কুরবানির মাধ্যমে পালন করে থাকে ঈদুল আজহা। ঈদ আনন্দের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষের নিকট উৎসবের মাত্রা দিয়ে থাকে ঈদ। মূলত বাঙালির জীবনে ঈদ সার্বজনীন রূপ লাভ করে থাকে। ধনী-গরিবের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একই কাতারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আনন্দ উদযাপনের নান্দনিকতা বাঙালির জীবনে ভিন্নমাত্রা প্রদান করে থাকে।

সবার ভেতরে উৎসবের আমেজকে সবিস্তার রূপ ধারণের জন্য ঈদ আনন্দের বিকল্প নেই। কারণ, ঈদের সামাজিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব সকলকে অর্ন্তভূক্ত করতে পারে ব্যাপকভাবে। তাছাড়া বাংলাদেশে ঈদ ব্যতীত এমন কোন উৎসব নেই যার এতটা সবিস্তার প্রভাব বিদ্যমান। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী, সে অর্থেই বেশির ভাগ মানুষই এই আনন্দ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে ভিন্ন ধর্মের মানুষেরাও এ উৎসবের সাথে মিলিত হয়ে থাকেন। তবে বাংলাদেশ ও বাঙালি সংস্কৃতির সাথে কবে থেকে ঈদ আনন্দ শুরু হয়েছে তার মূলোৎপাটনে দেখা যায়; বঙ্গদেশ মুসলিমদের অধিকারে আসার পূর্বেই এ প্রদেশে নামাজ, রোজা ও ঈদ আনন্দের শুরু হয়।

বঙ্গদেশ মুসলিমদের অধিকারে আসে ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে, কিন্তু তার অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে সুফি, দরবেশ সাধকরা ধর্ম প্রচারের জন্য বঙ্গদেশে আসেন এবং ঈদের গুরুত্ব তথা ধর্মীয় আচারাদি পালনের জন্য তাগিদ দেন। পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের জন্য চট্রগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে পর্তুগীজ, ওলন্দাজরা ব্যবসা সংক্রান্ত কাজের নিমিত্তে বঙ্গপ্রদেশে আসেন। এ দেশের মানুষের সাথে ব্যবসায়িক সখ্যতার পাশাপাশি ধর্মীয় যোগসূত্র স্থাপনের উদ্দেশ্যেই ধর্ম প্রচার করে থাকেন। সুতরাং একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে তথা বঙ্গপ্রদেশে ইসলাম ধর্মের প্রচার প্রসারণ ঘটেছিল। কাজেই দেখা যায়, বঙ্গপ্রদেশে ইসলাম ধর্মের প্রচার প্রসারণের সাথে সাথে ঈদ আনন্দের ব্যাপক প্রসার পেয়েছে। অদ্যাবধি নানা আয়োজনে ও বৈশিষ্ট্যে ঈদের আনন্দকে সবার মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। ঈদের আনন্দকে আরো সর্বজনীন ও সুখকর করে তুলতে মিডিয়াসমূহ ঈদকে সামনে রেখে ইলেকট্রনিক মিডিয়া বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান এবং প্রিন্ট মিডিয়া বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রদান করে থাকে।

ঈদের নামাজে ধনী-দরিদ্র, উঁচু-নিচু, রাজা-প্রজা, উজির-নাজির, ফকির-মিসকিন, মালিক-শ্রমিক একই কাতারে দাঁড়িয়ে ঈদের ময়দানে নামাজ আদায় করে থাকেন। পারস্পারিক বিভেদ, হানাহানি, ধনী-গরিব, সাদা-কালোর ব্যবধান কমিয়ে সামাজিক জীবনে সকল প্রকার কলহ, হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে থাকে সমাজের মানুষগুলো। তাছাড়া সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের আশায় সকলেই সামাজিক জীবনে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উপস্থাপন করার চেষ্টা করে থাকেন। সামাজিক শত্রুতা ভেদাভেদ ভুলে একে অন্যের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ার রেওয়াজ বাঙালির সংস্কৃতিতে লক্ষ্যণীয় বিশেষ করে ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে। বিভেদ দূর করার জন্য; সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধির জন্য ঈদের বিকল্প বাংলাদেশে এখনো আসে নাই।

এবারের  ঈদের অন্যতম আকর্ষন পদ্মা সেতু। এটি কুরবানীর ঈদ উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে সরকারের উপহারও বলা যায়। থুব সহজেই পদ্মাপাড়ের মানুষেরা যেতে পারছে বাড়িতে। পুলিশের গৃহীত পদক্ষেপে কোথায়ও কোন জ্যাম নেই। পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি প্রতিবেশিদের মধ্যে আন্তরিকতা, সহমর্মিতা ও হৃদ্যতার বন্ধন তৈরি হয় যা পরবর্তীতে বছর জুড়ে থেকে যায় লোকজনের মধ্যে। হীনমন্যতার লেশ রোধ করে পরিপক্ক হওয়ার মৌনতায় নিজের পরিণত করার চেষ্টায় ঐক্যবদ্ধ থাকেন সবাই। সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দবোধের ভিত্তিতে পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ ও মূল্যবোধ বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি সেলামির প্রচলন ঈদ উৎসবকে ভিন্নমাত্রা প্রদান করে থাকে। ছোটরা বড়দের নিকট থেকে ঈদের দিন তাদের নিজস্ব পাওনা আদায় করে নেয়। উৎসবমুখর পরিবেশে সামাজিক ভাতৃত্বের বন্ধনে শিশুরা বেড়ে উঠার সুযোগ পায়। সামাজিক শান্তি ও পারিবারিক বন্ধন রক্ষিত হয়।

ঈদের আগমনকে ঘিরে অর্থনীতির গতিপথের চাঙ্গাভাবও প্রণিধানযোগ্য। সমাজের সর্বস্তরে ধনী গরিবের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য কমিয়ে আনা ঈদ আনন্দের লক্ষ্য হলেও অর্থনৈতিক সামঞ্জস্যহীনতার কারণে বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। তারপরেও এই ঈদের জন্য পুরো ১ বছর অপেক্ষা করে থাকে লাখ লাখ মানুষ। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ী সকলেই ঈদের আমেজের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। ধনী গরিব সবাই এ উৎসবকে সামনে রেখে নতুন কাপড়ের স্বাদ নিতে চায়। প্রত্যেকটি পরিবার তাদের নিজের সাধ্যানুযায়ী সকল সদস্যদের জন্য নতুন জামা কাপড় ক্রয় করে থাকেন। সমাজের পিছিয়ে থাকা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ধনীরা তাদের তহবিল থেকে নতুন কাপড় এবং টাকা দিয়ে সাহায্য করে থাকেন। পারস্পারিক ব্যবধান কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়।

ঈদুল আজহার বিশেষত্ব আসে কুরবানির মাধ্যমে। সামর্থবানগণ নিজেদের সাধ্যনুযায়ী পশু কুরবানি দিয়ে থাকে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির জন্য। কুরবানির গোশত বন্টনের মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়ে থাকে। গরিব এবং নিচু পর্যায়ের লোকজন ধনীদের প্রদানকৃত গোশতের মাধ্যমে নিজেদের ঈদানন্দে পরিপূর্ণতা আনয়ন করে থাকে। তাছাড়া ঈদুল আজহায় দরিদ্রদের যাকাত দিয়ে থাকেন ধনী তথা সামর্থবান লোকেরা। সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের আশায় বান্দারা নিজেদের সামর্থমতো অন্যদের জন্য টাকা-পয়সা সরবরাহ করে থাকেন। যাকাতের মাধ্যমে সম্পদের পবিত্রতা রক্ষা ও সম্পদ বৃদ্ধির বিধান ধর্মমতে থাকায় মুসলিম ধর্মের অনুসারীরা দরিদ্রদের যাকাত দিয়ে থাকে। তাছাড়া ঈদুল আজহায় চামড়া শিল্পের বিকাশ ঘটে থাকে এবং এ শিল্পে বহুমানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়ে থাকে। সুতরাং ঈদুল আজহার সার্বিক গুরুত্ব অপরিসীম।

রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সামাজিক উৎসব হিসেবে ঈদের গুরুত্ব অপরিসীম। সারাবছর ব্যাপী রাজনৈতিক নেতারা পারস্পারিক বিষোদাগার করলেও ঈদের সময়ে হাসিমুখে শুভেচ্ছা বিনিময় করে থাকেন। শুধু কি দেশেই আন্তর্জাতিকভাবে ঈদের সময়ও বিশ্ব নেতারা পরস্পরের প্রতি শুভেচ্ছা বিনিময় করে থাকেন, মুসলিম উম্মাহর প্রতি বিশ্বনেতারা বার্তা প্রদান করে থাকেন সমৃদ্ধি ও কল্যাণের প্রত্যাশায়। দেশের ভেতরে রাজনৈতিক নেতারা পরস্পরের মধ্যে দাওয়াত, মেহমানদারী, ঈদকার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় করে থাকেন।

পারস্পারিক সৌহার্দ, সম্প্রীতি বিনিময়ের মাধ্যমে সহানুভূতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বৈরি সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে সাম্প্রদায়িকতার উর্দ্ধে ঊঠে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসীদের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি হয়। কাজেই বাঙালির জীবনে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ আনন্দের বিকল্প নেই।

ক্রাইম ডায়রি/জাতীয়