বঙ্গকন্যা মঞ্চে পরশ তাপসকে ডেকে স্মৃতিচারন করলেন এবং কাঁদলেন

‘পাঁচ বছরের পরশ, তিন বছরের তাপস। বাবা-মায়ের লাশ পড়ে আছে। দুটি বাচ্চা বাবা-মায়ের লাশের কাছে গিয়ে চিৎকার করছে। বাবা ওঠো, বাবা ওঠো..। মা ওঠো, মা ওঠো...। সেদিন কেউ সাড়া দেয়নি।’

বঙ্গকন্যা মঞ্চে পরশ তাপসকে ডেকে স্মৃতিচারন করলেন এবং কাঁদলেন
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

পরশ আসলে তাপসও এগিয়ে গিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেন। দুই ভাই ও প্রধানমন্ত্রীর কান্নায় তখন ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার তখন চোখে পানি।

আরিফুল ইসলাম কাইয়্যুমঃ

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে নিহত শেখ ফজলুল হক মনি ও তার স্ত্রী আরজু মনি হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিচারণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছরের পরশ, তিন বছরের তাপস। বাবা-মায়ের লাশ পড়ে আছে। দুটি বাচ্চা বাবা-মায়ের লাশের কাছে গিয়ে চিৎকার করছে। বাবা ওঠো, বাবা ওঠো..। মা ওঠো, মা ওঠো...। সেদিন কেউ সাড়া দেয়নি। আগষ্ট ৩০,২০২২ইং মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস স্মরণে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সভায় বক্তৃতাকালে তিনি এ স্মৃতিচারণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হত্যা করেছে তাদের আপনজন, বিচারের আওতায় আসা যুদ্ধাপরাধীদের সন্তান ও যারা নানা অপরাধ করে বাংলাদেশে থেকে পালিয়েছে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে জানিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার এবং বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাঙালিকে তিনি (বঙ্গবন্ধু) গভীরভাবে ভালোবেসেছেন। তাকে যখন বিশ্ব নেতারা সতর্ক করেছেন মিসেস গান্ধি নিজে বলেছিলেন যে কিছু একটা ঘটছে আপনি সতর্ক হন। তার জবাব ছিল না,এরা তো আমার সন্তানের মতো। এরা আমাকে কেন মারবে?’

কোনো বাঙালি তাকে মারতে পারে এটা জাতির পিতা কোনোদিন বিশ্বাসই করেননি উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আর বিশ্বাসঘাতকরা আজ দলে বলে ফুলে ফেঁপে উঠে বড় বড় কথা বলছে।’

যেসব দেশ বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা মানবাধিকারের  কথা শোনায় আমাদেরকে। মানবাধিকার নিয়ে তত্ত্বজ্ঞান দেয়। কিন্তু আমার কাছে যখন এই কথা বলে বা দোষারোপ করে তারা কি একবারও ভেবে দেখে যে আমাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল যখন আমরা আপনজন হারিয়েছি? স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে কেঁদে বেড়িয়েছি।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে এখানে পরশ ও তাপস বসে আছে।’ তখন প্রধানমন্ত্রীর চোখ যায় পরশের দিকে। তাপস মঞ্চে থাকলেও পরশ ছিলেন না। তিনি নিচে প্রথম সারিতে বসেছিলেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরশ সামনে চুপ করে বসে আছে। পরশ আসো, আস কাছে আসো। ওকে নিয়ে আসো..।’

পরশ আসলে তাপসও এগিয়ে গিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেন। দুই ভাই ও প্রধানমন্ত্রীর কান্নায় তখন ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার তখন চোখে পানি।

এসময় শেখ হাসিনা নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, ‘আজকে ওরা বড় হয়ে গেছে...।’ পরে মঞ্চে উঠে প্রধানমন্ত্রীর পা ছুয়ে সালাম করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ পরশ।

শেখ ফজলুল হক মনি ও আরজু মনি দম্পতির দুই সন্তান শেখ ফজলে শামস পরশ ও শেখ ফজলে নূর তাপস। পরশ বর্তমানে যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে। আর শেখ তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফির সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচির সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তৃতা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আমিন রুহুল, সাদেক খান, আব্দুল কাদের খান, শহীদ সেরনিয়াবাত প্রমুখ।

ক্রাইম ডায়রি//জাতীয়