কিশোর গ্যাং কালচার এখন সারা দেশেই পরিচিতি পেয়েছে। তবে এই পরিচিতি মোটেও ইতিবাচক নয়। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে ওঠা দলবদ্ধ এই অপরাধীচক্র এখন মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘কিশোর গ্যাং’ এখন বড় ধরনের একটি সামাজিক সমস্যা। উদ্ভট নাম নিয়ে গড়ে ওঠা এসব দলের অনেক সদস্যই স্কুল-কলেজের গণ্ডি পার হয়নি।
রাজধানী ঢাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডব প্রকট হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই রাজধানীর কোনো না কোনো এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডবের শিকার হচ্ছে কেউ না কেউ। ডিএমপির তালিকা অনুযায়ী আটটি ক্রাইম ডিভিশনে বর্তমানে ১১টি কিশোর গ্যাং গ্রুপ রয়েছে, যাদের সদস্য অন্তত ২৩০ জন। তাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে।
মোঃ শাহীন আলমঃ
সারা দেশে কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোররা ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে খুনাখুনিসহ নানা অপরাধে কিশোর-তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে।
কিশোর গ্যাং কালচার এখন সারা দেশেই পরিচিতি পেয়েছে। তবে এই পরিচিতি মোটেও ইতিবাচক নয়। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে ওঠা দলবদ্ধ এই অপরাধীচক্র এখন মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘কিশোর গ্যাং’ এখন বড় ধরনের একটি সামাজিক সমস্যা। উদ্ভট নাম নিয়ে গড়ে ওঠা এসব দলের অনেক সদস্যই স্কুল-কলেজের গণ্ডি পার হয়নি।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সারা দেশেই বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডব প্রকট হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই রাজধানীর কোনো না কোনো এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডবের শিকার হচ্ছে কেউ না কেউ। ডিএমপির তালিকা অনুযায়ী আটটি ক্রাইম ডিভিশনে বর্তমানে ১১টি কিশোর গ্যাং গ্রুপ রয়েছে, যাদের সদস্য অন্তত ২৩০ জন। তাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার নবীনগর হাউজিং এলাকায় থার্টিফার্স্ট নাইটের প্রথম প্রহরে দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এ সময় ওই এলাকার ৮০-৯০টি বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করে আতঙ্ক ছড়ায়।
পহেলা জানুয়ারী, ২০২২ নতুন বছরের প্রশ্ন দিনই শনিবার বিকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মোহাম্মদপুর নবীনগর ৬ নম্বর রোডের বেড়িবাঁধ থেকে ৮ নম্বর সড়ক পর্যন্ত প্রতিটি বাড়ির নিচ তলা, দ্বিতীয় তলার জানালার গ্লাস এবং দরজায় হামলার চিহ্ন।
কিশোর গ্যাংয়ের হামলা থেকে বাদ যায়নি রাস্তায় রাখা ভ্যান গাড়ি, পিকআপ, মোটরসাইকেল, দোকানের শাটার, এমন কি পিঠা বিক্রেতার মাটির চুলা, সবজি বিক্রেতার ভ্যানগাড়ি, হোটেলের চুলা সবকিছু।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাত আনুমানিক দেড়টা থেকে ২টার দিকে নবীনগর হাউজিংয়ের ৬ নম্বর রোডের মাথায় বিকট শব্দ হয়। এরপর দেখা যায় প্রায় এক-দেড়শ কিশোর হাতে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গলি দিয়ে যেতে যেতে প্রতিটি বাড়ির গেটে ও জানালার গ্লাস ভাঙচুর করতে করতে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
এ সময় গলিতে থাকা প্রতিটি দোকানের শাটার এবং রাস্তায় থাকা সিএনজি, পিকআপ ও ভ্যানগাড়ি লোহার রড, হকিস্টিক এবং হাতের লাঠি দিয়ে ভাঙচুর করে। এ ঘটনার পরপরই ৯৯৯-এ কল দেন কয়েক বাসিন্দা। কিশোররা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে আমাদের থানায় গিয়ে অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে চলে যায়।
গণমাধ্যমকর্মীরা মোহাম্মপদুর থানার ওসি আব্দুল লতিফের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই এবং থানায় এসে কেউ অভিযোগ করেনি। মোহাম্মদপুর থানার ডিউটি অফিসারের নাম্বারে কল দিলে এসআই রাজিব একই সুরে কথা বলেন।
যে বয়সে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, মাঠে খেলার কথা, সৃজনশীল কাজের মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা—সেই বয়সের কিশোররা এখন ছুরি-চাকু, এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। মাস্তানি করে, মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে। রাস্তাঘাটে ছিনতাই করে।
মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। বাধা দিলে রক্তারক্তি, খুুনাখুনি করে। উত্তরা, তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এরা গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অভিযান চালালেও কিশোর অপরাধ কমছে না, বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সক্রিয় তারা।
অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করেন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে দুর্নীতি, অপরাধ ও অপরাধের নানা উপাদান রয়েছে, কিশোররা তার বাইরে নয়। পারিবারিক বন্ধন ভেঙে পড়ছে। এলাকায় খেলার মাঠ নেই। সুস্থ সংস্কৃতিচর্চাও নেই। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে তারকাখ্যাতি, হিরোইজম, ক্ষমতা, বয়সের অপরিপক্বতা, অর্থলোভ।
সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ও কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। পারিবারিক শিক্ষার অভাবও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। আবার মাদক বিক্রেতা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ পর্যন্ত অনেকেই নিজের সামান্য লাভের জন্য কিশোরদের অপরাধজগতে টেনে নেন। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করেন। কিশোরদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের গ্যাং কালচার গড়ে উঠছে।
কিশোর গ্যাং কালচার প্রতিরোধ করা পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। অভিভাবক থেকে শুরু করে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার ও সমাজের সঠিক পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণ কিশোর অপরাধ কমাতে অনেক সাহায্য করবে বলে অভিজ্ঞরা মনে করছেন।