অবৈধভাবে নিয়োগ হয়ে ১৭ বছর পার করেছেনঃ দুদকের তদন্তে কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে এসেছে

সত্য কখনই চাপা থাকেন। সময় মতো তা প্রকাশিত হবেই।

অবৈধভাবে নিয়োগ হয়ে ১৭ বছর পার করেছেনঃ দুদকের তদন্তে কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে এসেছে

 অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ১৭ বছর পার করছেন পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে হওয়া দুর্নীতি মামলায়  সাড়ে তিন বছর আগে চার্জশীট হলেও কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে পরস্পর যোগসাজসের মাধ্যমে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন বহুল আলোচিত এই সহকারী প্রকৌশলী

রাজশাহী বিভাগীয় সংবাদদাতাঃ

ভন্ডামি আর প্রতারণার একটি সীমা পরিসীমা থাকা ‍ উচিত। নিয়োগ পরীক্ষায় পাশ না করেই চাকরী  পেয়েছেন আরো ১৭ বছর আগে। এরপর দূর্নীতির কারনে মামলাও  হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। তান নাম শেখ কামরুজ্জামান। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। 

২০০৪ সালের ১৬ আগস্ট ১০টি পদের বিপরীতে ১১ জন জনবল নিয়োগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে শেখ কামরুজ্জামান সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে আবেদন করেছিলেন।  লিখিত পরীক্ষা হলে  তিনি তাতে পাশ করতে পারেননি। । পরে ‘অনিবার্য’ কারণ দেখিয়ে সেই লিখিত পরীক্ষা বাতিল করা হয়। এরপর মৌখিক পরীক্ষায় তাকে কৃতকার্য দেখিয়ে সহকরী প্রকৌশলী পদে চাকরিতে নিয়োগ দেয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন,  অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ১৭ বছর পার করছেন পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে হওয়া দুর্নীতি মামলায়  সাড়ে তিন বছর আগে চার্জশীট হলেও কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে পরস্পর যোগসাজসের মাধ্যমে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন বহুল আলোচিত এই সহকারী প্রকৌশলী। এ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে আরডিএ’তে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ জিইয়ে রয়েছে। নথিপত্র পর্যালোচনা করে ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত  তথ্যানুযায়ী, লিখিত পরীক্ষায় পূর্ণমাণ ছিল ১০০। আর নূন্যতম পাস নম্বর ছিল ৩৩। এরমধ্যে শেখ কামরুজ্জামান লিখিত পরীক্ষায় ২৪ নম্বর পেয়ে অকৃতকার্য হন তিনি। পরে লিখিত বাতিল করে অবৈধভাবে মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয় কামরুজ্জামানকে। মৌখিক পরীক্ষায় কামরুজ্জামানকে সর্বোচ্চ ৬৬ নম্বর দিয়ে কৃতকার্য দেখানো হয়। এরপর সহকারী প্রকৌশলী পদে তিনি চাকরিতে যোগ দেন। যা বিধিবহির্ভূত।

ওই নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হিসেবে আরডিএ’র তৎকালীন চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব হিসেবে তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শেখ কামরুজ্জামান ১৯৯৩ সালে মানবিক বিভাগ থেকে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি পাস করেন। পরে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা পাস করেন।

সেই সময়ের নথি ঘাটলে দেখা যায়, সহকারী প্রকৌশলী পদে চাকরির লিখিত পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তারা সকলেই ছিলেন বিএসসি (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) ডিগ্রিধারী যোগ্য প্রার্থী।

জানা গেছে ,  নিয়োগের  অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে উল্লেখ করে যারা নিয়োগবঞ্চিত হয়েছিলেন তারা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করেন। পরে তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ১৭ জুলাই দুদকের রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক আব্দুল করিম শাহমখদুম থানায় মামলা করেন। এরপর দীর্ঘ আট বছর তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ১৪ জানুয়ারি দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদুর রহমান আরডিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রব জোয়ার্দার ও সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জানকে অভিযুক্ত করে রাজশাহী বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।

পরে তিন অভিযুক্ত সুপ্রীমকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। ওই পিটিশনে তারা চার সপ্তাহের স্টে অর্ডার প্রাপ্ত হন। তবে পরবর্তীতে সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান আর কোনো স্টে অর্ডার পাননি। ফলে তিনি সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে একটি আপিল করেন যার শুনানি এখন পর্যন্ত হয়নি। তবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী চার্জশীটভুক্ত আসামির বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তের বিধান থাকলেও আরডিএ কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেননি বলে জানা যায়।

  অথচ নিয়মে বলছে অন্য কথা। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-৫ অধিশাখার ২০১২ সালের এক পরিপত্র মোতাবেক যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থাগ্রহণ করার কথা। একইসাথে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে।

কিন্তু চার্জশীটের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে গোপন রাখা হয়েছে। এত কিছু সত্তেও শেখ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ বা তাকে সাময়িক সাসপেন্ড করা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে আরডিএর সহকারী প্রকৌশলী অভিযুক্ত শেখ কামরুজ্জামান জাতীয় দৈনিকের এক সাংবাদিককে বলেন, ফালতু প্রশ্ন কেন করেন- একথা বলেই তিনি কল কেটে দেন। ফলে অভিযোগ সম্পর্কে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আরডিএ’র চেয়ারম্যান মো: আনওয়ার হোসেন সাংবাদিকদের  বলেন, আমি এসব বিষয়ে কিছুই জানি না। আপনার এ বিষয়ে জানা থাকলে আমাকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। তবে সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে চার্জশীট হলেই যে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে হবে এমন কোনো আইন আছে বলে তার জানা নেই বলে তিনি সাংবাদিকদের  জানান।

ক্রাইম ডায়রি // সুত্রঃ নয়াদিগন্ত ও সরেজমিন // ক্রাইম