দুর্ঘটনা এড়াতে গাজীপুরে তৈরি করা হলেও অলস পড়ে আছে আধুনিক রাসায়নিক গুদাম

দুর্ঘটনা এড়াতে গাজীপুরে তৈরি করা হলেও অলস পড়ে আছে আধুনিক রাসায়নিক গুদাম
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

গাজীপুর সংবাদদাতাঃ

দুর্ঘটনা এড়াতে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর কাঁঠালদিয়া এলাকায় ৬ একর জমির উপর রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ করা হলেও ব্যবসায়ীরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। যার ফলে ঝুঁকিপূর্ণভাবে আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে রাসায়নিকের ব্যবসা চলছে। জনবহুল এলাকায় এ ধরনের গুদামগুলো দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করছে।
রাসায়নিকের গুদামগুলো ভাড়া দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও ব্যবসায়ীরা সরকারি গুদাম ভাড়া নিতে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। গত এক মাসে মাত্র দুজন ব্যবসায়ী ভাড়া নেওয়ার আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে।
টঙ্গীর কাঁঠালদিয়া এলাকায় সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) ৬ একর জমিতে ২০২০ সালের ১৬ মার্চ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করা হয়। করোনাকালীন সময়সহ বিভিন্ন কারণে এর কাজ শেষ হয় গত বছরের ডিসেম্বরে।

সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) ৬ একর জমিতে ৫৩টি অস্থায়ী গুদাম, ১ লাখ গ্যালন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ১টি ওভারহেড, ১টি আন্ডারহেড পানির ট্যাংক নির্মাণ, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন ও ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হয়েছে। এরই মধ্যে গুদাম ঘর ভাড়া দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুরিহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরপরই ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদামগুলো সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

এরপর সেই বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি রাসায়নিক গুদামগুলো অস্থায়ীভাবে স্থানান্তরের জন্য দুটি জায়গা নির্ধারণের কথা জানানো হয় শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে। এর মধ্যে একটি ঢাকার শ্যামপুর ও অন্যটি গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর কাঁঠালদিয়া এলাকায়। নানা কারণে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে বেশ সময় লাগলেও গত বছরের ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ হয়েছে। 
শুরুতে পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৯১ কোটি ৭৪ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এর বাইরে ২০১৯-২০ অর্থবছরে পরিকল্পনা কমিশন থেকে প্রকল্পটির অনুকূলে ১৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডকে। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে।

এছাড়া গুদাম ভাড়া দেওয়ার জন্য ৯ অক্টোবর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে রাসায়নিক গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপ-প্রধান প্রকৌশলী খন্দকার জহিরুল হক। গত এক মাসে বিজ্ঞাপন প্রকাশ হওয়ার পর মাত্র দুইজন ব্যবসায়ী ভাড়া নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।
বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, গাজীপুরে আকর্ষণীয় জায়গায় পরিচ্ছন্ন পরিবেশে কেমিক্যাল ব্যবসা ও সংরক্ষণের সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত নবনির্মিত রাসায়নিক গুদাম ও সংশ্লিষ্ট অফিস কক্ষসমূহ ভাড়া প্রদানের নিমিত্ত আগ্রহী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নিকট হতে নির্ধারিত ফর্মে আবেদনপত্র আহ্বান করা যাচ্ছে।

গুদামের প্রতিটি প্যাকেজ (গুদাম ও অফিস) ২ হাজার ৭২ হতে ৩ হাজার ৪১০ বর্গফুট জায়গা (ভ্যাট ব্যতীত) প্রতি বর্গফুট ২৬ টাকা হারে ভাড়া প্রদান করা হবে। এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে তাদের ওয়েবসাইট ও ইমেইল ঠিকানা দেওয়া হয়েছে।
কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা বলেন, দুই হাজার ৭২ বর্গফুটের একটি গুদাম ভাড়া নিতে খরচ পড়ছে ৫৩ হাজার ৮৭২ টাকা; যা অনেক বেশি। অথচ এর চেয়ে বেশি বর্গফুটের গুদাম আমরা অর্ধেকেরও কম টাকায় ভাড়া দিতে পারি।

তবে কেন এত বেশি টাকা দিয়ে সেখানে ভাড়া নেব। আমাদের বেশির ভাগ ক্রেতা বিসিক এলাকার। গুদামটা করা হয়েছে বিসিক থেকে বেশ দূরে। যার কারণে ব্যবসায়ীরা সেখানে যেতে আগ্রহী নয়। তবে ভাড়া যদি কমিয়ে দেওয়া হয় তবে সেক্ষেত্রে চিন্তা করা যেতে পারে।
সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গীর চেরাগআলী থেকে কয়েক কিলোমিটার এগিয়ে ছয় একর জায়গা সীমানাপ্রচীর ঘেরা। সামনে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের সাইনবোর্ড ঝুলানো আছে।

গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায় আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে রাসায়নিক গুদামগুলো। 
প্রশস্ত রাস্তা, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, গুদামগুলোর ফটকও তৈরি করা হয়েছে যাতে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে সুবিধাজনকভাবে চলাচল করা যায়। সহজেই গুদামে প্রবেশ বাহির হওয়ার ব্যবস্থা।

এছাড়া গুদাম যারা ভাড়া নিবেন তাদের জন্য একটি ভবনে অফিস করার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। সেখানে নির্মাণ করা ৫৩টি গুদাম বর্তমানে রাসায়নিক রাখার উপযোগী রয়েছে।
টঙ্গী রাসায়নিক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জলিলুর রহমান জানান, আমরা ব্যবসায়ীরা গুদামগুলো দেখেছি। তারা বলছে একটি গুদামে জায়গা রয়েছে ২ হাজার ৭২ বর্গফুট কিন্তু বাস্তবে রয়েছে এক হাজার বর্গফুট।

এর মধ্যে আবার ভাড়া নির্ধারণ করেছে ২৬ বর্গফুট করে; যা বর্তমান বাজারের সঙ্গে বেমানান। তাই আমরা বলেছি ভাড়া কমান তহালে আমরা সেখানে যেতে রাজি আছি।
প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর সালমান মাহমুদ খান বলেন, এখানে ১৭ জন লোক কাজ করবে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা থাকবে।

অগ্নিনির্বাপণের সার্বাধুনিক প্রযুক্তি রাখা হয়েছে। যার কারণে খরচ একটু বেশি পড়ছে। এতে ব্যবসায়ীদের ঝুঁকিও কমে যাচ্ছে। সেই দিকগুলোও ব্যবসায়ীদের চিন্তা করতে হবে।

দৈনিক ক্রাইম ডায়রি// মহানগর