চট্টগ্রাম মহানগরীতে বন্ধ হচ্ছে পলিথিন

মাছের মাধ্যমে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর কেমিক্যাল মাইক্রোপ্লাস্টিক মিশছে মানুষের শরীরে। পলিথিন এমন ক্ষতিকর হলেও তা দেদারছে  বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে বন্ধ হচ্ছে পলিথিন
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

হোসেন মিন্টুঃ

চট্টগ্রাম নগরে প্রতিদিন ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ হিসাবে ২৪৯ টনই হচ্ছে পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য। এর মধ্যে ৩৫.৬১ ভাগ পুনরায় ব্যবহারযোগ্য। এসব বর্জ্য প্রতিদিনই নানাভাবে পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর চুয়েট কর্ণফুলী নদী নিয়ে গবেষণাটি প্রকাশ করে। পলিথিনের কারণে বাড়ছে জলাবদ্ধতা, ভরাট হচ্ছে কর্ণফুলী, জমছে পলি। নদীর তলদেশ ও অন্যান্য স্তরে ভাসমান মাছ খাচ্ছে এসব বর্জ্য। মাছের মাধ্যমে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর কেমিক্যাল মাইক্রোপ্লাস্টিক মিশছে মানুষের শরীরে। পলিথিন এমন ক্ষতিকর হলেও তা দেদারছে  বিক্রি হচ্ছে। তবে এবার চট্টগ্রামে ক্ষতিকর পলিথিন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন পলিথিন ব্যবহার বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পলিথিন ব্যবহার বন্ধে জেলা প্রশাসন 'নো কম্প্রোমাইজ' নীতিতে মাঠে নামছে।

আগামী ১ জুলাই থেকে কোথাও কোনো পলিথিন ব্যবহার করা যাবে না। জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) বাজারগুলোতে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করবে। এর আগে ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর চসিক নগরের কাজির দেউড়ি, চকবাজার ও কর্ণফুলী মার্কেটকে পলিথিনমুক্ত ঘোষণায় এটি একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। তবে এর আগে করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। চট্টগ্রামের জেলা পলিথিনের উৎস কারখানাগুলো বন্ধ করতে প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে ১ জুলাই থেকে কেউ পলিথিন ব্যবহার করবেনা।

একই সঙ্গে পলিথিনের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সকলকে সচেতন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে পাটজাত করনে মানুষকে সচেতন করতে হবে। ব্যাগ ব্যবহারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা, সবার সহজলভ্য করতে হবে পাটজাত ব্যাগ। জানা যায়, কর্ণফুলী নদীর নাব্য বৃদ্ধিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে 'কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট থেকে বাকলিয়া চর পর্যন্ত বর্জ্য অপসারণ এবং ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাবা বৃদ্ধি শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু ড্রেজিংয়ে এখন প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পলিথিন। ফলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে প্রকল্পের সুফল পাওয়া এবং নদীর নাব্য ধরে রাখা নিয়ে। পলিথিনের এমন ভয়াবহতার স্থানীয় সরকার মন্ত্রাণালয়ের সিটি কর্পোরেশন শাখা-২ গত ২২ মার্চ চসিককে জরুরি ভিত্তিতে কর্ণফুলী নদীর সংযোগ খালগুলোর মুখে গার্বেজ ট্যাপ (বর্জ্য আটকে পানি চলে যাওয়ার ব্যবস্থা) বা নেট স্থাপনের জন্য চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

সচেতনতায় মাইকিং করা, পলিথিনের ক্ষতিকর দিক নিয়ে প্রচারণাসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। তাছাড়া প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রথমেই পলিথিনের কারখানাগুলো বন্ধ করা হবে। পলিথিন বন্ধের ব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণলয়েও কথা বলেছি। পিপলস ভয়েসের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, পরিবেশ রক্ষায় বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার ও কর্ণফুলী নদীর বর্জ্য অপসারণ এবং ড্রেজিং প্রকল্পের পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, বন্দরের নিজস্ব একটি ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের চারটিসহ মোট পাঁচটি ড্রেজার দিয়ে দৈনিক প্রায় ২৫ টন বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে অধিকাংশই পলিথিন। এ কারণে ড্রেজিংয়ের সুফল নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ক্রাইম ডায়রি/নগর-মহানগর