সাফল্যের শীর্ষে বর্তমান সরকার

বর্তমান সরকারের সাফল্য দৃশ্যমান। গল্পের মধ্যে থাকলে জনগন তা কখনোই মেনে নিত না। বিগত সময়ে ফেলে আসা দিন গুলো ছিল খুব বড় চ্যালেন্জের। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, উড়ালসেতু, ফোরলেন হাইওয়ে,রেলপথ, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, বড়বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র,কলকারখানা নির্মানের মতো মেগা প্রকল্প বাস্তাবায়ন করেছে বর্তমান সরকার। মানুষের ক্রয়সীমা বাস্তবে বেড়েছে। টিভি ফ্রীজের শোরুম,মার্কেট-মল,বাজার, প্রতিষ্ঠান স্থাপন ইত্যাদির দিকে তাকান। এছাড়া চাকরী বা কাজ দিতে চান লোক পাওয়া মুশকিল।। উন্নয়ন না হলে বিপরীতটা হতো।

সাফল্যের শীর্ষে বর্তমান সরকার

হাসিনা-সরকার দেশকে রাজনৈতিক সন্ত্রাসমুক্ত করেছে। মৌলবাদী হিংস্রতা দমন করেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একইসঙ্গে ভারত, চীন, আমেরিকা, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের সঙ্গে মৈত্রী ও সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন করেছে

অনলাইন ডেস্কঃ

বাংলাদেশ একটি নাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশ নামে পুরো বিশ্ব চিনত এই দেশকে।  একটি স্বাধীন দেশ হওয়া সত্ত্বেও বহুকাল বহির্বিশ্বে ছিল উপেক্ষিত ও অনালোচিত দেশ। বিশ্বদরবারে কোথায় এ দেশের কথা আলোচনায় উঠলেই ‘বটমলেস বাস্কেটের’ সাথে তুলনা করতো সবাই। বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার সরকার দেশের এই দুর্নামই শুধু দূর করেননি, তার অর্থনীতির উন্নয়নের চাকা ঘুরিয়ে দিয়ে সমালোচক দেশগুলোরও প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।

যে বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু তৈরিতে সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি নিন্দুকের কথায় সেই বিশ্বব্যাংক এখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করে। বাংলাদেশ এখন বহির্বিশ্বে একটি আলোচিত দেশ। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে এ দেশটির গুরুত্ব এখন অনস্বীকার্য। 

বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা সরকারের এ সাফল্যের কথা দেশের বিএনপি-জামায়াত ও একটি তথাকথিত সুশীল সমাজ স্বীকার করতে চাইনি কখনও আর চাইবেও না, তা সবার জানা।

তার পিতাকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করেছে হায়েনারা এবং যে শেখ হাসিনাকেও হত্যা করার জন্য গ্রেনেড হামলার মতো ভয়াবহ হামলা চালানো হয়েছে, তিনি সব শত্রু ও সমালোচকের মুখে ছাই দিয়ে তিন তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে রয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও হয়তো থাকবেন, এটা কি তাদের সহ্য হয়!

তারা ৭১' এর আলোচিত পাগলা মেহের আলীর মতো চিৎকার জুড়েছেন- ‘সব ঝুট হ্যায়’ সব ঝুট হ্যায়।।

তবে কোন কিছুই আর ঝুট নয়।  যদি বাংলাদেশের এ উন্নয়নের যাত্রা অব্যাহত থাকে, তাহলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশ যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশগুলোর মতো উচ্চ আয়ের দেশ হবে তাতে সন্দেহ নেই।

শিল্প, শিক্ষা, কৃষি, ক্রীড়া ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নতি ঘটছে। চিরকালের খাদ্য-ঘাটতির দেশটিকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে রূপান্তর করা হয়েছে।  বন্যা, খরা এবং বৈশ্বিক নানা কারণে খাদ্য উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ায় চাল, পেঁয়াজ ইত্যাদির দাম হঠাৎ প্রচুর বেড়ে গেলেও মুহূর্তের মধ্যে তা কন্ট্রোল করা সম্ভব হয়েছে ।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এ সংকট সাময়িক আসবে এবং যাবে। সরকার এ পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পারবে। রোহিঙ্গা সমস্যাটি বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাটিকে একটু শ্লথ করে দিয়েছিল সত্য। এই সমস্যা দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর সহসা গুরুতর চাপ সৃষ্টি করলেও সরকার তা সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। অতীতে বিডিআর বিদ্রোহ ও পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সৃষ্ট সংকটের সময়েও শেখ হাসিনা সাহস ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে তার মোকাবেলা করেছেন।

এজন্যই দেশের মানুষের একটা বড় অংশের ধারণা, আগামী নির্বাচনে জিতে যদি শেখ হাসিনা আরও একদফা ক্ষমতায় থাকেন, তবে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে।।

 রোহিঙ্গা সমস্যার মতো অন্য যে কোন সমস্যার একটা শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক সমাধান শেখ হাসিনার  সরকারই করতে পারে এবং পারবে। অন্য কোনো সরকারের দ্বারা তা সম্ভব নয়।

হাসিনা-সরকার দেশকে রাজনৈতিক সন্ত্রাসমুক্ত করেছে। মৌলবাদী হিংস্রতা দমন করেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একইসঙ্গে ভারত, চীন, আমেরিকা, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের সঙ্গে মৈত্রী ও সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন করেছে। বিশ্বরাজনীতিতে বাংলাদেশ তার একটি সম্মানজনক স্থান করে নিয়েছে। অতীতের কোনো সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোনো সুনামই অর্জন করতে পারেনি। 

আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্যের বয়ান দিলে তা দীর্ঘ হবে। তাই বলে এ সরকারের কোনো ব্যর্থতা ও অসফলতা নেই তা বলব না। দেশের সব ধরনের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় শত্রু দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার। একশ্রেণীর নব্যধনী দেশের শিল্প, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, সাংবাদিকতাতেও অশুভ প্রভাব বিস্তার করেছে। বড় দুটি রাজনৈতিক দলও তাদের আগ্রাসন থেকে মুক্ত নয়। দেশের অধিকাংশ মসজিদ, মাদ্রাসা এখনও হিংস্র মৌলবাদী দলগুলোর কব্জায়। তাদের প্রভাবে সমাজে সাম্প্রদায়িকতা প্রশ্রয় পাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের একটা বড় অংশের মনমানসিকতা ধর্মান্ধতা দ্বারা আচ্ছন্ন হচ্ছে। এটা ঠেকাতে না পারলে গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোথায়?

জনস্বার্থে পুনঃপ্রকাশিত

বঙ্গবন্ধু ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই ঔপনিবেশিক আমলের আমলা-শাসনের বদলে নির্বাচিত জেলা গভর্নর দ্বারা দেশ পরিচালনার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। তাকে হত্যা করার পর সেনাপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখলপূর্বক এ আমলা-শাসন ফিরিয়ে আনেন। ক্ষমতা আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে এক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়। দেশে সামরিক শাসনের অবসান হয়েছে; কিন্তু ক্ষমতার এই কেন্দ্রীভূত হওয়ার ব্যবস্থাটির পরিবর্তন হয়নি। দেশের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের উন্নয়নও রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্র ঢাকার অনুমোদন ছাড়া হয় না।

 দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাটের এখন অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। কিন্তু উন্নতি হলে কী হবে, লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি এ রাস্তাঘাটগুলোর কোনো মেইনটেন্যান্স নেই। বছর না যেতেই এ রাস্তাগুলোয় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। তা মেরামতের ব্যবস্থা নেই।

ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তা জবাব দিয়েছেন, আমাদের তহবিলে টাকার অভাব নেই। কিন্তু চিফ ইঞ্জিনিয়ারের অনুমোদন ছাড়া কিছু করার উপায় নেই। কিন্তু শ্রুতি আছে সেটা নাকি অনেক কঠিন ছিল। শেখ হাসিনার সরকার এসব ব্যবস্থাকে সহজ করে জবাবদিহিতার আওতায় এনেছেন।

 রাস্তা সংস্কার, নদী সংস্কার, প্রাইমারি স্কুল সংস্কার, সেতু সংস্কারসহ সর্বক্ষেত্রে এটা ঘটে প্রশাসনিক ক্ষমতা অতিরিক্ত কেন্দ্রীভূত বলে। আর যদি সেই ক্ষমতা আমলাদের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে ক্ষমতার সর্বোচ্চ চূড়ায় আটকে যায়, তাহলে গণতন্ত্রের যেমন ক্ষতি হয়, তেমনি গণ-উন্নয়নেরও।

হাসিনা-সরকারের আমলে তা হয়নি। কিন্তু ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ না হওয়ায় এবং আমলাদের হাতে ও রাজধানীতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকায় বিরাট অর্থ ব্যয়ে উন্নয়নের কাজ হলেও সেই উন্নয়নকে ধরে রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। সেই উন্নয়নের সঙ্গে জনমানুষের সম্পৃক্ততা কম। দুর্নীতির ঘোড়া উন্নয়নের সব ঘাস খেয়ে ফেলে। বঙ্গবন্ধু তাই ব্রিটিশ ও পাকস্তানি আমলের পুরনো ও গণবিরোধী আমলাতান্ত্রিক শাসনের কাঠামো ভাঙতে চেয়েছিলেন। তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ চেয়েছিলেন। তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করা হয়। তবে এর মধ্যেও আশা জাগায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দূর্নীতি দমন নীতি। তিনি নিজ দলের দূর্নীতিবাজদেরও ছাড় দেননা।

দেশ শাসন ও গণতান্ত্রিক শাসন-কাঠামো পুনরুদ্ধারে শেখ হাসিনার সাফল্য অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু তার তিন দফার শাসনামলেও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হয়নি। বরং তা আরও কেন্দ্রীভূত হয়েছে। আমলাতন্ত্রের দক্ষতা ও যোগ্যতা বাড়েনি। কিন্তু তার দাপট অব্যাহত রয়েছে। অনেক বিদেশি পর্যবেক্ষকও তাই বলেছেন, বাংলাদেশের বিপুল অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটেছে; কিন্তু তা যে তৃণমূল পর্যায়ে জনগণকে প্রণোদিত ও সেই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারছে না, তার মূল কারণ ব্যাপক দুর্নীতি এবং আরও দুর্ভাগ্যের কথা এই দুর্নীতি প্রশাসনের সর্বত্র বিরাজ করছে।

আমার ধারণা, দেশ শাসনে হাসিনা-সরকারের সাফল্য বিশাল। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে ব্যর্থতা একটু আছে কিন্তু তিনি তা কাটিয়ে তুলবেন। এটা শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব। নইলে সন্ত্রাস দমন থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলায় হাসিনা-সরকারের সাফল্যের কোনো তুলনা নেই। 

 দুর্নীতির উচ্ছেদ এবং সেই লক্ষ্যে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে অবশ্যই। দুর্নীতি এবং গণবিরোধী প্রশাসনের ঘাঁটি ভাঙতে হলে আওয়ামী লীগ সরকারকে দল সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন সংস্কারেও হাত দিতে হবে। সন্ত্রাসের মতো দুর্নীতির মহাদানবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে হবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ দ্বারা জনগণকে উন্নয়নের প্রতিটি কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।  ধারণা করা হয়, এ কাজটি একমাত্র শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষেই করা সম্ভব। আর কারও দ্বারা নয়।

ক্রাইম ডায়রি // রাজনীতি// জনস্বার্থে পুনরায় প্রকাশিত// সুত্রঃ অনলাইন মিডিয়ায় প্রকাশিত কলাম হতে ঈষৎ পরিবর্তিত ও সংক্ষেপিত