রাজধানীর কদমতলীতে বড়মেয়ের হাতে মা বাবা ও বোন হত্যার নেপথ্যেঃ ঘাতক ও তার স্বামী রিমান্ডে

যাদের সন্তান কিংবা পরিবারের কোন সদস্য মোবাইল গেম কিংবা ক্রাইম বিষয়ক টিভি চ্যানেলে আসক্ত তারা এবার সাবধান হোন।

রাজধানীর কদমতলীতে বড়মেয়ের হাতে মা বাবা ও বোন হত্যার নেপথ্যেঃ ঘাতক ও তার স্বামী রিমান্ডে

যাদের সন্তান কিংবা পরিবারের কোন সদস্য মোবাইল গেম কিংবা ক্রাইম বিষয়ক টিভি চ্যানেলে আসক্ত তারা এবার সাবধান হোন। কিছুদিন আগে এরকম ঘটনা ঘটেছিল । যা মিডিয়ায় সরব নিউজও হয়েছিল। অপ্রকাশিত  এমন অনেক ঘটনার আড়ালে মেহজাবিন কান্ড মোটামুটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। সবচেয়ে আশংকাজনক ঘটনা হলো এমন খুনিরা তাদের পরিবারের সদস্যদেরই খুন করে ফেলে। ফলে খুনির পূর্ব পরিকল্পনা আঁচ করা মুশকিল। পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, খুনি মেহজাবিন নিয়মিত ‘ক্রাইম প্যাট্রল’ দেখে হত্যার কৌশল রপ্ত করে। রাজধানীর কদমতলীতে মা, বাবা ও বোনকে হত্যার দায় একাই স্বীকার করে মেহজাবিন ইসলাম মুন হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য প্রকাশ করছেন গোয়েন্দাদের নিকট।

শরীফা আক্তার স্বর্নাঃ

যাদের সন্তান কিংবা পরিবারের কোন সদস্য মোবাইল গেম কিংবা ক্রাইম বিষয়ক টিভি চ্যানেলে আসক্ত তারা এবার সাবধান হোন। কিছুদিন আগে এরকম ঘটনা ঘটেছিল । যা মিডিয়ায় সরব নিউজও হয়েছিল। অপ্রকাশিত  এমন অনেক ঘটনার আড়ালে মেহজাবিন কান্ড মোটামুটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। সবচেয়ে আশংকাজনক ঘটনা হলো এমন খুনিরা তাদের পরিবারের সদস্যদেরই খুন করে ফেলে। ফলে খুনির পূর্ব পরিকল্পনা আঁচ করা মুশকিল। পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, খুনি মেহজাবিন নিয়মিত ‘ক্রাইম প্যাট্রল’ দেখে হত্যার কৌশল রপ্ত করে। রাজধানীর কদমতলীতে মা, বাবা ও বোনকে হত্যার দায় একাই স্বীকার করে মেহজাবিন ইসলাম মুন হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য প্রকাশ করছেন গোয়েন্দাদের নিকট।

পুলিশ জানিয়েছে, ‘ক্রাইম প্যাট্রল’ ও মোবাইল গেমে আসক্ত ছিলেন মেহজাবিন। মা, বাবা ও বোনকে হত্যার কৌশল রপ্ত করতে নিয়মিত ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘ক্রাইম প্যাট্রল’ দেখতেন। অপরাধবিষয়ক এ অনুষ্ঠানটির প্রতিটি পর্ব তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতেন।  সেইসঙ্গে তিনি একটি মোবাইলে অনলাইন ফোন গেমেও আসক্ত ছিলেন। অর্থের বিনিময়ে সেটি খেলতেন। তাতে নায়ক নানা কৌশলে শত্রুদের মেরে ফেলে। এ ছাড়া অচেতন করে হত্যার কৌশল সম্পর্কে জানতে অনলাইনে প্রচুর অনুসন্ধান চালান মেহজাবিন। তদন্ত কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, ক্রাইম প্যাট্রল দেখা, মোবাইল গেম খেলা ও অনলাইন অনুসন্ধানের মাধ্যমে পরিবারের তিন সদস্যকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। এসব ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

গত শনিবার সকালে কদমতলীর মুরাদপুর রজ্জব আলী সরদার রোডের পাঁচতলা বাড়ির দ্বিতীয়তলা থেকে মাসুদ রানা (৫০), তার স্ত্রী মৌসুমী ইসলাম (৪০) ও মেয়ে জান্নাতুল ইসলাম মোহিনীর (২০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অচেতন অবস্থায় মেহজামিনের স্বামী শফিকুল ইসলাম ও মেয়ে তৃপ্তিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় মেহজাবি ও তার স্বামী শফিকুলের বিরুদ্ধে কদমতলী থানায় মামলা হয়েছে। রোববার মেহজাবিনের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। চিকিৎসাধীন শফিকুলকেও এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মুন একাই তিনজনকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। তবে তার স্বজনরা বলছেন, অর্থ ও সম্পত্তির জন্য এ হত্যাকাণ্ড। এতে শফিকুলও জড়িত। এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য মুনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে পাশাপাশি  মেহজাবিনের স্বামী শফিকুলকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তিনিও এই হত্যা মামলার আসামি। সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক জাকির হোসাইন আসামিকে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিলেন। এর আগে ২০ জুন ওই পরিবারটির বড় মেয়ে মেহেজাবিন মুনকে চারদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছিলেন আদালত। গত শনিবার সকালে কদমতলীর মুরাদপুরে পাঁচতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেখান থেকে অচেতন অবস্থায় মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল ইসলাম ও মেয়ে তৃপ্তিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।  এই হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছেন মেহজাবিন ইসলাম মুন।

 

কেন এই হত্যাকান্ড??? ঘটনার নেপথ্যে টিম ক্রাইম ডায়রির অনুসন্ধানঃ---

মেহজাবিন জানান, তার বাবা বিদেশে থাকায় মা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। মা পরকীয়ায়ও লিপ্ত ছিলেন।তার দাবি, মা তাকে দিয়ে দেহব্যবসা করিয়েছেন। বোনকে দিয়েও মা দেহব্যবসা করাচ্ছিলেন।  মেহজাবিন আরও জানান, তিনি (মেহজাবিন) মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণিতে টেলেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন। অথচ তার মা তাকে দিয়ে দেহব্যবসা করিয়েছেন। বোনকে দিয়েও মা দেহব্যবসা করাচ্ছিলেন। ছোট বোনকে রক্ষা করতে তিনি নিজের বাসায় রেখেছিলেন। কিন্তু সেখানেও তাকে দেহব্যবসায় নিয়োজিত করা হয়। সম্প্রতি বাবা দেশে ফিরলে তার কাছে তিনি নালিশ দেন। কিন্তু মায়ের কোনো বিচার করেননি বাবা। এতে প্রচণ্ড হতাশাবোধ থেকে তিনি একক পরিকল্পনায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। । এসব নিয়ে প্রতিবাদও করেছিলেন মেহজাবিন। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। তার বিয়ে হলে ছোট মেয়ে মোহিনীকে দিয়ে তিনি দেহব্যবসা চালাচ্ছিলেন। এর মধ্যে শফিক ও মোহিনীর মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এছাড়া মেহজাবিনের বাবা মাসুদ রানা সৌদি আরবে আরেকটি বিয়ে করেছেন। এসব মিলিয়ে দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ থেকে পরিবারের সবাইকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মেহজাবিন।মেহজাবিনের বাবা মাসুদ রানার বড় ভাই সাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে কদমতলী থানায় মামলা করেন। মামলায় তিনি ভাতিজি মেহজাবিন ও তার স্বামী শফিকুল ইসলামকে আসামি করেছেন। তবে মামলায় পরকীয়া এবং দেহব্যবসার বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২৬ বছর ধরে সৌদি আরবে ছিলেন মাসুদ রানা। তিনি মাঝে মধ্যে দেশে আসতেন। তার বড় মেয়ে মেহজাবিনের সঙ্গে শফিকুলের বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর শফিক তার শ্বাশুরী মৌসুমী ইসলামকে (মেহজাবিনের মা) বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে জ্বালা-যন্ত্রণা দিয়ে আসছিলেন। সব সময় তারা টাকা-পয়সা দাবি করতেন। তাদের নামে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্যও তারা চাপ দিতেন। রাজি না হওয়ায় আসামিরা মাসুদ রানা, মৌসুমী ইসলাম ও জান্নাতুল ইসলাম মোহিনীকে ছয় মাস ধরে হত্যার পরিকল্পনা করে আসছিলেন। তিন মাস আগে মাসুদ রানা দেশে ফিরে কদমতলীর মুরাদপুর এলাকায় স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছিলেন। এজাহারে আরও বলা হয়, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে আসামিরা শ্বশুরের বাসায় আসেন। রাতে চা, কপি ও পানির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তিনজনকে অচেতন করেন। এরপর তাদের হাত-পা বেঁধে ও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।

মামলার বাদী সাখাওয়াত হোসেন মেহজাবিনের চাচা।  মামলার দুই নম্বর আসামি শফিক একজন খুনি ও একাধিক মামলার আসামি। পাঁচ বছর আগে কেরানীগঞ্জে তিনি একজনকে হত্যা করেন। সে মামলা থেকে রেহাই পেতে শ্বশুরের কাছ থেকে টাকা নিতে প্রায় স্ত্রী মেহজাবিনকে চাপ দিতেন। টাকার জন্য স্ত্রীর সঙ্গে তার প্রায় ঝগড়া হতো। এছাড়া শফিক তার শ্যালিকা মোহিনীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনা জানতে পেরে শাশুড়ি মৌসুমী তাকে বাধা দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। শফিকের সঙ্গে মৌসুমী পেরে উঠতে না পেরে মোহিনীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠান। তবে শফিক তদবির করে তাকে কারাগার থেকে বের করে আনেন এবং আবারও তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক শুরু করেন। এ নিয়ে স্ত্রী মেহজাবিন এবং শাশুড়ি মৌসুমীর সঙ্গে শফিকের কলহ লেগেই থাকত। চার বছর আগে শাশুড়িকে হত্যার উদ্দেশ্যে শফিক তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। তার চিকিৎসা করাতেও বাধা দেওয়া হয়। দরজা-জানালা বন্ধ করে প্রায়ই শাশুড়ি মৌসুমীকে শফিক মারধর করতেন।

এদিকে কদমতলী থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর বলেন, মেহজাবিনের স্বামীকেও আমরা সন্দেহের বাইরে রাখছি না। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সম্পত্তির বিষয়ও এখানে রয়েছে। তদন্তে এসব আসবে। মেহজাবিনের খালা ইয়াসমিন জানান, পাঁচ বছর আগে পারিবারিকভাবে শফিক ও মেহজাবিনের বিয়ে হয়। এর কিছুদিন পর মেহজাবিনের আগের সম্পর্ক নিয়ে তাদের দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। বিয়ের ছয় মাসের মাথায় মেহজাবিনের সাবেক কথিত প্রেমিক আমিনকে হত্যা করেন শফিক। এর আগে শাশুড়ি মৌসুমী ও খালাশাশুড়ি শিউলিকে দিয়ে আমিনকে তিনি ডেকে নেন। এ কারণে আমিন হত্যা মামলায় ওই দুজন ও মেহজাবিনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় ছয় মাস কারাগারে থাকার পর জামিন পান শফিক। এরপর মোহিনীর ওপর নজর পড়ে তার। নানাভাবে তাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন শফিক। বিষয়টি নিয়ে একপর্যায়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন মৌসুমী। আবার তার বিরুদ্ধেও পালটা মামলা করেন শফিক। এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শফিকের দাবি, তার স্ত্রী মেহজাবিন অনেকদিন ধরে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করে আসছিলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ হতো। মা-বাবার সঙ্গেও তার সম্পর্ক ভালো ছিল না।

 

ক্রাইম ডায়রি//মহানগর-ক্রাইম