সারাদেশে হাজারের বেশি মানি এক্সচেঞ্জ অবৈধ - সিআইডি

আমাদের অভিযানের কারণে অনেক অবৈধ প্রতিষ্ঠান অফিস গুটিয়ে কাঁধে-ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে ঘুরে ঘুরে ফোনে ফোনে যোগাযোগ করে ব্যবসা করছে।  

সারাদেশে হাজারের বেশি মানি এক্সচেঞ্জ অবৈধ - সিআইডি
ছবি-প্রতিকী

যার যেখানে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা দরকার, সেখানে তা পৌঁছে দিচ্ছে। বিনিময়ে ডলার বা অন্য বিদেশি মুদ্রার ন্যায্যমূল্যের তুলনায় বেশি টাকা নিচ্ছে। 

শাহাদাত হোসেন রিটনঃ

সারাদেশে অবৈধভাবে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর সংখ্যা হাজারখানেক। সম্প্রতি, সিআইডি’র অভিযানে এমন তথ্য জানা গেছে। জানুয়ারী ২৩,২০২৩ইং মঙ্গলবার রাজধানীর পাঁচটি স্থানে একযোগে অভিযান চালায় সিআইডি’র কয়েকটি অভিযানিক টিম। এসময় অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের ১৪ জন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে সিআইডি। 
জানা যায়, দেশে বৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান ২৩৫টি। এর বাইরে হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া নামমাত্র প্রতিষ্ঠান রয়েছে আরও কয়েক’শ। যেসব প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা ফোনে ফোনে বা ব্যাগ কাঁধে ঘুরে ঘুরে অবৈধভাবে দেশি-বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচা করে থাকেন। 

জানুয়ারী ২৪,২০২৩ইং বুধবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া। 

অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ টিমের তথ্য ও সহযোগিতায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আশকোনা, গুলশান-১, শ্যামলী,  এবি ও চায়না মার্কেটে একযোগে পাঁচজন বিশেষ পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়।  অভিযানে ১৪ জনকে গ্রেফতারও করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন-  আবদুল কুদ্দুস, কামরুজ্জামান রাসেল, মনিরুজ্জামান, নেওয়াজ বিশ্বাস, আবুল হাসনাত, শাহজাহান সরকার আবু তালহা ওরফে তাহারত ইসলাম তোহা, আছাদুল শেখ, হাছান মোল্যা, আবদুল কুদ্দুস, হাসনাত এ চৌধুরী, শামসুল হুদা চৌধুরী ওরফে রিপন, সুমন মিয়া ও তপন কুমার দাস।

সিআইডি প্রধান বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নিজস্ব অফিস এবং ভাসমান যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচা করে আসছিলেন।  গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সিআইডি প্রধান বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা সমমূল্যের বিদেশি মুদ্রা অবৈধভাবে কেনাবেচা করে আসছিল। সারা দেশে আরও এক হাজারের বেশি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের কার্যক্রম সম্পূর্ণ অবৈধ।

তাদের কাছ থেকে ১ কোটি ১১ লাখ ১৯ হাজার ৮২৬ টাকা সমমূল্যের ১৯টি দেশের মুদ্রাসহ সর্বমোট এক কোটি ৯৯ লাখ ৬১ হাজার ৩৭৬ টাকা জব্দ করা হয়। জানা গেছে, এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকায় অবৈধ।

অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, তাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণ অবৈধ। আমরা আমাদের অপারেশনাল কার্যক্রম অব্যাহত রাখব। আমাদের অভিযানের কারণে অনেক অবৈধ প্রতিষ্ঠান অফিস গুটিয়ে কাঁধে-ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে ঘুরে ঘুরে ফোনে ফোনে যোগাযোগ করে ব্যবসা করছে। যার যেখানে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা দরকার, সেখানে তা পৌঁছে দিচ্ছে। বিনিময়ে ডলার বা অন্য বিদেশি মুদ্রার ন্যায্যমূল্যের তুলনায় বেশি টাকা নিচ্ছে। 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিআইডিপ্রধান বলেন, সময় ও টাকা বাঁচায় ও  বাড়তি কোনো ভাড়া না লাগায় প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে বাসায় বসেই টাকা পাঠান। দেশের মানুষ ঘরে বসে টাকা পেয়ে যায়। তবে এটা অবৈধ। আমাদের দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে। 

তিনি বলেন, অবৈধ এই কার্যক্রমের সাথে যেই জড়িত হন কোন ছাড় দেয়া হবেনা। এমনকি, বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য যেকোনো ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা যদি হুন্ডি কিংবা অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে জড়ানোর তথ্য মেলে, তবে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সোর্স ও সিআইডির সোর্সের মাধ্যমে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু সিআইডি নয়, সব এজেন্সি মিলেই কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে আলাদা আইন আছে। সেই অনুসারে কাজ করা হচ্ছে। অবৈধ মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

ক্রাইম ডায়রি//ক্রাইম