আপন ছোটভাইকে অপহরন করে কিডনি বিক্রয়ের চেষ্টাঃ সামাজিক বন্ধনের নাজুক পরিস্থিতি

Trying to sell kidneys by kidnapping your younger brother: fragile situation of social bonds

আপন ছোটভাইকে অপহরন করে কিডনি বিক্রয়ের চেষ্টাঃ সামাজিক বন্ধনের নাজুক পরিস্থিতি

মায়ের পেটের আপন বড় ভাই অপহরণকারী ফাহাদ বিন ইহসান তারেক অপহৃত রায়হান এহসান রিহানের আপন  বড়ভাই। সময় মতো ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ বাবা মো. আবু তাহের  এ ঘটনায় ছেলের বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন ।

চাঁদপুর সংবাদদাতাঃ

কলি কাল নিয়ে ভয় পেত পুরাতন শতাব্দীর লোকজন। আর নতুন কিছু দেখলেই তারা কলি কাল বলে নানান মন্তব্য করত। সেই মন্তব্যগুলো এখন বাস্তব হয়েই দেখা দিচ্ছে। যদিও সে আমলেও এখনকার চেয়ে বেশি অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। কিন্তু ঠান্ডা মাথার খুনি বলতে এখনকার মানুষকেই বোঝায়। সম্প্রতি,  চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে আপন ছোটভাই রায়হান এহসান রিহানকে (৫) অপহরণ করে কিডনি বিক্রয়ের চেষ্টার অভিযোগে বড়ভাইকে আটক করেছে পুলিশ। আর এতেই সামাজিক বন্ধনের নাজুক অবস্থা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করা যায়। ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০ইং সোমবার বিকালে তাকে আটক করে চাঁদপুর পুলিশ।

মায়ের পেটের আপন বড় ভাই অপহরণকারী ফাহাদ বিন ইহসান তারেক অপহৃত রায়হান এহসান রিহানের আপন  বড়ভাই। সময় মতো ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ বাবা মো. আবু তাহের  এ ঘটনায় ছেলের বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন । তিনি বলেন, আমি আমার ছেলের যাবজ্জীবন চাই। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, রিহানকে অপহরণের পর বাসায় একটি চিঠি লিখে যায় তারেক। চিঠির অংশবিশেষ ছিল এমন “ ‘আমি শুধু এ দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম। আমি সেদিন কিডনি বিক্রি করেছিলাম। ঠিক এদিন থেকে আপনারা আমার অবহেলা করা শুরু করছেন। অথচ আপনাদের অত্যাচারে আমি বাধ্য হয়েছি, নিজের অঙ্গ বিক্রি করতে। আপনারা আমার জীবনের সব শেষ করে দিয়েছেন। আমার সন্তানের মুখ পর্যন্ত আমি আজও দেখি নাই। আমার জীবন নষ্ট করে আপনারা শান্তিতে থাকবেন। ভাবলেন কীভাবে। আমি এতদিন অপেক্ষা করেছি। আপনাদের হাতে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আপনারা আমার কোনো ব্যবস্থা করে দেন নাই। আপনার সন্তান যেখানে বেকার সেখানে আপনারা হিন্দুর সন্তানকে ২০ লাখ টাকা দেন ব্যবসা করার জন্য। আপনাদের টাকা-পয়সা মানুষের জন্য। এতদিন কোনো বাচ্চা পেশেন্ট পাই নাই। তাই আপনাদের সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করেছি। আমার মতো এবার আপনাদের ছোট ছেলে কিডনি দিবে। আপনারা আমার ব্যবস্থা করেন নাই তাই এটা ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিল না। আপনারা আপনাদের টাকা-পয়সা নিয়েই থাকেন। আর মানুষের ছেলেদেরই বড় বানান। আমার কিডনি বিক্রির সময় যেমন কিছু করতে পারেন নাই। এবারও পারবেন না, আপনাদের ছোট ছেলের সময়।’

আটক তারেকের মা ফরিদা সুলতানা শিখা সাংবাদিকদের জানান, আমার বড় ছেলে ছোটভাইয়ের সঙ্গে এমন করবে এটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি।
তারেকের বাবা চিঠির সূত্র ধরেই হাজীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন । পরে কৌশলে তারেককে ৫ লাখ টাকা দেয়ার কথা বলে হাজীগঞ্জে নিয়ে এলে গোপনে হাজীগঞ্জ থানার এসআই মোশারফ তারেককে আটক করেন এবং ছোটভাইকে উদ্ধার করে বাবা মায়ের কাছে হস্তান্তর করেন। 

পুলিশের হাতে আটক তারেক জানান, মায়ের কারণে আমার স্ত্রী আজ  অন্যের শয্যায় যাচ্ছে। আমি আমার কিডনি বিক্রয় করে ব্যবসা শুরু করেছি। তবুও আমার গর্ভধারিণী মা আমাকে ব্যবসার জন্য টাকা না দিয়ে আরেকজনকে আমার সামনে ২০ লাখ টাকা হাওলাত দেয় ব্যবসা করার জন্য। আমি স্ত্রী-সন্তান হারিয়ে আমার মায়ের জন্য আজ  পথে পথে হাঁটছি। তারা আমাকে বাধ্য করেছে এমন ঘটনা ঘটাতে।তারেক বলেন, আমি আমার ছোটভাইকে অপহরণ করেছি শুধুমাত্র টাকার জন্য। কিডনি বিক্রয়ের কথাটি চিঠিতে লিখে আমার মা-বাবাকে ভয় দেখিয়ে ছিলাম।
 
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোশারফ ক্রাইম ডায়রিকে জানান, অপহরণকারীকে আটক করা হয়েছে।  অপহরণকারীকে আদালতে প্রেরণ করা হবে। পরে আদালত যা করার তা করবেন। আর এ ঘটনায় বিস্ময়ে হতবাক হয়েছে পুরো দেশ। পিতামাতাকে সন্তানদের প্রতি সমান দৃষ্টি ও যত্নশীল হবার আহবান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।

ক্রাইম ডায়রি//ক্রাইম