ডিএনএ ল্যাব সচল হওয়া জরুরীঃ নিশ্চিত করতে হবে সাড়ে চারহাজার মামলার ভবিষ্যৎ

সারা দেশে দুটি ল্যাবের মধ্যে জাতীয় ডিএনএ ল্যাব বন্ধ থাকায় তাদের ল্যাবে চাপ বাড়ছে। তার মতে, আলামত যত দ্রুত পরীক্ষা শেষ হবে, ততই ভালো ফলাফল আসে। রিপোর্টে হেরফের হলে সুবিচার বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে।

ডিএনএ ল্যাব সচল হওয়া জরুরীঃ নিশ্চিত করতে হবে সাড়ে চারহাজার মামলার ভবিষ্যৎ
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মালটিসেক্টরাল প্রোগ্রাম প্রকল্পের আওতায় এই কার্যক্রম চলে।  

অনলাইন ডেস্কঃ

সাড়ে ৪ হাজার মামলার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারন দেশের  সর্বাধুনিক জাতীয় ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাব গত ৩ মাস ধরে অচল।  ল্যাবে জমেছে প্রায় দেড় হাজার মামলার আলামত। এছাড়া ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত আরও ৩ হাজার মামলার আলামত পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পড়ে আছে । নেই রক্ষনাবেক্ষনের আধুনিক মানের কোন ব্যবস্থা। তাই,  সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ড্যামেজ হয়ে যাচ্ছে আলামতগুলো। ফলে এগুলো থেকে শতভাগ সঠিক ফলাফল মিলছে না। সারা দেশে দুটি ল্যাবের মধ্যে জাতীয় ডিএনএ ল্যাব বন্ধ থাকায় তাদের ল্যাবে চাপ বাড়ছে। তার মতে, আলামত যত দ্রুত পরীক্ষা শেষ হবে, ততই ভালো ফলাফল আসে। রিপোর্টে হেরফের হলে সুবিচার বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে।

 ধর্ষণের অভিযোগে মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছেন আদালত। এ অবস্থায় সারা দেশ থেকে পরীক্ষার জন্য নমুনা আসছে। কিন্তু সময়মতো রিপোর্ট না পাওয়ায় একদিকে তদন্ত কর্মকর্তারা মামলার চার্জশিট দিতে পারছেন না। ফলে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আবার এ ধারায় যারা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেফতার আছেন তারাও জামিন নিতে পারছেন না।

জানা গেছে,  রিঅ্যাজেন্ট না থাকায় ২৭ অক্টোবর থেকে ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ। ফলে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার মামলার আলামত জমে গেছে। যথাসময়ে অধিদপ্তরকে জানালেও এখনো রিঅ্যাজেন্টের ব্যবস্থা করা হয়নি। এর আগে জেনেটিক অ্যানালাইজার মেশিনের একটি পার্টস নষ্ট থাকায় ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এভাবে মাঝেমধ্যেই অচলাবস্থা তৈরি হয়।

জানা গেছে, কর্মকর্তাদের বেতনও বকেয়া পড়ে থাকে মাঝেমধ্যেই। ফলে তারা চাকরি ছেড়ে চলে যান।মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মালটিসেক্টরাল প্রোগ্রাম প্রকল্পের আওতায় এই কার্যক্রম চলে।   প্রকল্প অফিস থেকে ল্যাবের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়। 

জানা গেছে, ২০০৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এ ল্যাবে ৮৪৪০টি মামলার ২৬ হাজার ৯৬৮টি আলামত পাঠানো হয় ডিএনএ পরীক্ষার জন্য। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৯৫৩টি রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪ হাজার ৪৮৭টি মামলার রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব হয়নি। রিপোর্ট না দেওয়ার ব্যাপারে নানা রকম অজুহাত দেখাচ্ছেন ল্যাব সংশ্লিষ্টরা। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এ ল্যাব থেকে প্রতিবছর ৫০ শতাংশ কিংবা তারও কম মামলার ডিএনএ রিপোর্ট পুলিশ কিংবা আদালতকে সরবরাহ করা হচ্ছে। বাকি নমুনাগুলোর রিপোর্ট নানা কারণে সরবরাহ করা হয় না। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মাসের পর মাস ধরনা দিয়েও ল্যাব থেকে রিপোর্ট পাওয়া যায় না। ডিএনএ ও ফরেনসিক এভিডেন্স খুবই টাইম সেনসেটিভ। বেশিরভাগ সময় নারী নির্যাতনের অভিযোগে মিথ্যা মামলা হয়। ধর্ষণ মামলায় দ্রুত বিচার, নারী নির্যাতন মামলায় সত্যতা নিশ্চিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ডিএনএ টেস্ট চালু করা হয়। 

জানা গেছে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০০৬ সালে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মালটিসেক্টরাল প্রোগ্রামের আওতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে ডিএনএ ফরেনসিক ল্যাবরেটরির কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ২০১০ সালের এপ্রিলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের নিউক্লিয়ার মেডিসিন ভবনের ১১ তলায় আরেকটু বড় পরিসরে এই ল্যাবরেটরি স্থানান্তর করা হয়। প্রতিনিয়ত এ পরীক্ষার গুরুত্ব বাড়তে থাকায় পরে ডিএনএ ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর গঠন করা হয়। 

ক্রাইম ডায়রি/জাতীয়