কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে গুড়ঃ কি খাচ্ছি আমরা?

তারা চিনির সঙ্গে বিভিন্ন রকমের কেমিক্যাল, চুন, হাইড্রোজ, ফিটকিরি, ডালডা ও আটা ব্যবহার করে আখের ভেজাল গুড় তৈরি করে আসছিলেন। যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে গুড়ঃ কি খাচ্ছি আমরা?
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার মূলে কুঠারাঘাত করেছে এসব কেমিক্যাল নামক বিষ। তাই সময় থাকতেই মানুষকে নিজ ও পরিবারের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে খাদ্যভেজালকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

ইঞ্জিনিয়ার খাদেমুল ইসলাম, উত্তরাঞ্চলীয় প্রধানঃ

চুন-আটা-কেমিক্যালে তৈরিখাঁটি আখের গুড়। গুড়ের মতো খাদ্যও ‍যদি এমন দুর্নীতির শিকার হয় তবে কোথায় যাবে সাধারন মানুষ। এহেন জঘন্য কাজে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে কঠিন ক্ষতির মুখে পড়ে যাবে সাধারন মানুষের স্বাস্থ্য। কোন রোগবালাই নাই কিন্তু মানুষ হঠাৎ করেই আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে ডায়াবেটিস,কিডনি সহ নানান জটিল রোগে। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার মূলে কুঠারাঘাত করেছে এসব কেমিক্যাল নামক বিষ। তাই সময় থাকতেই মানুষকে নিজ ও পরিবারের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে খাদ্যভেজালকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

গুড় তৈরি হচ্ছে কেমিক্যাল দিয়ে। এরচেয়ে বড় দু:খজনক আর কি আছে? সারাদেশের মফস্বল জেলা গুলিতে এর প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। অল্পতে বড় লোক হবার ইচ্ছে কিছু মানুষকে এই জঘন্য কাজ করার পিছনে নিয়ামক হয়ে কাজ করেছে।সম্প্রতি   রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানীতে রমজান মাস উপলক্ষে ক্ষতিকর বিভিন্ন উপকরণ কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছিল ভেজাল আখের গুড় সেটিখাঁটি গুড়হিসেবে সরবরাহ করা হতো ঢাকাসহ সারা দেশে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেই ভেজাল আখের গুড়ের কারখানাগুলোর সন্ধান পায় র‌্যাব ৫। এপ্রিল ১১ মঙ্গলবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে সেই ভেজাল গুড়ের কারখানাগুলোয় অভিযান চালায়  র‌্যাব।

সময়  রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী বাজারের ৭টি কারখানা থেকে হাজার ৬০০ কেজি ভেজাল গুড় জব্দের পর সেগুলো ধ্বংস করা হয় একইসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নগদ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করে এপ্রিল ১২  বুধবার দুপুরে র‌্যাব- সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য নিশ্চিত করা হয়

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ফজলে এলাহী জানান, রমজান মাসে শরবতের জন্য সারা দেশেই আখের গুড়ের চাহিদা বেড়ে যায় আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার দিয়াড়পাড়া গ্রামের মিঠন আলী, সবুজ আলী, মহন আলী, রতন প্রামানিক, রকি আহমেদ, কাজিম আলী লিটন হোসেন ভেজাল উপকরণ দিয়ে কৃত্রিম উপায়ে আখের গুড় তৈরি করছিলেন

তারা চিনির সঙ্গে বিভিন্ন রকমের কেমিক্যাল, চুন, হাইড্রোজ, ফিটকিরি, ডালডা আটা ব্যবহার করে আখের ভেজাল গুড় তৈরি করে আসছিলেন যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এমন সংবাদের ভিত্তিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর র‌্যাব ৫  বাঘা উপজেলার আড়ানীতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে

সময় ভেজাল গুড় গুড় তৈরির উপকরণ জনসন্মুখে ধ্বংস করা হয় ছাড়া ভেজাল গুড় উৎপাদন বাজারজাতের অপরাধে সংশ্লিষ্ট কারখানার মালিকদের মোট লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ছাড়া হাজার ৬০০ কেজি ভেজাল গুড় ধ্বংস করা হয়এছাড়া নাটোরের কারখানার পাশেই আখ ক্ষেত কিন্তু কারখানায় আখের কোন অস্তিত্ব নাই আখের গুড় তৈরি হচ্ছে চিনি,ফিটকিরি,চুন,রং হাইড্রোজ দিয়ে অসিত গুড় কারখানা সাদিপুর,লালপুর,নাটোর গৌতম গুড় কারখানা হালুডাংগা,লালপুর,নাটোর এর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও বড়াইগ্রামের জোয়াড়ি ইউনিয়নের আটঘরিয়া ও ভবানীপুর গ্রামে ওই অভিযান চালানো হয়। এ সময় ২ হাজার ৭০০ কেজি আখের চিনি ও কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি ভেজাল খেজুরের গুড় জব্দ করা হয়। সেখানে তিনজনকে ৬২ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

র‌্যাব-৫-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় চিনি, চুন, ফেব্ররিক রং, ফিটকিরি ও সোডাসহ কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি ভেজাল ১ হাজার ৮০০ কেজি খেজুরের পাটালি গুড় ও ৯০০ কেজি তরল গুড় উদ্ধার করা হয়। পরে নাটোর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান তানভীর ভেজাল গুড় তৈরি ও মজুদ করার দায়ে ছলিমউদ্দিন প্রামানিক (৪৫), আব্দুল মান্নান (৪৫) ও আতিয়ার রহমানকে (৩২) মোট ৬২ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ সময় র‌্যাব জব্দ করা গুড় ও অন্য উপকরণ সবার সামনে ধ্বংস করে।

অন্যদিকে, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় চিনি ও চুন দিয়ে ভেজাল খেজুরের গুড় তৈরি করার দায়ে একটি কারখানার মালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। উপজেলার ধানধারা গ্রামে ওই কারখানায় অভিযান চালিয়ে ৫০ কেজি ভেজাল খেজুরের গুড় জব্দ করেন অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেল।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি ধানধারা গ্রামে মৌসুমি গুড়ের ব্যবসায়ী মশগুল হোসেন তাঁর বাড়িতে একটি কারখানা তৈরি করে সামান্য খেজুরের রসের সঙ্গে চিনি ও চুন মিশিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি করে আসছিলেন। স্থানীয় মানুষের মাধ্যমে অভিযোগ পেয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরকে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ। আজ সকাল ছয়টার দিকে ধানধারা গ্রামের ওই কারখানায় অভিযান চালায় ভোক্তা অধিদপ্তর। অভিযানে নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান। তাঁরা কারখানায় চিনি ও চুন দিয়ে ভেজাল খেজুরের গুড় তৈরি করতে দেখেন। এ সময় ৫০ কেজি ভেজাল খেজুরের গুড় ও গুড় তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করে ধ্বংস করা হয়। একই সঙ্গে ভেজাল গুড় তৈরির দায়ে কারখানার মালিক মশগুল হোসেনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

বিশেষ সুত্রে জানা গেছে, শিবালয়ের পাশের হরিরামপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ও বাল্লা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামেও ভেজাল খেজুরের গুড় তৈরি হচ্ছে। খেজুরের রস ছাড়াই ঝোলাগুড়, চুন, রং ও চিনি দিয়ে এসব গুড় বানানো হচ্ছে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এসব গুড় কম দামে বিক্রি হওয়ায় গরিব মানুষ এগুলো কিনে খাচ্ছেন।

ক্রাইম ডায়রি/ক্রাইম