অপসারিত শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত-দুদক সচিব

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গণমানুষের হৃদয়ের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে দুদক। দফতর ভিত্তিক বিভিন্ন দূর্নীতির কারনে সাধারন মানুষ জুলুমের শিকার হতো। দুদকের অভিযানে ফাইল দুর্নীতিসহ সরকারী অফিসে হয়রানির পরিমাণ কমেছে। অন্ততঃ দুদকের ভয়ে হলেও মানুষ এখন দূর্নীতি করতে চিন্তা-ভাবনা করে।

অপসারিত শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত-দুদক সচিব
সম্প্রতি দুদকের একজন কর্মকর্তাকে বর‌খাস্ত করায় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে।  এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মাহবুব হোসেন বলেছেন, বহু অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার কারণেই দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারিত করা হয়েছে।
শরীফা  আক্তার স্বর্নাঃ
দুর্নীতি দমন কমিশন একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এবং বিভিন্ন সেক্টরে জিরো করাপশন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে সফলতা অর্জন করতে পেরেছে। বিভিন্ন দপ্তরে ফাইল দূর্নীতি ও অমানবিক হয়রানির পরিমাণ কমেছে। বাহিরের দূর্নীতির পাশাপাশি ঘরোয়া দূর্নীতি ও জুলুমের ব্যাপারেও দুদক বরাবরই সজাগ। তাই কখনই দুদকে কেউ আভ্যন্তরীণ দুর্নীতির সাহস পায়নি। তবে অভিযোগের প্রেক্ষিতে কারো বিরুদ্ধে যদি নিয়ম বহির্ভূত আচরন পরিলক্ষিত হয় তবে তাকে অবশ্যই শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। এতে করে শৃঙ্খলা বজায় থাকে। যেক্ষেত্রে দুদক সফল। 
সম্প্রতি দুদকের একজন কর্মকর্তাকে বর‌খাস্ত করায় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে।  এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মাহবুব হোসেন বলেছেন, বহু অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার কারণেই দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারিত করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারী ২০,২০২২ইং রোববার দুদক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের এই কথা বলেন।

সম্প্রতি সহ-উপপরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়েই দুদকের পক্ষে লিখিত বক্তব্য দেন সচিব। সংবাদ সম্মেলনে দুদক সচিব জানান, শরীফ উদ্দিনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু অভিযোগ কমিশনে আসায় তাকে অপসারণ করতে হয়েছে। দুদক সচিব বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মচারীদের অসদাচরণ ও অন্যান্য অপরাধের জন্য শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধি রয়েছে। দুদক (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালার ৫৪(২) বিধিতে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই অপসারণের বিধান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি অনুযায়ী দুদক ছাড়াও দেশের অনেক দফতরে এ ধরনের আইন ও বিধি বিদ্যমান। সে দফতর বা প্রতিষ্ঠানগুলোও শৃঙ্খলার স্বার্থে প্রয়োজনে তা প্রয়োগ করে। শরীফ উদ্দিনের ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে।’

তিনি জানান, দুদক ৫৪(২) বিধি অত্যন্ত সীমিত ও অপরিহার্য ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। কমিশনের শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থেই শরীফ উদ্দিনকে অপসারণ করা হয়েছে। কমিশনের সভায় বিস্তারিত আলোচনার পরই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দুদক সচিব বলেন, অপসারণের আদেশ জারির পর থেকেই বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বিষয়টি প্রচারিত হচ্ছে। মূলত একতরফা তথ্যের ভিত্তিতেই এসব সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে।

গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, প্রচারিত বর্ননা  প্রকৃত ঘটনার বিপরীত। িনিজের অপরাধ ও কর্মের দায় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শরীফ উদ্দিন কিছু মামলাকে গুরুত্বপুর্ণ বলে প্রচার করে ঐসব মামলা বা অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে মূল্যায়ন করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসাবে দাবী করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাই প্রভাবশালীদের চাপে তাকে অন্যায়ভাবে তাকে অপসারণ করা হয়েছে বলে তিনি দাবী করেছেন। গণমাধ্যমগুলোও সেটাই প্রচার করছে।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে সচিব বলেন, ‘আপনাদের পরিস্কারভাবে বলতে চাই, দুর্নীতি দমন কমিশন কোন প্রভাব আমলে নেয় না এবং প্রভাবিত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে না। শরীফ উদ্দিনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বহু অভিযোগ কমিশনে জমা পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, কোনো অনুসন্ধান বা তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া মাত্র দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত নির্দেশিকা অনুসরণ না করে নিজের খেয়ালখুশি মত কাজ করতেন শরীফ উদ্দিন।’

সচিব আরো বলেন, ‘অনুসন্ধান বা তদন্তকাজ পরিচালনার সময় তিনি অভিযোগের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট নয়, এমন অনেক ব্যক্তিকে নোটিশের মাধ্যমে বা টেলিফোনের মাধ্যমে ডেকে এনে তাদের হয়রানি করতেন, যার প্রমাণ দুদকের কাছে রয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধান ও তদন্তের স্বার্থে কোনো ব্যক্তির ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ বা নো ডেবিট করার প্রয়োজন হলে তার জন্য আইন ও বিধিতে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। কমিশনের সম্মতিতে আদালতের আদেশেই কেবল কোনো একাউন্ট ফ্রিজ করা যায়। কিন্তু শরীফ উদ্দিন এ নিয়মের তোয়াক্কা করতেন না এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাতেনও না।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এ কর্মরত থাকাকালে শরীফ উদ্দিন আদালতের অনুমতি ছাড়াই একটি বেসরকারি ব্যাংকের হিসাব নো ডেবিট করার নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে রিট করা হলে আদালতও বলেন যে, কমিশনের অনুমোদন ছাড়া কোনো অ্যাকাউন্টের অর্থ নো ডেবিট করার ক্ষমতা দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তার নেই। ফলে শরীফ উদ্দিনের এ কার্যকলাপ ক্ষমতার অপব্যবহার, কর্তব্যে অবহেলা, অসদাচরণ ও অদক্ষতার পর্যায়ে পড়ে।

দুদক সচিব জানান, কমিশনকে পাস কাটিয়ে ও আদালতের অনুমতি না নিয়েই দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭ এর বিধি ১৮ লঙ্ঘণ করে লিখিতভাবে ২৫টি ব্যাংক হিসাব ও মৌখিকভাবে আটটিসহ মোট ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ বা ফ্রিজ করেছেন শরীফ উদ্দিন। যার ফলে ভুক্তভোগীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; যা কমিশনকে বিব্রত করেছে।

শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি মামলায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তার জবানবন্দি গ্রহণের জন্য দফতরে ডেকে নির্মমভাবে মারধরের অভিযোগও কমিশনের কাছে এসেছে বলে জানান সচিব। তিনি বলেন, শারীরিক নির্যাতনের শিকার ওই ব্যক্তির অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিতও হয়েছে। এমন আরো অভিযোগ থাকলেও শরীফের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে কেউ প্রকাশ্যে বা লিখিতভাবে অভিযোগ জানাতে সাহস করেননি।

এছাড়াও তার নিজের ভাই ও নিকটাত্মীয়কে প্রভাব খাটিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কর্ণফুলি গ্যাস কোম্পানীতে চাকরি দেয়ার অভিযোগেরও প্রমাণ মিলেছে বলে জানান সচিব। তিনি বলেন, অবৈধ অর্থ উপার্জন, অনুসন্ধানের নামে হয়রানি, প্রভাব খাটিয়ে নিজের শ্বাশুড়ীর নামে অবৈধ গ্যাস সংযোগসহ তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। এমনকি পটুয়াখালীতে অবস্থানকালে দুদকের পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে বলে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।

গনমাধ্যমকে দুদক সচিব বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ বা কম গুরুত্বপূর্ণ যাই হোক না কেন, দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল কর্মচারীই নির্ভয়ে ও নির্মোহভাবে দায়িত্বপালন করে থাকেন। কিন্তু শরীফ উদ্দিন তা করতে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছেন। দুদকের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রাখার স্বার্থে  অভিযুক্তর ব্যাপারে   দুদক ব্যবস্থা নিয়েছে বলে তিনি জানান।

ক্রাইম ডায়রি// ক্রাইম