মতিঝিলে হত্যার খলনায়ক কে এই শ্যুটার মাসুম?

ব্যস্ততম সড়কে অস্ত্র উঁচিয়ে আলোচিত এই খুনের অনেকটাই কিনারা করতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।

মতিঝিলে হত্যার খলনায়ক কে এই শ্যুটার মাসুম?

প্রযুক্তির সহায়তায় সনাক্ত করে বগুড়া পুলিশের সাহায্যে সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মাসুমের সহযোগীমোটরসাইকেলের চালককেও শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি

কালিমুল্লাহ দেওয়ান রাজাঃ

দিনে দুপুরে সিনেমা স্টাইলে প্রকাশ্যে গুলি করে মানুষ হত্যা ছোটখাটো বিষয় নয়। আর তা যদি হয় খোদ রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের মতো জায়গায়। প্রশাসনিক বলয়ের মাঝে এমন ঘটনা রীতিমতো বিস্ময়কর।  

তবে বসে নেই প্রশাসন। অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে  মতিঝিল আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যারহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। ব্যস্ততম সড়কে অস্ত্র উঁচিয়ে আলোচিত এই খুনের অনেকটাই কিনারা করতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।

কিলিং মিশনে সরাসরি জড়িত দুহাতে অস্ত্র চালনায় পারদর্শী শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মার্চ ২৮,২০২০ ইং রোববার সকালে বগুড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।

উল্লেখ্য যে, মার্চ ২৪,২০২২ইং বৃহস্পতিবার  রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলা মসজিদ এলাকায় এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়। সড়কে যানজটে আটকা পড়ে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতিও (২২) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

দুর্ধর্ষ শ্যুটার মাসুমের পরিচয়ঃ

 গোয়েন্দা  পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, রাজধানীর গোড়ান এলাকায় ছোট বেলা হতেই বসবাস করে মাসুমের পরিবার। মতিঝিলে এসে ছাত্রলীগের কর্মী হিসাবে রাজনীতিতে জড়ায়। মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে তার রাজনৈতিক সখ্য ছিল একসময়।

গোড়ান এলাকায় ডিশ ব্যবসার সুবাদে ডিশ মাসুম নামেই সবাই চেনে। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। বাবা একজন স্কুলশিক্ষক।  রাজধানীর মোহাম্মদপুরের গ্রাফিক আর্টস ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা অবস্থায় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে।বাড়িতে তার  স্ত্রী-সন্তান আছে।

অপরাধে জড়িয়ে পড়ার পর ৪/৫টি  হত্যা ৪-৫টি মামলার আসামি হয়েছেন মাসুম। এসব মামলা থেকে মুক্তিসহ বেশকিছু সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য মাসুমকে রাজি করানো হয় বলে জানিয়েছে মাসুম।

ডিবি পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডের পরদিন রাতে একটি গাড়িতে ঢাকা থেকে জয়পুরহাটে যান মাসুম। সীমান্ত পার হয়ে তিনি ভারতে যাবার চেষ্টা করে  ব্যর্থ হয়ে তিনি বগুড়া চলে যান।

প্রযুক্তির সহায়তায় সনাক্ত করে বগুড়া পুলিশের সাহায্যে সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মাসুমের সহযোগী মোটরসাইকেলের চালককেও শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি।

হত্যাকান্ডের শিকার কলেজছাত্রী প্রীতিকে গুলি করার কারন জানতে চাইলে মাসুম জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, অস্ত্রটি গুলি ভর্তি ছিল।

টিপুকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে গুলিটি লেগে থাকতে পারে ।  টিপুর সঙ্গে একটি মেয়ে (প্রীতি) মারা যাওয়ার বিষয়টি সে জানতে পারে ফেসবুকের মাধ্যমে । তার ধারণাতেও ছিল না পুলিশ তাকে ধরে ফেলবে।

পুলিশ সুত্রে জানা গেছে,  বগুড়ায়  হোটেলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে শুরুতে হকচকিত হলেও পরবর্তীতে স্বাভাবিক আচরণ করেন। দ্বিধাহীনভাবে স্বীকার করেন টিপুকে গুলি করে হত্যার কথা। 

এদিকে ঘটনার পর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি হাতবদল হয়ে যাওয়ায় সেটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে মাসুমের সহযোগী গোয়েন্দা জালে রয়েছে। অস্ত্রটি উদ্ধার ও মাসুমের সহযোগীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ ।

ক্রাইম ডায়রি // ক্রাইম