কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চেতনা লিমিটেডঃ RAB-4এর হাতে ১০ মালিক গ্রেফতার

কোম্পানির নামে ফান্ড কালেকশন কিংবা মাল্টিপারপাস এর নামে আমানত সংগ্রহ করে জনগনের টাকা আত্মসাৎকারী প্রতিষ্ঠানগুলির থলের বেড়াল একএক করে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। অনুসন্ধানে আরো জানা যায় যে, উক্ত সংস্থার অংশীদারগণ বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে জায়গা-জমি কেনা, বহুতল ভবন নির্মাণ, বিভিন্ন ছোট বড় কারখানা, সুপারশপ করেছে এবং একই সাথে বিভিন্ন সময়ে নামে-বেনামে বিভিন্নভাবে অর্থ বিদেশে পাচার করেছে।

কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে  নেয় চেতনা লিমিটেডঃ RAB-4এর হাতে ১০ মালিক গ্রেফতার

১৮% থেকে ৩০% হারে মুনাফা এবং ফিক্সডিপোজিটের ক্ষেত্রে ৩/৫ বছরের ডাবল লাভ প্রদানের আশ্বাসে প্রায় সহস্রাধিক মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত জীবনের সমস্ত অর্জিত আয় উক্ত সমিতিতে জমা রাখতে উৎসাহিত করত।

আরিফুল ইসলাম কাইয়ুমঃ

কোম্পানির নামে ফান্ড কালেকশন কিংবা মাল্টিপারপাস এর নামে আমানত সংগ্রহ করে জনগনের টাকা আত্মসাৎকারী প্রতিষ্ঠানগুলির থলের বেড়াল একএক করে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। সম্প্রতি নরসিংদির শাহসুলতান কোম্পানির পর ঢাকা জেলার আশুলিয়ায় কোটি কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা “চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড” এর সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪।

র‌্যাব-৪ সুত্রে জানা গেছে, প্রতারকরা  প্রতারণার নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করে সাধারণ জনগণকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। 

অতি সম্প্রতি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম), ই-কমার্স, সমবায় সমিতি, এনজিও, অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে অসংখ্য মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সর্বশান্ত করার বেশকিছু অভিযোগ পেয়েছে র‌্যাব। এই সকল প্রতারকদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে “ফাল্গুনী ডটকম”, “শিবপুর ক্ষুদ্র ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড” ও “কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ” এর মতো বেশকিছু সফল অভিযান পরিচালনা করেছে র‌্যাব-৪।

এরই ধারাবাহিকতায়  ঢাকার আশুলিয়া এলাকার শতাধিক ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভোগীদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস্ মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যায় যে, আশুলিয়ায় জামগড়া এলাকায় অবস্থিত “চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড” নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের প্রায় শতাধিক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়ে যায়।

প্রতিষ্ঠানে লগ্নিকারী প্রায় ৫ শতাধিক গ্রাহক তাদের জমাকৃত টাকা ফেরত পেতে  মার্চ ১৯, ২০২২ইং তারিখে প্রতিষ্ঠানটির জামগড়া অফিসের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাজারখানেক পরিবারের প্রায় শতকোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এ চক্রটি। ভূক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক উচ্চ মুনাফার আশা দেখিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সঞ্চয়ী প্রকল্প, ডিপিএস, এফডিআর, পেনশন পলিসি, হজ্জ পলিসি, প্রজেক্ট, বাগান, ডেইরি ফার্ম, সুপারশপ, ছোট ছোট কোম্পানি, ফ্ল্যাট ব্যবসা এবং সরকারী বেসরকারি বিভিন্ন লোকজনের সম্পৃক্ততার (গল্প বলে) ইত্যাদি দেখিয়ে টাকা নিত প্রতিষ্ঠানটি।

আমানতদাতাদের প্রতি মাসে টাকার পরিমাণ ও মেয়াদ অনুযায়ী ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রথমে ঠিকঠাক মতো লভ্যাংশ দিলেও এর কিছুদিন পর থেকে লভ্যাংশ তো দিচ্ছেই না বরং মেয়াদ পূর্ণ হলেও আসল টাকা দিতেই নানা তালবাহানা শুরু করে। সর্বশেষ ভূক্তভোগীরা আসল টাকা ফেরত চাইলে শনিবার সকালে টাকা দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের শতাধিক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়ে যায় এই প্রতারক চক্রটি।

র‌্যাব জানায় গণমাধ্যমে নিউজ আসলে এবং ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারক চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‌্যাব-৪ গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় মার্চ ২২ ও ২৩ ইং তারিখে  সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে প্রতারণার দায়ে “চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড” এর সহসভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকসহ নিম্নোক্ত মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করে।

এরা হলেন ঢাকা জেলার মোঃ ইকবাল হোসেন সরকার (৩৫), মোঃ মাজহারুল ইসলাম (৩৫), মোঃ মমিন হোসেন (৩৫), মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৩৫),   এস এম মকবুল হোসেন (৪০), মোঃ মিজানুর রহমান (৩৮), মোঃ আল আমিন হোসেন (২৮),মোঃ নুর হোসেন (২৭) ও বাগেরহাট জেলার মোঃ ইব্রাহিম খলিল (৩৫),মানিকগঞ্জ জেলার ফজলুল হক (৩৫)।

অভিযান পরিচালনা কালে “চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড” অফিস হতে প্রতারণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী যেমনঃ ভর্তি ফরম, ঋণ গ্র্রহীতার ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র, ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের জীবন বৃত্তান্ত, লিফলেট, সিল, বিভিন্ন নামে সঞ্চয় পাশবই, অব্যবহৃত পাশ বই, দৈনিক কিন্তি ও ঋণ বিতরণের বিভিন্ন রেজিষ্টার, ব্যাংক চেকসহ ব্যাংক স্ট্যাম্প, আইডি কার্ড, দৈনিক কিস্তি আদায়ের শিট, বিভিন্ন প্রকার সার্টিফিকেট, চেক বই, মনিটর, সিপিইউ, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। 

অনুসন্ধানে ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের  ১৮ তারিখে ৩০ সদস্য বিশিষ্ট গভর্নিং বডির সদস্য বিশিষ্ট “চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ” প্রতিষ্ঠা করা হয়, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর-১৯৩। প্রথমদিকে তারা স্থানীয় বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও স্বল্পআয়ের মানুষজনকে অধিক মুনাফায় সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণের প্রতি আকৃষ্ট করত। ধীরে ধীরে এই সংস্থার বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে। একই সাথে, তারা চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ এর ব্যানারে আরো বড় পরিসরে কাজ করা শুরু করে। এক্ষেত্রে তাদের মূল টার্গেট ছিল আশুলিয়া ও সাভার এলাকার ইন্ডাস্ট্রিজ এলাকার মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত লোকজন।

তাদেরকে অতি উচ্চ মুনাফা প্রদানের আশ্বাসে কোম্পানিতে সঞ্চয়ী পলিসি, এফ ডি আর, ডিপিএস, পেনশন পলিসি, শিক্ষা পলিসি, হজ্ব পলিসি, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী পার্টনার পলিসিতে আকৃষ্ট করত। এমন চটকদার ১৮% থেকে ৩০% হারে মুনাফা এবং ফিক্সডিপোজিটের ক্ষেত্রে ৩/৫ বছরের ডাবল লাভ প্রদানের আশ্বাসে প্রায় সহস্রাধিক মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত জীবনের সমস্ত অর্জিত আয় উক্ত সমিতিতে জমা রাখতে উৎসাহিত করত।

ভিকটিমদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য, সংস্থাটি গ্রহীতাকে প্রথম দিকে কয়েক মাস চুক্তি অনুযায়ী লভ্যাংশ প্রদান করত। যা দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আরো বেশি বিনিয়োগে আগ্রহী হতো। অনেকে নিজের পেনশনের টাকা, গ্রামের ভিটেবাড়ি বিক্রি করা টাকা, বিদেশ থেকে কষ্ট করে অর্জিত অর্থ উক্ত সংস্থায় উচ্চ মুনাফা লাভের আশায় জমা রাখত।

এক পর্যায়ে ফান্ড কালেকশন কমে এলে ব্যাংকের সুদ প্রদান এবং পাবলিকের লভ্যাংশ প্রদানের চাপে পড়ে  আসামিরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে মার্চ ১৬, ২০২২ইং তারিখে অফিস তালা দিয়ে লাপাত্তা হয়। অনুসন্ধানে আরো জানা যায় যে, উক্ত সংস্থার অংশীদারগণ বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে জায়গা-জমি কেনা, বহুতল ভবন নির্মাণ, বিভিন্ন ছোট বড় কারখানা, সুপারশপ করেছে এবং একই সাথে বিভিন্ন সময়ে নামে-বেনামে বিভিন্নভাবে অর্থ বিদেশে পাচার করেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সমিতির  সভাপতি কাম পরবর্তীতে কোম্পানীর এমডি, চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা গোপনে এসব টাকা  বিদেশে পাচারসহ ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় গোপনে প্রচুর সম্পদ নিজ নিজ নামে ক্রয় করেছেন। সভাপতি  পলাতক মুহাম্মদউল্লাহ আশুলিয়ার নরসিংহপুরে বসবাস করলেও সে মূলত বরিশালের ভোলায় জন্মগ্রহণ করে। তার বাবা ছিলেন একজন ড্রাইভার। সে ডিগ্রি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। আশুলিয়াতে তার ৫ তলা বাড়ি এবং একাধিক ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। গ্রেফতারকৃত মোঃ ইকবাল হোসেন সরকার মুহাম্মদউল্লাহ এর বন্ধু উক্ত সমিতির সহ-সভাপতি, তার আশুলিয়া জামগড়াতে ৫ তলা বাড়ি এবং সাভার ও আশুলিয়াতে একাধিক ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে, মোঃ মাজহারুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক, তার সাভার আশুলিয়া এলাকায় একাধিক বহুতল বিশিষ্ট বাড়ি ও প্লটের সন্ধান পাওয়া গেছে, মোঃ মমিন হোসেন যুগ্ন-সম্পাদক, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম কোষাধ্যক্ষ, তাদেরও সাভার আশুলিয়া ও ধামরাই এলাকায় একাধিক বাড়ি এই সমিতির তথাকথিত চেয়ারম্যান এবং বিগত কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম এর আশুলিয়ার ইসলাম নগর এলাকায় একাধিক ভবন এবং প্লটের সন্ধান পাওয়া গেছে, এতে করে প্রতিয়মান হয় যে চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে সংগৃহীত টাকা অবৈধভাবে ট্রান্সফার করে এসকল সম্পদ তারা অর্জন করেছে।

তাদের নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল পরিমান টাকা গচ্ছিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। অনেকে গোপনে জায়গা ক্রয় সহ বিভিন্ন জায়গায় টাকা লগ্নি করেছেন। আবার এদের মধ্যে অনেকের ইনভেষ্টের অর্থের উৎসও অজানা।  ইব্রাহিম খলিল হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা, এস এম মকবুল হোসেন বিনিয়োগ কর্মকর্তা, ফজলুল হক সদস্য এবং সকলেই সমিতির প্রতিষ্ঠাকাল ২০০৮ সাল হতে শেয়ার হোল্ডার হিসেবে উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতারনামূলক কাজের সাথে জড়িত।

পরবর্তীতে  এই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত সিএফও, একাউন্টের জিএম, এজিএম সহ অনেক উচ্চবেতনে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ব্যাংক না হয়েও এসব আমানত সংগ্রহ করে ব্যাংকিং কার্যক্রমের সাথে জড়িত। তবে ইদানিংকালে আমানত সংগ্রহ করে তা বিনিয়োগ দেখানোর নাটক সাজানো হলেও প্রকৃতপক্ষে অনেক গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে তারা আমানতের বিনিময়ে লাভ পান। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী ব্যাংক বাদে কোন প্রতিষ্ঠান এমন কার্যক্রম চালাতে পারেনা।

গ্রেফতারকৃত মোঃ আল আমিন হোসেন সমিতির একজন সদস্য এবং  শুরুতে উক্ত সমিতির শেয়ার হোল্ডার হিসেবে জড়িয়ে পরে। গ্রেফতারকৃত অপর আসামীদ্বয় মোঃ মিজানুর রহমান ও মোঃ নুর হোসেন উক্ত সমিতির বেতনভূক্ত কর্মচারী হিসেবে এবছরের শুরুতে যোগদান করে। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতারনার সঙ্গে বেশকিছু ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে যা তদন্তের মাধ্যমে তাদের নাম পরিচয় এবং প্রতারনার ভুমিকা বেড়িয়ে আসবে। সাভার উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ি গত জুন মাসের সর্বশেষ অডিট অনুযায়ী এই সমিতির ফ্যান্ডে মাত্র ৬১ লক্ষ টাকা জমা রয়েছে। 

প্রতারনার কৌশলঃ বিভিন্ন জায়গায় ডেভলপমেন্টের নামে অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করে তারা সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তা সহ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,ব্যাংকার,পুলিশ কর্মকর্তা কিংবা কালো টাকার মালিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতো এবং অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে এদের কোন একজনকে বাগে আনতে পারলেই তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে চলত গ্রাহক কালেকশন।

 সদস্য সংগ্রহঃ এই প্রতারক চক্রের মাঠ পর্যায়ের কর্মী/সদস্য রয়েছে। এরা ঢাকা জেলার আশুলিয়া, সাভার ও ধামরাই এলাকার মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ যেমন-গার্মেন্টসকর্মী, রিক্সাচালক, ভ্যানচালক, অটোচালক, সবজি ব্যবসায়ী, ফল ব্যবসায়ীসহ নিম্ন আয়ের মানুষদের টার্গেট করে প্রতি লক্ষে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা মাসিক লভ্যাংশ এবং স্বল্প সময়ে মাসিক মেয়াদ শেষে অধিক মুনাফা লাভের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কোম্পানী’তে বিনিয়োগ করতে উদ্ভুদ্ধ করত। ভিকটিমদের প্রলুব্ধ করতে তার বিভিন্ন প্রজেক্ট, গাছের বাগান, ডেইরি ফার্ম, ফ্ল্যাট ও প্লটের প্রলোভন দেখিয়ে ভুলিয়ে নানান কৌশলে প্রতারক চক্রের অফিস কার্যালয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হতো। তারা ভিকটিমদের বুঝাতো যে তাদের কাছে এফডিআর করলে ০১ লক্ষ টাকায় মাসে ১,৮০০/-টাকা লভ্যাংশ প্রদান করা হবে প্রকৃতপক্ষে যা বাংলাদেশে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান দিতে পারেনা।  

খ। স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা প্রদানের প্রলোভনঃ  গ্রেফতারকৃত আসামীরা ভূক্তভোগীদের বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা প্রদানের নিশ্চয়তা প্রদান করে “চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড” এ বিনিয়োগ/ডিপিএস করতে আগ্রহী করত। এভাবে প্রলুব্ধ হয়ে ভূক্তভোগীরা উক্ত কোম্পানী’তে বিনিয়োগ করত। ভূক্তভোগীদের বক্তব্য অনুযায়ী ১৮% থেকে ৩০% হারে মুনাফা এবং ফিক্সডিপোজিটের ক্ষেত্রে ৩/৫ বছরের ডাবল লাভ প্রদানের আশ্বাস দিত। 

গ।  বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্প প্রচারঃ সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিভিন্ন ভূয়া প্রকল্প যেমন, বিভিন্ন সঞ্চয়ী প্রকল্প, ডিপিএস, এফডিআর, পেনশন পলিসি, হজ্জ পলিসি, প্রজেক্ট, বাগান, ডেইরি ফার্ম ফ্ল্যাট ইত্যাদি দেখিয়ে তাদের কাছে থেকে গাছের বাগান, ডেইরি ফার্ম, হজ্জে পাঠানো, ফ্ল্যাট ও প্লট ইত্যাদির মাধ্যমে গ্রহককে উচ্চ মূনাফার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারনামূলকভাবে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিলো।

ঘ। ভূক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহঃ এ কোম্পানীর কিছু সদস্য মাসিক/পাক্ষিক ভিত্তিতে ভূক্তভোগীদের কাছ থেকে ডিপিএস এর টাকা সংগ্রহ করত। ভূক্তভোগীদেরকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখানো হতো যদি তারা যদি সময়মত ডিপিএস এর টাকা না পরিশোধ করে তাহলে মেয়াদ শেষে তারা মুনাফা কম পাবে এবং নিয়মিত টাকা না দিলে জরিমানাও করা হতো। অধিক মুনাফার লোভে ভূক্তভোগীরা সঠিক সময়ে ডিপিএস এর টাকা জমা করত এমনকি করোনাকালীন সময়েও খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে সমিতিতে নিয়মিত টাকা প্রদান করে আসছে পক্ষান্তরে কোন লভ্যাংশ পায়নি।

ঙ। প্রতারণার কৌশলঃ   ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক তাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে মর্মে প্রচারনা চালাত যদিও তাদের কোন বিধি মোতাবেক ইসলামী শরীয়াহ বোর্ড ছিলনা। উক্ত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জায়গা সমিতির নামে রেজিষ্ট্রেশনের কথা থাকলেও তা মূলত পলাতক সভাপতি মুহাম্মদউল্লাহ, জনৈক তাজুল ইসলাম এবং জনৈক অজ্ঞাত নামে রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছিল। জানা গেছে তা ইতোমধ্যে বিক্রি করা হয়েছে।

২০ হাজার টাকা মাসিক কিস্তিতে ফ্ল্যাট বরাদ্ধের লোভনীয় অফার আশুলিয়া থানাধীন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট ঘোড়াপীর প্রকল্পে অনেক জমি রয়েছে বলা হলেও সেখানে তাদের ব্যক্তি নামে মাত্র ১০ শতাংশ জমি রয়েছে মর্মে জানা যায় এবং ইতোমধ্যে তা বিক্রি করা হয়েছে। দিনাজপুরের কাহারুলে একই ব্যক্তিগণের নামে ১৬ বিঘা জমি থাকলেও তা বিক্রির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ক্ষুদ্রঋন প্রদানের কোনো অনুমোদন না থাকলেও উক্ত প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত ব্যবসায়ীদের উচ্চসুদে ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করত এবং সেগুলো আদায় করত। ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং মারধর করত। প্রতারক চক্রটি সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই এলাকায় ভিকটিমদের অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে “চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড” এ বিনিয়োগ করার জন্য প্রলুব্ধ করত।

ভূক্তভোগীদের প্রলুব্ধ করতে কোম্পানীর কিছু সদস্য’কে কমিটির ভূয়া সদস্য সাজিয়ে সাধারন মানুষদের’কে বুঝাতো আমরা কোম্পানীতে বিনিয়োগ/ডিপিএস করেছি এবং স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা পেয়েছি। সাধারণ মানুষ তাদের কথা আশ্বাস করে কোম্পানীতে বিনিয়োগ/ডিপিএস করতে আকৃষ্ট হতো। আর এ সুযোগে কোম্পানীর অন্যান্য সদস্যরা ভূক্তভোগীদের কাছ থেকে কোম্পানীর ভর্তি ফরম পুরণ করিয়ে তাদের সদস্য বানাত।

ভুক্তভোগীরা নিয়মিত ডিপিএস এর টাকা জমা দিলেও কোম্পানীর প্রতিশ্রুতিকৃত মাসিক লভ্যাংশ ও মেয়াদ শেষে মুনাফা প্রদান করতো না এমনকি ভূক্তভোগীদের জমাকৃত মূলটাকাও ফেরত দিতনা। ভূক্তভোগীরা লাভের টাকা চাইতে গেলে হুমকি-ধামকি প্রদর্শন করা হতো। তারা ভূক্তভোগীদের কাছ থেকে বিনিয়োগকৃত টাকা নিজেদের নামে সরিয়ে লেয়ারিং করে কমিটির কর্মকর্তাদের নামে-বেনামে ফ্ল্যাট ও প্লট, বাগান, আবাদি জমি এবং বিভিন্ন ব্যাংকে নগদ টাকা ট্রান্সফার করেছে বলে করেছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়। 

৭। “চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড” কোম্পানীতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সাথে সাথে তারা আরো নিম্নোক্ত ০৩ টি নামসর্বস্ব কোম্পানী চালু করেঃ  

ক। চেতনা পরিবার।
খ। চেতনা গার্ডেনিয়া (রিয়েল এস্টেট ব্যবসা)।
গ। চেতনা পরিবার কল্যাণ ফাউন্ডেশন।

“চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড” এ কোম্পানী ছাড়া বাকি ০৩ টি কোম্পানীর কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তার সকল আয়ের উৎস হচ্ছে “চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড” এ ভুক্তভোগীদের ডিপিএস/এফডিআর এর টাকা। সমিতির ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা হওয়ার সাথে সাথে তা উত্তোলন করে অন্যত্র নিজেদের নামে টাকা স্থানান্তরসহ জমি বা ফ্ল্যাট কিনে টাকা লেয়ারিং করত। 

৮।  মূল অভিযোগ সমূহঃ

সমিতি সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক রেজিষ্ট্রিকৃত রয়েছে এবং শুধুমাত্র সমিতি সদস্যদের কাজ থেকে সমিতি পরিচালনার জন্য  অনুমোদন রয়েছে। তাদের প্রতারনার কৌশল হিসেবে  চেতনা কল্ল্যান পরিবার ট্রাস্ট, চেতনা গার্ডেনিয়া এই ধরণের প্রকল্পের কোন অনুমোদন নাই। কিন্তু উক্ত চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এর আর্থিক লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদিত নয় এবং সঞ্চয় গ্রহন বা ঋণদান মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরীর অথোরিটি কর্তৃক অনুমোদিত নয়। 

 র‌্যাব-৪ জানিয়েছে  এইরুপ অসাধু সংঘবব্ধ প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে তাদের  জোড়ালো সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ক্রাইম ডায়রি//ক্রাইম