ডাকসু নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা, সাইবার বুলিং ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা ও কটূক্তির ঘটনায় সাইবার বুলিং প্রতিরোধে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা ও কটূক্তির ঘটনায় সাইবার বুলিং প্রতিরোধে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মো: আলাউদ্দিন সোহেল, ষ্টাফ রিপোর্টার:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুরো ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। নির্বাচন ঘিরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ, সাইবার বুলিং, প্রশাসনিক কড়াকড়িসহ একাধিক বিষয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে প্রার্থীরা ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সাইবার বুলিং ঠেকাতে অনলাইন পেজ বন্ধের উদ্যোগ
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা ও কটূক্তির ঘটনায় সাইবার বুলিং প্রতিরোধে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নির্বাচন কমিশনের সুপারিশে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-১’ ও ‘শিক্ষার্থী সংসদ-২’সহ কয়েকটি ফেসবুক পেজ সাময়িকভাবে বন্ধের সুপারিশ করে বিটিআরসিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, এই পেজগুলো মতপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে, তাই নির্বাচনকালীন সময়ে এগুলো বন্ধ করাকে তারা স্বাধীনতার পরিপন্থী বলছেন। নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এসব পেজ সচল রাখার দাবি জানান তারা।
শাটল সার্ভিস বন্ধে দুর্ভোগ
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ পরিবহন ‘শাটল সার্ভিস’ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বিশেষ করে নারী হলগুলোর শিক্ষার্থীরা। কবি সুফিয়া কামাল হল, কুয়েত মৈত্রী হল ও ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, “যারা এই পরিবহন সেবার ব্যবস্থাপনায় আছেন, তারা নিজেরাও নির্বাচনে প্রার্থী। এতে ভোটার প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।”
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সরগরম নির্বাচন কমিশন
ভিপি পদে ছাত্রদল মনোনীত প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে পাঠকক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী, পাঠকক্ষ, শ্রেণিকক্ষ বা পাঠদান ব্যাহত হয়— এমন স্থানে প্রচার নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কমিশন সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
অন্যদিকে শিবির সমর্থিত এজিএস প্রার্থী মহিউদ্দিন খান অভিযোগ করে বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নমনীয় আচরণের ফলে কিছু প্যানেল নিয়মিত আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে, কিন্তু কমিশনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।”
‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল আট দফা দাবি তুলে ধরেছে কমিশনের কাছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো- প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া এবং নির্বাচন নির্ধারিত সময় ৯ সেপ্টেম্বরেই অনুষ্ঠিত করার প্রতিশ্রুতি।
ব্রেইলে ভোটের ব্যবস্থা
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইলে ভোটের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে এ জন্য আগ্রহীদের নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করতে হবে।
বক্তব্যে উত্তাপ, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান দাবি করেন, “শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্বাভাবিক কথা বলাও যদি আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়, তবে আমাদের শিকল দিয়ে ঘরে আটকে রাখা হোক।” অন্যদিকে জিএস পদপ্রার্থী তানভীর বারী হামিম বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে সব সংগঠন অভিযোগ করছে, অথচ স্বতন্ত্র প্যানেল খোলামেলা স্ট্যান্ডআপ কমেডি করছে— সেখানে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”
প্রার্থীদের ডোপ টেস্টের দাবি
মাদকমুক্ত নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে প্রার্থীদের ডোপ টেস্টের দাবি তুলেছেন আংশিক প্যানেলের সমাজসেবা সম্পাদক পদপ্রার্থী এবি জুবায়ের। মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে একটি স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে পারে, এজন্য ডোপ টেস্ট জরুরি।”
পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব
চলমান সেমিস্টার ফাইনাল ও মিডটার্ম পরীক্ষা নির্বাচন-উৎসবের আমেজে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে বলে মনে করছে শিবির ও বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো। তারা নির্বাচনের পরে পরীক্ষা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। বামপন্থি প্যানেল ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ও একই দাবি জানিয়েছে, ৫-১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত রেখে ক্লাস চালু রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রার্থিতা ফিরে পেলেন ৩৪ জন, বাতিলে সুপারিশ ২ জনের
তথ্যে বিভ্রান্তির কারণে ৪৭ জনের প্রার্থিতা স্থগিত করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে ৩৪ জন আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। অন্যদিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের দুই সাবেক নেতা— মো. জুলিয়াস সিজার তালুকদার ও বায়েজিদ বোস্তামীর প্রার্থিতা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “এটি উচ্চতর কমিটির সুপারিশ, যা কমিশন মানতে বাধ্য। শিগগিরই এ বিষয়ে পূর্ণ কমিশনের সিদ্ধান্ত হবে।”
ব্রেইলে ভোটের ব্যবস্থা
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইলে ভোটের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে এ জন্য আগ্রহীদের নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করতে হবে।
দৈনিক ক্রাইম ডায়রি// রাজধানী










