অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাথে দ্বিতীয় দফা বৈঠক শিক্ষামন্ত্রীর: শাবিপ্রবির ভিসির পক্ষে অন্য ভিসি’রা

প্রথম দফা আলোচনায় শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙতে আহ্বান করেন। এছাড়া ভিসি’র পদত্যাগের যে দাবি তারা করছেন সেটি থেকে সরে আসার অনুরোধ করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন, তারা কোনোভাবেই ভিসি’র পদ্ত্যাগের আন্দোলন থেকে সরে আসবেন না। আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যারা অনশন করছেন, তারাও ফলাফল না আসা পর্যন্ত অনশন ভাঙবেন না।

অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাথে  দ্বিতীয় দফা বৈঠক শিক্ষামন্ত্রীর: শাবিপ্রবির ভিসির পক্ষে অন্য ভিসি’রা
ছবি-অনলাইন হতে সংগৃহীত

মুন্সী মোহাম্মদ আল ইমরানঃ

শিক্ষার্থীরা অনশন অব্যহত রেখেছে। ক্যাম্পাস ছেড়ে এর গন্ডি ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মনে। উৎসুক দৃষ্টিতে সবাই দেখছে এর শেষ কোথায়? সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাথে শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় অনলাইনে আলোচনা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। তবে এই আলোচনায় কোনো ফলাফল আসেনি। কারণ শিক্ষামন্ত্রী নানা আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি ভিসির পদত্যাগের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

বিষয়টি সমাধানের জন্য শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের সাথে আবার আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করেন। জানুয়ারি ২৩,২০২২ইং রোববার দুপুর ১টার দিকে আবারো শিক্ষার্থী ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির মধ্যে অনলাইনে আলোচনা হয়েছে।

প্রথম দফা আলোচনায় শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙতে আহ্বান করেন। এছাড়া ভিসি’র পদত্যাগের যে দাবি তারা করছেন সেটি থেকে সরে আসার অনুরোধ করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন, তারা কোনোভাবেই ভিসি’র পদ্ত্যাগের আন্দোলন থেকে সরে আসবেন না। আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যারা অনশন করছেন, তারাও ফলাফল না আসা পর্যন্ত অনশন ভাঙবেন না।

এর আগে শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আন্দোলনকারীদের ফোনে কথা বলিয়ে দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। এসময় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার প্রস্তাব দেন এবং প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসার আহ্বান জানান।

প্রথমে শিক্ষার্থীরা ঢাকায় আসতে সম্মত হলেও পরে অনশনকারী সহপাঠীদের কথা বিবেচনায় ঢাকায় না গিয়ে অনলাইনে আলোচনার প্রস্তাব দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় গিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন। এ বৈঠকের পর সন্ধ্যায় অনলাইনে আলোচনার কোনো সিদ্ধান্ত না আসলেও রাত ১২টায় আসে অনলাইনে আলোচনার সিদ্ধান্ত। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি’দের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ।  সংগঠনটির ভার্চ্যুয়াল এক সভায় ফরিদ উদ্দিন আহমেদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তারা বলেছেন, শাবিপ্রবিতে যে ঘটনাপ্রবাহ, তাতে যদি ভিসিকে পদত্যাগ করতে হয়, তাহলে তারাও পদত্যাগ করতে প্রস্তুত।

দেশের কমপক্ষে ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি’রা ওই বৈঠকে যোগ দেন। বর্তমানে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৫০টি। ওই বৈঠকে শাবিপ্রবির ভিসি ফরিদ উদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি’র পদত্যাগের দাবিতে সপ্তাহখানেক ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আমরণ অনশনে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিস্থিতি নিয়েই বৃহস্পতিবার ভার্চ্যুয়াল সভা করেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি’রা।

জানা গেছে, বৈঠকে শাবিপ্রবির আন্দোলন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় এবং ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদের প্রতি সহমর্মিতা জানানো হয়। বক্তব্য দেয়া ভিসি’দের সুর ছিল এমন, শিক্ষার্থীরা প্রভোস্টের পদত্যাগ বা তাকে অপসারণ চেয়েছিলেন। ভিসি সেই দাবি মেনে নেয়ার কথাও বলেছেন। এরপরও সভায় যাওয়ার পথে ভিসি’কে ধাওয়া করা হয়। অবরুদ্ধ করা হয়।

বৈঠকে উল্লেখ করা হয়, এভাবে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ভিসি’কে অপমান করবে, ধাওয়া করবে- এভাবে চললে বিশ্ববিদ্যালয়ই চালানো যাবে না। সব বিশ্ববিদ্যালয়েই একই পরিস্থিতি হতে পারে। তাই ফরিদ উদ্দিনকে যদি পদত্যাগ করতে হয়, তাহলে অন্যরাও পদত্যাগ করতে প্রস্তুত আছেন বলে আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেন অংশগ্রহনকারী ভিসিবৃন্দ বলে জানা গেছে।

ক্রাইম ডায়রি// শিক্ষাঙ্গন