কে হতে যাচ্ছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট, উৎকন্ঠিত মুসলিম দুনিয়া

Who is going to be the president of Turkey, the Muslim world is worried

কে হতে যাচ্ছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট, উৎকন্ঠিত মুসলিম দুনিয়া
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

এরদোয়ান আঙ্কারায় তার দল একে পার্টির সমর্থকদের জানান, প্রয়োজন হলে তিনি দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে লড়তে প্রস্তুত। দ্বিতীয় দফায় জয়লাভের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকার কথাও তিনি সমর্থকদের জানান।

ক্রাইম ডায়রি আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

একদিকে যুদ্ধবিগ্রহ নিয়ে ব্যস্ত পরাশক্তি রাশিয়া ও ইউক্রেন;  অন্যদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। যুদ্ধবিগ্রহ নিয়ে মানুষের উৎকন্ঠা থাকলেও আগ্রহ নিয়ে কিন্তু আর কেউ জানতে চায়না কি হতে যাচ্ছে ? পুরো বিশ্বটা যেন বিভিন্ন ব্লকে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একদিকে মুসলিমদেশগুলোর উপর ইহুদিবাদী পরাশক্তিদের দমনপীরন অন্যদিকে ঈমানী শক্তিতে বলিয়ান কোন মুসলিম লিডারদের উত্থানে বড় বাঁধা হয়ে দাড়ায় মুসলিম বিদ্বেষী জাতীগোষ্টির কিছু নেতা।  

 লিডারবিহীন মুসলিম বিশ্বে তাগুতি শক্তির বড় হাতিয়ার মুনাফিকদের যখন জয়জয়কার তখন পুরো বিশ্বমানবতাসহ  অধিকতর দূর্বল মুসলিম দেশগুলো  তাকিয়ে থাকে বৃহৎ মুসলিম শক্তিধর দেশগুলোর দিকে। তারা সিংহ পুরুষ লিডার চায়। যারা অন্ততপক্ষে কিছু না করলেও যেন সিংহের মতো মুসলিম দেশগুলোর পক্ষে কথা বলতে পারে পরাশক্তির সামনে। এমনই একজন লিডার যিনি আর যে কারও চাইতে একটু বেশিই ইসলাম ঘেষা এবং মুসলমানদের বড় শক্তি।

তিনি আর কেউই নন। তিনি হলো রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। দ্বিধাবিভক্ত মুসলিম বিশ্বকমিউনিটির এই সময়ের সবচেয়ে বড় লিডার এবং শুধু মুসলমানদের নয় বিশ্বমানবতার সবচেয়ে বিশ্বস্ত লিডারও বটে।
তিনি সাধারন জিবনযাপন করেন এবং তিনি একজন হাফেজে কুরআন। মুসলিমদের পক্ষে তিনিই সবচেয়ে বেশি কথা বলেন এবং মুসলিম ইস্যুতে পরাশক্তিদের চাপ প্রয়োগেরও চেষ্টা করেন। তিনি একাধারে একজন ইমান একজন নেতা এবং একজন প্রেসিডেন্ট।
 তাই পুরো বিশ্বের চোখ এখন তুরস্কের নির্বাচনের দিকে। প্রথমধাপে নিজদলকে সরকার  পর্যন্ত পৌছাতে পারলেও প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি সামান্য কারনে। তাই একটু বেশিই উৎকন্ঠিত পুরো বিশ্ব। কে হতে যাচ্ছেন দেশটির আগামীর কর্ণধার? রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান না কামাল কিলিকদারোগলু। এবার দ্বিতীয় রাউন্ডের জন্য অপেক্ষা ? 
প্রচলিত আইন অনুযায়ী, ভোটের ফল চূড়ান্ত  হওয়ার পর যদি কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পান, তবে ২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় দফার নির্বাচন আয়োজন করা হয়। সে অনুযায়ী ২৮ মে দ্বিতীয় দফা নির্বাচন হবে এবং এতে শুধু ২ শীর্ষ প্রার্থী এরদোয়ান ও কিলিজদারগলু লড়বেন। সেক্ষেত্রে তৃতীয় স্থানে থাকা ন্যাশনালিস্ট প্রার্থী সিনান ওগান বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন। তিনি শীর্ষ ২ প্রার্থীর যেকোনো একজনের পক্ষে আনুষ্ঠানিক সমর্থন জানাবেন। ওগান যাকে সমর্থন দেবেন, সেই অনুযায়ী তার দলের সমর্থকরাও যদি একই ব্যক্তিকে ভোট দেন, তাহলে সেই প্রার্থীই হতে পারবেন দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।
এরদোয়ান আঙ্কারায় তার দল একে পার্টির সমর্থকদের জানান, প্রয়োজন হলে তিনি দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে লড়তে প্রস্তুত। দ্বিতীয় দফায় জয়লাভের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকার কথাও তিনি সমর্থকদের জানান।
অন্যদিকে, কিলিজদারগলু দ্বিতীয় দফা ভোটে জয়লাভ করার অঙ্গীকার জানিয়ে বলেন, তার  প্রতিদ্বন্দী জনগণের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কিলিজদারগলুর অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দল বারবার আপত্তি জানিয়ে ভোটগণনাকে বিঘ্নিত করেছে। টেলিভিশনে প্রচারিত বক্তব্যে তিনি বলেন 'জাতি দ্বিতীয় দফা ভোট চাইলে আমরা একে স্বাগত জানাই।'
বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনে সরাসরি ফল না এলে ইতোমধ্যে মূল্যস্ফীতির চাপে জর্জরিত ৮ কোটি ৫০ লাখ মানুষের দেশটি আরও অনিশ্চয়তার দিকে এগোবে। একইসঙ্গে পুঁজিবাজার ও বৈদেশিক মুদ্রার বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

কনসালট্যান্সি প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজান আকবাস রয়টার্সকে বলেন, 'আগামী ২ সপ্তাহ সম্ভবত তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ হবে এবং এ সময়ে অনেক কিছুই ঘটবে। আমি আশঙ্কা করছি, ইস্তাম্বুলের পুঁজিবাজারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ধস নামবে এবং মুদ্রাবাজারে বৃহৎ অস্থিরতা দেখা দেবে।'
তবে তিনি জানান, 'এরদোয়ানের জোট বিপক্ষ জোটের চেয়ে নির্বাচনে অনেক ভালো করেছে। সেই কারণে এরদোয়ান দ্বিতীয় দফা ভোটে বিশেষ সুবিধা পাবেন', যোগ করেন তিনি। 
তবে , কামালের তুলনায় অনেকখানি এগিয়ে রয়েছেন এরদোয়ান। ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল এবং ১৫০টিরও বেশি স্বতন্ত্র সংসদীয় প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দেশটিতে মোট ভোটার ছয় কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৬৫১ জন। এরমধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট পড়েছে মোট ভোটারের ৮৮ দশমিক ০৭ শতাংশ। অন্যদিকে পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৮৮ দশমিক ১১ শতাংশ।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন পার্লামেন্টের ৬০০ আসনেরও ভোটগ্রহণ হয়েছে। সেই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় পেয়েছে এরদোয়ানের দল একে পার্টির নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট পিপলস অ্যালায়েন্স।
৯৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ ভোটগণনা শেষে দেখা গেছে, পিপলস অ্যালায়েন্স পেয়েছে ৩২১টি আসন। এর মধ্যে এরদোয়ানের একে পার্টি একাই জয়ী হয়েছে ২৬৬টি আসনে। ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স জয়ী হয়েছে ২১৩ আসনে। আর অন্যান্য দল ৬৬ আসনে জয়ী হয়েছে।
তুরস্কের ভোটাররা গত কয়েক বছর ধরেই বিভক্ত। কিন্তু ৬৯ বছর বয়সী মি. এরদোয়ান এবার যতোটা চাপের মুখে পড়েছেন, এর আগে এরকম কখনো হয়নি। জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী জোটের প্রার্থী তার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। এরদোয়ানের জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি সংক্ষেপে এ কে পার্টি ২০০২ সালের নভেম্বর মাস থেকে ক্ষমতায় এবং মি. এরদোয়ান তুরস্ক শাসন করে আসছেন ২০০৩ সাল থেকে।
এবারের নির্বাচনে প্রায় ৬০ লাখ নতুন ভোটার ভোট দেবেন যারা মি. এরদোয়ান ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক নেতাকে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে দেখেন নি। মি. এরদোয়ান শুরুতে ছিলেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী। ২০১৪ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হন এবং ২০১৬ সালে ব্যর্থ এক সামরিক অভ্যুত্থানের পর নাটকীয়ভাবে তিনি তার ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন। হয়ে ওঠেন একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। সমগ্র মুসলিম বিশ্ব এরদোয়ানকে ভালবাসে। তার নেতৃত্বকে তারা দেখেছে এবং মুসলিম বিশ্বের হিরো হিসেবে সবাই তার জন্য দোয়াও করে। তাই সবাই অপেক্ষা করছে কি হয় তা দেখার জন্য?

ক্রাইম ডায়রি/ আন্তর্জাতিক