ইমরান সাহসী, অনাস্থা প্রস্তাব খারিজঃ সংসদ ভেঙে আগাম নির্বাচনের ডাক ইমরানের

অনাস্থা প্রস্তাব আনার পর ইমরান খান সাহস হারাননি। বারবার বলেছেন, ‘পরিস্থিতি যাই হোক, আমি পদত্যাগ করব না। আমি শেষ বল পর্যন্ত খেলব। আমি অনাস্থা ভোটের একদিন আগে তাদের চমকে দেব

ইমরান সাহসী, অনাস্থা প্রস্তাব খারিজঃ সংসদ ভেঙে আগাম নির্বাচনের ডাক ইমরানের

তবে, পাকিস্তানের ইতিহাসকে বদলে দিয়েছেন ইমরান খান।  দিয়েছিলেন খেলার মাঠেও। এখন দিলেন রাজনীতির মাঠে। তাই ইমরান মানেই পরিবর্তন, ইমরান মানেই ব্যাতিক্রম

প্রকৌশলী আয়াতুস সাইফ মুন, আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

নানান রঙের দেশ পাকিস্তান।  এদেশের রাজনীতি বুঝতে পারাটাও দূরুহ ব্যাপার। কোন প্রধানমন্ত্রী এখন পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। সেনাবাহিনীর কবলে পড়তেই হয়েছে তাকে। এরই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন বিরোধী দল সহ খোদ তার দলের এমপিরাও। 

তবে, পাকিস্তানের ইতিহাসকে বদলে দিয়েছেন ইমরান খান।  দিয়েছিলেন খেলার মাঠেও। এখন দিলেন রাজনীতির মাঠে। তাই ইমরান মানেই পরিবর্তন, ইমরান মানেই ব্যাতিক্রম।।

আশার কথা হলো, দেশটির স্পিকার খারিজ করেছেন দেশটির জাতীয় পরিষদের স্পিকার। অনাস্থা প্রস্তাবটি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। খবর দৈনিক  ডনের।

এপ্রিল ০৩,২০২২ইং রোববার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন দেশটির জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাশিম খান সুরি। একই সঙ্গে তিনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশনও মুলতবি করেছেন। 

বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হওয়ার পর আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। 

রোববার পাকিস্তানের সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হওয়ার পর রাষ্ট্রীয় টিভিতে জাতির উদ্দেশে বক্তব্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। 

সবাইকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইমরান খান বলেন, ইতোমধ্যে আমি রাষ্ট্রপতির কাছে  বার্তা পাঠিয়েছি যে, অ্যাসেম্বলি (জাতীয় সংসদ) ভেঙে দিন। আমরা একটি গণতান্ত্রিক সমাজে বসবাস করি।

জনগণ যার পক্ষে রায় দেবে তাকেই সবাই মেনে নেবে। বিদেশী কারো উসকানিতে নয়।  

ইমরান খানের প্রস্তাবের পরই পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন দেশটির রাষ্ট্রপতি ডা. আরিফ আলভি। 

এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়, অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হওয়ার পরই রাষ্ট্রপতি ডা. আরিফ আলভি জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাবনা পেয়েছেন, যা তিনি অনুমোদন করেন, ফলে জাতীয় পরিষদ এখন সাংবিধানিকভাবে ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

অনাস্থা প্রস্তাবটি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করেছেন ডেপুটি স্পিকার কাশেম সুরি। 

এদিন অধিবেশন শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, সংবিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের প্রতি আনুগত্য প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক কর্তব্য। 

তিনি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের করা আগের দাবিগুলোর কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পদক্ষেপের পেছনে বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল।

বক্তব্যে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, গত ৭ মার্চ আমাদের রাষ্ট্রদূতকে একটি বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল যেখানে অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরাও অংশ নিয়েছিলেন। বৈঠকে জানানো হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পেশ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীরা আনুষ্ঠানিকভাবে অনাস্থা প্রস্তাব আনার একদিন আগেই এই ঘটনা ঘটেছিল।

এ ঘটনার পর জাতীয় পরিষদ ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

পাকিস্তানের একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রোববার ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টারও বেশি সময় দেরিতে শুরু হয় অধিবেশন। অনাস্থা প্রস্তাবকে অসাংবিধানিক উল্লেখ করে সরাসরি তা খারিজ করে দেন ডেপুটি স্পিকার।

অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের পর আপাতত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ রক্ষা করলেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান

গত ৮ মার্চ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় বিরোধী দলগুলো। ওই প্রস্তাবের ওপর পরের ৯ মার্চ ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জাতীয় পরিষদের একজন সদস্যের মৃত্যুর কারণে ২৮ মার্চ পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবির ঘোষণা দেন স্পিকার আসাদ কায়সার।

এর পর ২৮ মার্চ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাবটি উত্থাপনের পর ৩১ মার্চ পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি করেন ডেপুটি স্পিকার কাশেম খান সুরি।

পূর্ব নির্ধারিত ৩১ মার্চ অধিবেশন শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার তা ৩ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত রাখেন।

অনাস্থা প্রস্তাব আনার পর ইমরান খান বারবার বলেছেন, ‘পরিস্থিতি যাই হোক, আমি পদত্যাগ করব না। আমি শেষ বল পর্যন্ত খেলব। আমি অনাস্থা ভোটের একদিন আগে তাদের চমকে দেব।’

৩৪২ সদস্যের জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ইমরান খানকে ১৭২ জনের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। তার দল পিটিআইয়ের সদস্য সংখ্যা ১৫৫। তবে দলের কয়েকজন সদস্য এবং জোট শরিকরা ইমরানের পক্ষ ত্যাগ করায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারতে হয় তাকে।

ক্রাইম ডায়রি // আন্তর্জাতিক