সংঘর্ষে উত্তাল পাকুন্দিয়াঃ হিংসাত্বক মনোভাব কাম্য নয়

বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলে হিংসাত্বক কার্যকলাপ করে বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার প্রিয় আওয়ামিলীগকে কলংকিত করবেন এটা মেনে নিলে একটি জাতীর মৌলিক আদর্শে গড়ে ওঠা দলের নীতির সঙ্গে বেঈমানী করা হয়।

সংঘর্ষে উত্তাল পাকুন্দিয়াঃ হিংসাত্বক মনোভাব কাম্য নয়

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ একটি জাতীর ইতিহাস এবং জাতীর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে গঠিত দল। সুতরাং, যারা এ দলে সম্পৃক্ত হয় ধরে নেয়া তারা সেই আদর্শকে ধারন করে। কিন্তু ইদানীং কালে দলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আভ্যন্তরীন সংঘাত বড় বিষাদময়।

কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতাঃ

দলের ভিতর গ্রুপিং নতুন কিছু নয়। মানব সভ্যতার শুরু হতেই প্রকৃতিগত কারনে মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যই হলো গ্রুপিং করা। কম আর বেশি। সব দলে, সব সমাজে এবং দেশে গ্রুপিং একটি বড় ইস্যু।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ একটি জাতীর ইতিহাস এবং জাতীর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে গঠিত দল। সুতরাং, যারা এ দলে সম্পৃক্ত হয় ধরে নেয়া তারা সেই আদর্শকে ধারন করে। কিন্তু ইদানীং কালে দলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আভ্যন্তরীন সংঘাত বড় বিষাদময়।

মার্চ ২৬, শনিবার মহান স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ফুল দেওয়া কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা সদর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশের সহযোগিতায় টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ সময় পাঁচ পুলিশসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

 

স্থানীয় সুত্রে  জানা গেছে, পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাবেক এমপি এবং বর্তমান এমপি পুলিশের সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদের সমর্থকদের মধ্যে গত দুদিন ধরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল।  এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকালে নূর মোহাম্মদ এমপির সমর্থকরা সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিনের নামে কুৎসা রটনা করে বিক্ষোভ মিছিল করে স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিতে বাঁধার হুমকি দেয়।

এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিনের ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য তৌফিকুল হাসান সাগর তার ফেসবুক টাইমলাইনে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে লিখেন— ‘মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঘোষিত, পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত আনন্দ শোভাযাত্রায় যদি কোনো লাশ পড়ে... তা হলে সেই লাশের জানাজা হবে গণ ভবনে!!!‘  আর এমন স্ট্যাটাসের পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। অতিরিক্ত পুলিশ তলব করা হয় কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকে।                      

শনিবার মহান স্বাধীনতা দিবসের সকাল থেকে বর্তমান এমপি পুলিশের সাবেক আইজিপি নূরের সমর্থকরা বল্লম, রাম দা, রড, হকিস্টিক, হলঙ্গা, সুড়কিসহ বিভিন্ন প্রকার দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলা সদরে জড়ো হতে থাকে। এ সময় সাবেক এমপি এবং বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিনকে যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার হিসেবে স্লোগান দিয়ে তাদের আগমন পথ আগলে রাখেন তারা।

এমন পরিস্থিতিতে দুপুর ১২টার দিকে ব্যাপক লাঠিচার্জ এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বর্তমান এমপি সমর্থকদের অবরোধ কর্মসূচি পণ্ড করে দেয় পুলিশ। আর এ ফাঁকে সাবেক এমপি বর্তমান পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন তার সমর্থকদের নিয়ে উপজেলা চত্ত্বরে নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তারা সংক্ষিপ্ত মোনাজাত করে দ্রুততম সময়ে কর্মসূচি সমাপ্ত করেন।

বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এবং পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রফিকুল ইসলাম রেনু দাবি করেন, সাবেক এমপি সোহরাব তার সমর্থকদের সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে আমাদের ওপর হামলা চালাতে এসেছিল। আমরা শুধু প্রতিরোধের চেষ্টা করেছি।

সাবেক এমপি এবং বর্তমান পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন দাবি করেন, তিনি তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে আসেন। কিন্তু বর্তমান এমপি নূর মোহাম্মদের সশস্ত্র সমর্থকরা তার গতিরোধ করার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নেতৃত্ব পালনকারী কিশোরগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আল আমিন হোসাইনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং উপজেলা সদরের মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে তিনি জানান। 

ক্রাইম ডায়রি // রাজনীতি