চলমান প্রকল্পের ঠিকাদারকে নিয়ে ভ্রমণে মেয়র ও প্রকৌশলী; রাজশাহী জুড়ে তোলপাড়

" সবাই বলছেন সামথিং রং। চলমান কাজের ঠিকাদারকে সঙ্গে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের এই আনন্দ ভ্রমণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পৌরবাসীর অনেকেই। পৌরবাসীসহ অনেক কাউন্সিলরের প্রশ্ন— মেয়র  চলমান প্রকল্পের একজন ঠিকাদারের সঙ্গে কক্সবাজারে প্রমোদ ভ্রমণ করছেন কীভাবে, কোন নিয়মের বলে?"

চলমান প্রকল্পের ঠিকাদারকে নিয়ে ভ্রমণে মেয়র ও প্রকৌশলী; রাজশাহী জুড়ে তোলপাড়
চলমান কাজের ঠিকাদারকে সঙ্গে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের এই আনন্দ ভ্রমণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পৌরবাসীর অনেকেই। পৌরবাসীসহ অনেক কাউন্সিলরের প্রশ্ন— মেয়র  চলমান প্রকল্পের একজন ঠিকাদারের সঙ্গে কক্সবাজারে প্রমোদ ভ্রমণ করছেন কীভাবে, কোন নিয়মের বলে? 
রাজশাহী বিভাগীয় সংবাদদাতাঃ

রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলায় একটি  প্রকল্পের কাজ চলমান থাকা অবস্থায় প্রকল্পের  ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর সঙ্গে  আনন্দ ভ্রমণে বেরিয়েছেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র ওবায়দুল্লাহ। ঢাকায় একটি কাজ শেষে তারা সকলে মিলে কক্সবাজারে বেড়াতে যান। সেই সময় একটি দামী  হোটেলের সুইমিংপুলে তাদের আনন্দময় মুহৃর্তের ছবি  আগস্ট ২৬,২০২১ইং  সকাল থেকে তারা নিজ নিজ ফেসবুক আইডিতে কক্সবাজারের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়ানোর ছবি পোস্ট করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া ছবিগুলোতে দেখা গেছে, বিলাসবহুল রিসোর্ট হোটেল সি-গলের সুইমিংপুলের নীল জলে জলকেলি করছেন মেয়র ওবাইদুল্লাহ, প্রকৌশলী ও পৌর সচিব সারোয়ার হোসেন মুকুল এবং ঠিকাদার আকবর আলী।  এরপরই তা  নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় গোদাগাড়ীসহ গোটা রাজশাহীতে। সবাই মনে করছেন চোরে চোরে মাসতুত ভাই হবার সম্ভবনা রয়েছে এই ইস্যুতে।

চলমান কাজের ঠিকাদারকে সঙ্গে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের এই আনন্দ ভ্রমণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পৌরবাসীর অনেকেই। পৌরবাসীসহ অনেক কাউন্সিলরের প্রশ্ন— মেয়র  চলমান প্রকল্পের একজন ঠিকাদারের সঙ্গে কক্সবাজারে প্রমোদ ভ্রমণ করছেন কীভাবে, কোন নিয়মের বলে? 

স্থানীয় পৌরবাসী সুত্রে জানা গেছে, ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গোদাগাড়ি পৌরসভা। তবে এখানে নাগরিক পরিসেবা শুধু মুখে।  দেনা থাকায় ও নিজস্ব কোন আয়ের পথ না থাকায় পৌরসভার ৩৮জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনভাতা নিয়মিত হয় না।  এর মধ্যে হাট ও ঘাট ইজারা বিক্রির টাকায় মেয়রের জন্য কেনা হয় আড়াই কোটি টাকার পাজেরো গাড়ি। গত ২১ এপ্রিল ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গত জানুয়ারিতে নির্বাচিত মেয়র মনিরুল ইসলাম বাবু। তার পর থেকেই প্যানেল মেয়র-১ মোহাম্মদ ওবাইদুল্লাহ ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাবুর মৃত্যুর পর থেকেই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিরুদ্ধে নানা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বলে জানা যায়। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোদাগাড়ী পৌর এলাকায় একটি সড়ক ও ড্রেনেজ উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রায় ১২ কোটি টাকা অনুমোদন হয়। প্রকল্পটি চলমান। কাজ করছেন ঠিকাদার আকবর আলীর প্রতিষ্ঠান সোনিয়া এন্টারপ্রাইজ। গত ২৩ আগস্ট,২০২১ইং পৌরসভার মাসিক সভা হওয়ার কথা ছিল।  এক সপ্তাহ আগে সভার নোটিশও জারি করা হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে কাজ আছে জানিয়ে সভাটি একদিন আগে স্থগিত করে গত ২২ আগস্ট বিকালের ফ্লাইটে ভারপ্রাপ্ত মেয়র ওবাইদুল্লাহ, পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত সচিব সারোয়ার জাহান মুকুল এবং ঠিকাদার আকবর আলী রাজশাহী থেকে ঢাকায় যান।  ঢাকায় তিন দিন অবস্থানের পর ২৫ আগস্ট,২০২১ইং বিকালের ফ্লাইটে তারা আনন্দ ভ্রমণে কক্সবাজার পৌঁছান। উঠেন কক্সবাজারের বিলাসবহুল রিসোর্ট হোটেল সি-গলে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত তারা কক্সবাজারেই অবস্থান করছিলেন এবং বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন বলে জানা গেছে। 

  গোদাগাড়ীর ভারপ্রাপ্ত মেয়র এম ওবাইদুল্লাহকে স্থানীয় সাংবাদিকরা ফোনে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, তারা একটু ঘুরতে গেছেন। তবে ঠিকাদার আকবর ও প্রকৌশলী মুকুলের সঙ্গে থাকার কথা অস্বীকার করলেও ফেসবুকে তাদের ছবি থাকার কথা বলার পর মেয়র বিষয়টি স্বীকার করেন।  চলমান প্রকল্পের ঠিকাদারের সঙ্গে আনন্দ ভ্রমণে থাকার কথাও প্রথমে অস্বীকার করেন পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত সচিব সারোয়ার হোসেন মুকুলও। একসঙ্গে জলকেলির ছবি ফেসবুকে থাকার কথা বলার পর তিনি তা স্বীকার করেন। আর ঠিকাদার আকবর আলী এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। 

এদিকে পৌরসভার একাধিক কাউন্সিলর নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অনেক দিন ধরেই প্রকৌশলী মুকুলের সহায়তায় গোদাগাড়ী পৌরসভার প্রায় অধিকাংশ প্রকল্পের একচেটিয়া ঠিকাদারি পেয়ে আসছে আকবর আলীর মালিকানাধীন সোনিয়া এন্টারপ্রাইজ। আকবর আলীকে সামনে রেখে কাজ নেওয়া-দেওয়া হলেও প্রকৌশলী মুকুলও টেন্ডার সিন্ডিকেটের একজন অংশীদার। আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকাতে অতি গোপনে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দীর্ঘদিন ধরে গোদাগাড়ী পৌরসভার সব ঠিকাদারি কাজ ভাগ-বাটোয়ারা করে আসছে শক্তিশালী এই সিন্ডিকেট। ফলে বাইরের কোনো ঠিকাদার জানতেই পারেন না কখন কোন প্রকল্পের টেন্ডার হচ্ছে। এমনকি কাউন্সিলররাও তা আগে টের পান না।  এভাবে সিন্ডিকেট করে প্রকৌশলী মুকুল বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। রাজশাহী মহানগরীতে বানিয়েছেন বাড়ি। একই সঙ্গে নির্বাচিত মেয়র মনিরুল ইসলাম বাবুর মৃত্যুর পর বালুঘাট ইজারার ৭১ লাখ টাকাও ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন ওবাইদুল্লাহ ও ইঞ্জিনিয়ার মুকুল। 

রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (ডিডি-এলজি) শাহানা আখতার জাহান স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঠিকাদারকে সঙ্গে নিয়ে মেয়র ও ইঞ্জিনিয়ারের আনন্দ ভ্রমণে বের হওয়া অফিসিয়ালি অনৈতিক ও রেগুলেশনের বাইরে। এ নিয়ে যে কেউ প্রশ্ন তুলতেই পারেন। প্রশ্ন তোলাটাও যৌক্তিক। যেখানে ওই ঠিকাদার বর্তমানে পৌরসভার একটি বড় প্রকল্পের কাজ করছেন। তিনি আরও বলেন, নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণসহ কেউ অভিযোগ করলে বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হবে।  

ক্রাইম ডায়রি//ক্রাইম