চুয়াডাঙ্গায় ভ্যাকসিন নেয়ায় স্ত্রী নির্যাতনঃ স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের

অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার সন্ধ্যায় সালিস বৈঠক বসে। সালিসে গৃহবধূর ছেলে ও স্বামীর মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হয়। ভ্যাকসিন নেয়ার ঘটনায় স্বামী কর্তৃক স্ত্রী নির্যাতনের ব্যাপারটি নির্মম বলে স্বামীকে সবাই ধিক্কার জানান।

চুয়াডাঙ্গায় ভ্যাকসিন নেয়ায় স্ত্রী নির্যাতনঃ স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের

Wife tortured for taking vaccine in Chuadanga Complaint lodged against husband at police station.

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধিঃ

করোনার টিকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার কোন শেষ নেই। ছোট থেকে বড় হওয়া অবধি অনেক টিকা একজন মানুষ নিতে হয়। কিন্তু শুধু মাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও মোল্লামী গুজবে করোনার টিকার মধ্যে ইলেকট্রনিক চিপ,হারাম,নাপাক এমন সব বিশেষণ ব্যবহার হচ্ছে। 

টিকা গ্রহণকারী ঈমানদার হতে পারে না এবং টিকাগ্রহণকারী মানুষের হাতে কোনো কিছু খাওয়া যাবে না, দাবি করে আমার স্বামী রেজাউল করিম আমাকে মারপিট করে মারাত্মকভাবে আহত  করে

সম্প্রতি, চুয়াডাঙ্গা জেলার  জীবননগর উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামে এক গৃহবধূ করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নেয়ার অপরাধে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে বাবার বাড়িতে তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার তিন মাস পর অসহায় গৃহবধূ স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার সন্ধ্যায় সালিস বৈঠক বসে। সালিসে গৃহবধূর ছেলে ও স্বামীর মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হয়। ভ্যাকসিন নেয়ার ঘটনায় স্বামী কর্তৃক স্ত্রী নির্যাতনের ব্যাপারটি নির্মম বলে স্বামীকে সবাই ধিক্কার জানান।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী সূত্র জানায়, জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের সেনেরহুদা গ্রামের রেজাউল করিমের স্ত্রী নাসিমা খাতুন (৪৫) গত ৪ অক্টোবর করোনাপ্রতিরোধী ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন। ভ্যাকসিনগ্রহণকারী ব্যক্তি নাপাক এবং ইসলামের দৃষ্টিতে বেঈমান দাবি করে গৃহবধূ সালমা খাতুনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে হতদরিদ্র বাবার বাড়িতে তাড়িয়ে দেয়। সেই থেকে গৃহবধূ নাসিমা দরিদ্র বাবার বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকে। এদিকে স্বামী রেজাউল করিম আবার দ্বিতীয় বিয়ে করেছে শুনে নির্যাতিতা গৃহবধূ নাসিমা থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

নির্যাতনের শিকার নাসিমা খাতুন বলেন, আমি গত ৪ অক্টোবর দুপুরের দিকে হাসপাতাল থেকে করোনাপ্রতিরোধী ভ্যাকসিন নিয়ে আমার বড় বোন সালমা খাতুনকে সাথে নিয়ে বাড়িতে যাই। আমি কেন টিকা গ্রহণ করেছি। টিকা গ্রহণকারী ঈমানদার হতে পারে না এবং টিকাগ্রহণকারী মানুষের হাতে কোনো কিছু খাওয়া যাবে না, দাবি করে আমার স্বামী রেজাউল করিম আমাকে মারপিট করে মারাত্মকভাবে আহত করে। এই সময় আমার বড় বোন সালমা খাতুন ঠেকাতে গেলে তাকেও বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। আমাদের মারপিট করার পর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। আমাদের ৩২ বছরের দাম্পত্য জীবনে রেজাউল করিম আমাকে নানা অজুহাতে অত্যাচার নির্যাতন করে আসছিল। সে আমাদের বিবাহযোগ্য ছেলেদের সাথেও খারাপ আচরণ করে। আমার স্বামী আসলে আমাকে তালাক দেয়ার অজুহাত খুঁজছিল। এখন টিকা নিয়েছি, সেই অজুহাতে আমার স্বামী আমাকে আর নিবে না এবং দ্বিতীয় একটা বিয়েও করেছে বলেও শুনেছি। বাধ্য হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু সোমবার সালিস সভায় তিনি আমার ছেলে লিখনের ওপর চড়াও হয়। তাদের দু’জনকে পুলিশ আটকিয়ে রাখে। কিন্তু পরে ছেড়ে দেয়।

জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) স্বপন কুমার দাস বলেন, ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ক্রাইম ডায়রি/ ক্রাইম