কঠোর নীতিমালা আসছেঃ তদবির বানিজ্য বন্ধ হবেঃ যোগ্যতা ও নিয়মে হবে বদলী ও পদায়ন

Strict policies are coming - lobbying trade will be stopped - transfers and assignments will be based on qualifications and rules

কঠোর নীতিমালা আসছেঃ তদবির বানিজ্য বন্ধ হবেঃ যোগ্যতা ও নিয়মে হবে বদলী ও পদায়ন

আতিকুল্লাহ আরেফিন রাসেলঃ

তিনি বঙ্গকন্যা।। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের যোগ্য উত্তরাধিকার।। অনেকেই শুনেছেন একাত্তর পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর অনেক ভাষণ। যেখানে তার বক্তব্যে অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার।।  সরকারি দফতরগুলোয় তিনি সবসময়ই কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলতে নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।। প্রতিজন মন্ত্রীই যেন তার আদর্শে গড়া সৈনিক।। সোনার বাংলা গড়ার অন্যতম কারিগর। সম্প্রতি, সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের  সীমাহীন তদবিরের চাপে বিরক্ত হয়ে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে  জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যাতে কোনো কর্মকর্তা বদলি-পদায়নের জন্য তদবিরই করতে না পারেন সে পথ একেবারে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এ সংক্রান্ত কঠোর অনুশাসন সংবলিত বিশদ নীতিমালার খসড়া প্রায় চূড়ান্ত হবার পথে।  ডিসেম্বরে এটি চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে । পহেলা জানুয়ারি থেকে যাতে কার্যকর করা যায় সে রকম টার্গেট নিয়ে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি।

চূড়ান্ত হওয়া ১৫ পাতার এ নীতিমালার খসড়া প্রস্তাবনায় মোটা দাগে বলা হয়েছে, কোনো কর্মকর্তা তার কিংবা অন্য কারও বদলি-পদায়নের জন্য তদবির করতে পারবেন না। শুধু অসুস্থতা এবং স্বামী-স্ত্রী এক স্টেশনে চাকরি করার প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা লিখিত আবেদন করতে পারবেন। তাও সেটি বিবেচনা করবে একটি নির্দিষ্ট কমিটি। কিন্তু একবার কাউকে কোথাও বদলি করলে তাকে অবশ্যই সেখানে যোগ দিতে হবে।আর যোগদান না করে সেটি বাতিল কিংবা নিজের পছন্দের জায়গায় পোস্টিং নিতে কোনো প্রকার তদবির কিংবা চাপ প্রয়োগ করা হয়, তাহলে সেটি চাকরি শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। কাউকে স্ট্যান্ড রিলিজ কিংবা যেদিন থেকে তাকে অবমুক্ত করার কথা বলা হবে, সেদিনই তাকে রিলিজ নিতে হবে। আদেশ  অমান্যকারীর বেতন বন্ধ রাখাসহ চাকরি অসন্তোষজনক হিসেবে রিপোর্ট করা হবে। নেতিবাচক এ প্রতিবেদন পদোন্নতির সময় মূল্যায়ন করা হবে। অর্থাৎ এ ধরনের কর্মকর্তার জন্য পরবর্তী পদোন্নতির বিষয়ে নেগেটিভ ইফেক্ট হতে পারে।

আবার কেউ যদি মেডিকেল রিপোর্ট জমা দিয়ে পদায়ন বাতিল কিংবা  পোস্টিং চায় তবে তা তার এসিআরের ডোসিয়ারে নোট আকারে সংরক্ষণ করা হবে। পরে সেটি তার এসিআর ফরমের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত হবে। এছাড়া কোনো কর্মকর্তার লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বদলির উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তাকে মাঠ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট পর্যায়গুলোর মেয়াদ পূরণ করতে হবে। আবার তাকে অবশ্যই মেয়াদপূর্তির ৩ মাস আগে অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে হবে। কর্মকর্তাদের এ ধরনের লিখিত আবেদন বিবেচনা করার জন্য কমিটির মাধ্যমে  ২ মাস পরপর একটি সভা করে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে।

বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে মেধা-যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়নসহ সমগ্র চাকরি জীবনে একটি ভারসাম্যের নীতি বহাল রাখাই হবে এ নীতিমালার মৌলিক উদ্দেশ্য। অর্থাৎ মেধা-যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও একজন কর্মকর্তা চাকরি জীবনের বেশির ভাগ সময় অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করবেন, আর একজন সব ভালো পোস্টিং এনজয় করবেন, তা হবে না। এক্ষেত্রে সমনীতি কার্যকর করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ক্যারিয়ার প্ল্যানিং উইংকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে।

 শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কর্মজীবনের বাস্তব দক্ষতাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি মূল্যায়ন সাপেক্ষে  কর্মকর্তাদের বিষয়ে  গোপনীয় প্রতিবেদন  সংরক্ষিত হবে। এছাড়া একজন কর্মকর্তা যাতে ঘুরেফিরে মাল্টিপোস্টিং তথা অনেক বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন সে ব্যবস্থাও নেয়া হবে।

প্রস্তুত করা নীতিমালাটি প্রথমদিকে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের জন্য করা হলেও বর্তমানে সেটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পদায়ন নীতিমালা হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যত ধরনের বদলি ও পদায়নের এখতিয়ার রাখে সেখানে এটি প্রযোজ্য হবে। কেননা, বিভিন্ন ক্যাডার থেকে অপশন দিয়ে অনেকে প্রশাসন পুলের উপসচিব পদে যোগ দিয়ে থাকেন।

চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর জ্যেষ্ঠতা বজায় রেখে সহকারী কমিশনার (ভূমি), সহকারী কমিশনার পদে পদায়ন করতে হবে। এ পদে তিনি সর্বোচ্চ ২ বছর দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর তাকে বিভাগীয় কমিশনার অথবা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবশ্যিকভাবে পদায়ন করতে হবে।

সিনিয়র স্কেলপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্য হতে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর/চার্জ অফিসার/জেসিও পদে পদায়ন করতে হবে। তবে সেক্ষেত্রে এসি ল্যান্ড পদে যারা বেশি দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কিন্তু এসি ল্যান্ড হিসেবে তিনি যে জেলায় কর্মরত ছিলেন তাকে সেই জেলা ব্যতীত অন্য জেলায় পোস্টিং দিতে হবে।

এছাড়া সিনিয়র স্কেলপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্য হতে জেলা পরিষদের সচিব/পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে পদায়ন করতে হবে। এজন্য তাদের চাকরি যথারীতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত হবে।

অপরদিকে সিনিয়র স্কেল প্রাপ্তি এবং চাকরির মেয়াদ কমপক্ষে ৬ বছর পূর্ণ হওয়ার পর একজন কর্মকর্তাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে পদায়নে ফিটলিস্টভুক্তির জন্য বিবেচনা করা যাবে। তালিকাভুক্ত কর্মকর্তাকে তার নিজ এবং স্বামী বা স্ত্রীর জেলা ব্যতীত অন্য কোনো জেলায় পোস্টিং দিতে হবে। এ পদে তার সাধারণ কর্মকাল হবে ২ বছর। তবে কোনো ইউএনওকে একই জেলায় একাধিক উপজেলায় পদায়ন করা যাবে না।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, বিভাগীয় কমিশনারসহ মন্ত্রী ও সচিবদের পিএসসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের পদে পদায়নে বিস্তর গাইডলাইন রয়েছে এ নীতিমালায়।

পদায়ন নীতিমালা প্রস্তুত করতে ৩ মাস আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডিকে (অতিরিক্ত সচিব) প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে এপিডি উইং ছাড়াও সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি উইংয়ের কর্মকর্তাদের সংযুক্ত করা হয়েছে।

এ কমিটি সর্বশেষ বৈঠক করেছে ২৯ অক্টোবর। আশা করা হচ্ছে, আরও ২-৩ বৈঠক হওয়ার পর নীতিমালা চূড়ান্ত হবে। ইতোমধ্যে খসড়া আকারে যা চূড়ান্ত করা হয়েছে সেখানে নীতির সারমর্ম চলে এসেছে। এখন শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ঘষামাজার কাজ চলছে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বাদ পড়েছে কিনা বা কোথাও কোনো ফাঁক-ফোকর থাকলে সেটি বন্ধ করা হচ্ছে। খুঁটির জোরে আর কোন কাজ হবেনা।  মেধার ভিত্তিতে  প্রশাসন গড়ে উঠবে।

  তদবির এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে সংশ্লিষ্টদের প্রতিনিয়ত কাজই যেন তদবিরের মোকাবেলা করা। যাতে তারা বিরক্ত।  এছাড়া তদবির নিয়ে প্রতিদিনই এমন সব গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় থেকে ফোন আসতে থাকে যে, তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হোক বা না হোক আমলে না নিয়েও উপায় থাকে না। বিষয়গুলোতে এতটাই গুরুত্ব দিতে হয় যে, প্রতিদিন অফিসের নোট প্যাডে দিন-তারিখ দিয়ে তা লিখে রাখতে হয়।

সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এ নীতিমালা প্রণয়নের পেছনে বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ব্যাপক অবদান রয়েছে। তারা যথাযথ পরামর্শ দিয়ে চূড়ান্ত হতে যাওয়া নীতিমালাকে আরও সমৃদ্ধ করেছেন। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এছাড়া জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন সব সময় এটি মনিটরিং করছেন। 

এই নীতিমালা বাস্তবায়নের কৌশলগুলো যদি প্রয়োগ হয় তবে অনেকেই মনে করছেন সোনার বাংলা গড়ার বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার স্বপ্ন পূরণের ভিত মজবুত হবে।।সাম্য ফিরে আসবে সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝে। ফলে খুশিই হবেন সকল দফতরের কর্মকর্তাগন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞগন।

ক্রাইম ডায়রি ///জাতীয়