ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের কবলে রাজধানীঃ এথনই ব্যবস্থা না নিলে অনেক দেরী হয়ে যাবে

দূষণের অন্যতম বড় উৎস হচ্ছে বর্জ্য। রাজধানীতে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলায় এটি মারাত্মক সমস্যারূপে চিহ্নিত হয়েছে। রান্নাঘরের বর্জ্য থেকে শুরু করে পরিধেয়, প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ, প্লাস্টিক, কাগজ, ব্যাটারিসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর বর্জ্যও উৎপন্ন হচ্ছে। রাস্তার পাশে ডাস্টবিনগুলো ময়লা আবর্জনায় উপচানো থাকে। সেখান থেকে জীবাণু ও দুর্গন্ধ ছড়ায়। শহরের কল-কারখানাগুলো থেকে প্রতিনিয়ত বিষাক্ত বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে।

ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের কবলে রাজধানীঃ এথনই ব্যবস্থা না নিলে অনেক দেরী হয়ে যাবে
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকায় দূষণ বাড়ার উপযোগী উপাদান দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে ইটভাটা, বর্জ্য পোড়ানো, কলকারখানা ও গাড়ির কালো ধোঁয়া দূষণের জন্য দায়ী। 
শরীফা আক্তার স্বর্নাঃ

 

ঢাকার পানি, বাতাস ও শব্দদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে এসব দূষণ কয়েক গুণ ছাড়িয়ে গেছে। এদিকে অস্বাভাবিক দূষণে বাড়ছে সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ। নানামুখী দূষণে মানুষের শ্রবণশক্তি ব্যাপক হারে হ্রাস পাচ্ছে। উচ্চরক্তচাপ (ব্লাড প্রেসার), হৃদরোগ, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, অ্যালার্জি সমস্যা বাড়ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ক্যানসারের মতো রোগের ঝুঁকিও। ফলে ঢাকা দূষণের নগরীতে পরিণত হয়েছে এবং দ্রুত হারাচ্ছে বাসযোগ্যতা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকায় দূষণ বাড়ার উপযোগী উপাদান দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে ইটভাটা, বর্জ্য পোড়ানো, কলকারখানা ও গাড়ির কালো ধোঁয়া দূষণের জন্য দায়ী। 

আন্তর্জাতিক জার্নাল কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চে প্রকাশিত একটি গবেষণায়, বায়ু দূষণকে ‘মহামারি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বায়ু দূষণের কারণে সারা বিশ্বে মানুষের গড় আয়ু প্রায় তিন বছর কমেছে। অকালে মারা যাচ্ছে প্রায় ৮৮ লাখ মানুষ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে তেল, গ্যাস, কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উৎপন্ন দূষণ সৃষ্টিকারী কণার প্রভাব মানুষের ফুসফুসে প্রায় এক বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। গবেষণায় আরো বলা হয়েছে জনস্বাস্থ্যের ওপর বায়ু দূষণের প্রভাব ধূমপানের চেয়েও ক্ষতিকর। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে এই ক্ষতি কমানো সম্ভব।

দূষণের অন্যতম বড় উৎস হচ্ছে বর্জ্য। রাজধানীতে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলায় এটি মারাত্মক সমস্যারূপে চিহ্নিত হয়েছে। রান্নাঘরের বর্জ্য থেকে শুরু করে পরিধেয়, প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ, প্লাস্টিক, কাগজ, ব্যাটারিসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর বর্জ্যও উৎপন্ন হচ্ছে। রাস্তার পাশে ডাস্টবিনগুলো ময়লা আবর্জনায় উপচানো থাকে। সেখান থেকে জীবাণু ও দুর্গন্ধ ছড়ায়। শহরের কল-কারখানাগুলো থেকে প্রতিনিয়ত বিষাক্ত বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে। এগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয়বহুল বলে অনেক প্রতিষ্ঠান এগুলো মুক্তভাবে শহরের খাল-বিল নদী-নালায় ফেলছে। এগুলোর মধ্যে কাপড়ের রং, চামড়াশিল্পে উত্পন্নবর্জ্য, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, কলকব্জা এসব উল্লেখযোগ্য। বর্তমান সময়ে ঢাকায় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ অধিকহারে চলছে। 

দেখা যায়, কাজ শেষে ময়লার ভাগাড়ে ইট, বালু, নুড়ির স্তূপ পড়ে থাকে। এগুলো শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা নষ্ট করছে। ফলে শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। শহরবাসী সম্মুখীন হচ্ছে কৃত্রিম বন্যার। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতেও কঠিন বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে। ব্যবহৃত ওষুধের প্যাকেট, সুচ, সিরিঞ্জ, ছুরি-কাঁচি ইত্যাদি বর্জ্য বিপজ্জনক এবং কিছু ক্ষেত্রে সংক্রামক রোগের বাহকও বটে। তাই এসব বর্জ্য ঢাকনাসহ বাক্সে রেখে আলাদাভাবে ব্যবস্থাপনা করা উচিত।

রাজধানীতে প্রতিদিনই বাড়ছে শব্দদূষণের মাত্রা। যেসব সড়কে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে সেখানেও নিষেধাজ্ঞা মানছে না কেউই। অতিমাত্রায় শব্দদূষণের কারণে বধিরতার পাশাপাশি বাড়ছে শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যা। হাসপাতাল, স্কুল এবং আবাসিক, বাণিজ্যিক, মিশ্র ও শিল্প এলাকা- চিহ্নিত করে যে শব্দসীমা বেঁধে দিয়েছে সরকার, তা মানছে না কেউ। গাড়ির হর্ন, নির্মাণ কাজ, মাইকের ব্যবহার, শিল্পকারখানার শব্দ বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ৬০ ডেসিবেল শব্দ মানুষের সাময়িক শ্রবণশক্তি নষ্ট করতে পারে। আর ১০০ ডেসিবেল শব্দ চিরতরে শ্রবণশক্তি নষ্ট করে দিতে পারে। এই হিসাবে রাজধানীতে শব্দদূষণ মানুষকে বধিরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা শহরের প্রায় সব এলাকাতেই গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ হচ্ছে। শব্দ দূষণের শিকার হচ্ছেন সব বয়সি মানুষ। বেশি ঝুঁকিতে শিশুরা। চিকিত্সকরা বলছেন, শব্দ দূষণের ফলে শ্রবণশক্তি কমা ছাড়াও মানুষের উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

ঢাকায় সাধারণভাবে যানবাহন ও হর্নের শব্দই শব্দদূষণের মূল কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এর বাইরে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উচ্চশব্দে মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার আরেকটি বড় কারণ। আর রাস্তা ছাড়া বাড়ি বা আবাসিক এলকায় বিয়েসহ নানা সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উচ্চমাত্রার শব্দযন্ত্র ব্যবহার এবং গানবাজনা অন্যতম কারণ।

 

বায়ুদূষণের পাশাপাশি বর্জ্যদূষণে ঢাকার পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে। বর্জ্যদূষণ বিশেষ করে করোনা বর্জ্য রাজধানীবাসীর জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার চলতি বছরের ৩০ মে ঘরের বাইরে সবখানে সবার মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে। স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যবহার করছেন, গ্লাভস ও পিপিই। এসবই ব্যবহারের পর হয়ে যায় কোভিড বা করোনা বর্জ্য। বাসাবাড়ি ও চিকিৎসাকেন্দ্রে করোনা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে হচ্ছে না। করোনা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের জারি করা নির্দেশিকা ও গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও কোথাও এর বাস্তবায়ন নেই।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের এক গবেষণায় প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসা বর্জ্যরে মাত্র ছয় দশমিক ছয় ভাগের সঠিক ব্যবস্থাপনা হয়। বাকি ৯৩ ভাগই যত্রতত্র পড়ে থাকছে। পরিবেশবাদি বিভিন্ন সংগঠন বলছে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় দৈনিক গড়ে ২০৬ দশমিক ২১৭ মেট্রিক টন করোনা বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এ সব বর্জ্যরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। পরিবেশ নিয়ে কর্মরত নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন বাংলাদেশের (এনসিসিবি) রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি অফিসার মাহবুবুর রহমান অপু বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় দৈনিক গড়ে ২০৬ দশমিক ২১৭ মেট্রিক টন করোনা বর্জ্য উৎপাদিত হয়।
 
দেশের গৃহস্থালি করোনা বর্জ্যরে পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং অফিস-আদালতের করোনা বর্জ্য মিলিয়ে বিশাল এ অপচনশীল ও সংক্রামক বর্জ্য গণস্বাস্থ্যর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে এ বর্জ্য রাজধানীর পরিবেশর জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর পরিবেশ সুরক্ষায় মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দ্রæত আধুনিকায়ন ও সমন্বিত নীতিমালা প্রয়োজন। আর শুধু নীতিমালা করলেই হবে না এর সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য পরিবেশ অধিদফতরের নেতৃত্বে, স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয়ে নাগরিক সমাজ, গবেষক এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিদের যুক্ত করে একটি ‘সংক্রামক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মনিটরিং সেল’ গঠন জরুরি।
মেডিক্যাল বর্জ্য নিয়ে কাজ করে বেসরকারি সংগঠন-প্রিজম বাংলাদেশ। করোনার শুরুর দিকে এ সংগঠনটি বিভিন্ন হাসপাতাল এবং বাসাবাড়িতে জমা হওয়া বর্জ্যরে জন্য দুই সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে একযোগে কাজ করছিল। কিন্তু শুরুর দিকে এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের তৎপরতা থাকলেও এখন আর তাদের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। ঢাকার সরকারি-বেসরকারি ২৭টি হাসপাতালের সঙ্গে কাজ করছে প্রিজম বাংলাদেশ। এগুলো থেকে কোভিড বর্জ্য সংগ্রহ হয় প্রায় দুই হাজার কেজি।
জানা যায়, কোভিড হাসপাতালগুলো তাদের উৎপন্ন বর্জ্য বায়োসেফটি ব্যাগ ব্যবহার করে বাতাসনিরোধী (এয়ারটাইট) অবস্থায় সংরক্ষণ করে এবং প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন-এর কর্মীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংরক্ষণকৃত বর্জ্যরে ব্যাগে প্রথমে শক্তিশালী জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দেয়। তারপর বিশেষায়িত কাভার্ড ভ্যানে সেগুলো নিয়ে যায় মাতুয়াইলে অবস্থিত মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্টে। ইনসিনারেটরে উচ্চ তাপমাত্রায় (১২০০-১৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয় ওই বর্জ্য।
গবেষণায় দেখা গেছে, সারাদেশে চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৪৮ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। যার মাত্র ৩৫ টন ব্যবস্থাপনার আওতায় আছে। এর অধিকাংশই ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। মাস্কসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করছে ৭১ ভাগ মানুষ। তাদের মাস্ক ও অন্যান্য করোনা বর্জ্য পুরোটাই গৃহস্থালি বর্জ্যরে সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।
 
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল ইনকিলাবকে বলেন, গত বছর বেশিরভাগ সময় ঢাকা পৃথিবীর শীর্ষ বায়ুদূষণের শহরের একটি ছিল। ভারতের ‘গ্যাস চেম্বার’ আখ্যা পাওয়া দিল্লির বাতাসের চেয়েও বেশি দূষিত হয়ে পড়ে ঢাকার বাতাস। বায়ুর মান নিয়ে গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী টানা তিনদিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকার শীর্ষে ছিল ঢাকা। মার্চে করোনা মহামারির কারণে অঘোষিত লকডাউন শুরু হলে ঢাকার বাতাসের মান ধীরে ধীরে ভালো হতে শুরু করে। জুন-জুলাইয়ে এ শহরে বাতাসের মান ছিল স্বাস্থ্যসম্মত। এরপর লকডাউন শিথিল হওয়ার পর কলকারখানা চালু এবং যানবাহন চলাচল শুরু হলে ঢাকার বাতাস আবার দূষিত হতে শুরু করে। তবে এবার বায়ুদূষণের পাশাপাশি করোনা বর্জ্যে ঢাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপণার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ বন্ধ না করলে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিণত হবে।
ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে গড়ে ওঠা প্রায় ছয় হাজার ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া এবং গাড়ির ধোঁয়া রাজধানীর বাতাস দূষণের প্রধান অনুঘটক বলে জানিয়েছেন এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে অংশ নেয়া বক্তারা।
ক্রমবর্ধমান মারাত্মক বায়ুদূষণে বক্ষব্যাধি রোগের ওপর প্রভাব, প্রতিকার এবং আশু করণীয় শীর্ষক এ সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, যত্রতত্র অপরিকল্পিত ও অবৈধ ইটভাটা এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ির ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে রাজধানীর বাতাস। আর এ বায়ুদূষণ একটি নীরব ঘাতক হিসেবে বক্ষব্যাধি, শ্বাসকষ্ট, এমনকি উচ্চরক্তচাপ ও ব্রঙ্কাইটিসসহ নানা জটিল ও কঠিন রোগের জন্ম দিচ্ছে এবং এজন্য মানুষকে ধুঁকে ধুঁকে জীবন দিতে হচ্ছে।
আমাদের রাজধানীতে বায়ুদূষণের মাত্রা কত গভীর তা অনুমান করা যায় বায়ুদূষণে ঢাকা প্রায় সময় বিশ্বের প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানে থাকার খবর থেকে। বায়ুদূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, খোদ উচ্চ আদালতকে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিতে হয়েছে।
ইটভাটা ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির ধোঁয়ার পাশাপাশি কলকারখানার বর্জ্য বাতাসে মিশে দূষণ সৃষ্টি করছে। বায়ুদূষণ দৈব কোনো বিষয় নয়, এটি যে মনুষ্যসৃষ্ট একটি দুর্যোগ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এর তীব্র ক্ষতির শিকারও মানুষকেই হতে হচ্ছে। কিছু মানুষের লোভ-লালসার কারণে সৃষ্ট বায়ুদূষণে জনসাধারণের ভোগান্তি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বিপুলসংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ফিটনেসবিহীন গাড়ি এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেবে, এটাই কাম্য।
আমাদের মতো নদ-নদী ও গাছপালা বিশিষ্ট একটি দেশের পরিবেশ দূষণ খুবই দুঃখজনক বিষয়। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে যেখানে এ অঞ্চলের পানি, মাটি ও বাতাস সবচেয়ে বিশুদ্ধ হওয়ার কথা ছিল, সেখানে পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের গ্লানি বইতে হচ্ছে আমাদের। এর পেছনে গাড়ি ও ইটভাটার ধোঁয়া ছাড়াও কারখানার বর্জ্য নদী ও খাল-বিলসহ যত্রতত্র ফেলা, বনাঞ্চল উজাড় করা এবং নদী দখল ও দূষণ দায়ী।
 
সিটি কর্পোরেশন উত্তরের মেয়র আতিকের কিছু কর্মকান্ড সত্যিই আশা জাগানিয়া । বিশেষ করে খাল দখলমুক্ত করতে পারলে রাজধানীর সুয়ারেজ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে। তাহলে ড্রেনের জমানো পানি আর ধুলায় রুপ নেবেনা। পানি চলমান থাকলে সমস্যা অনেকাংশে কমে আসবে। তাছাড়া ওয়াটার বাস চালু হলে খাল ও নদী সবসময় নাব্য রাখার প্রতি একটি দায়বদ্ধতা থাকবে। ফলে খাল ও নদীর পানি বায়ুদুষন রোধে সহয়তা করবে। সর্বোপরি পরিবেশ অধিদপ্তরের ব্যপক অভিযান প্রয়োজন। অভিযানে যদি কোন কর্তৃপক্ষকেও জড়িমানা করতে হয় সেই অধিকার পরিবেশ অধিদপ্তরের থাকতে হবে। তবেই সার্থক হবে অভিযান, যে যার গরজে পরিবেশ দুষণ রোধে সোচ্চার  হবে।
ক্রাইম ডায়রি// জাতীয়